কিছু বই কিছু কথা ১৯৪। নীলাঞ্জন কুমার
মেটারনিটি লিভ ও ঈশ্বরচন্দ্রের বর্ণপরিচয় । নৃপেন চক্রবর্তী । কোরক । একশো টাকা ।
' সাগরেদদের গল্প শুনতে শুনতে/ তুমি দিব্যি হাত কাটা জগন্নাথের পিঠ চাপড়ে/ অন্ঞ্চল প্রধানের দায়িত্ব তুলে দিচ্ছো ' ( ' তুমি তখন ' ) -এর ভেতর কত সহজ অথচ কত ব্যঙ্গ , কত ক্ষোভ মিশে আছে তা যেন খেলাচ্ছলে লিখে ফেলেছেন বলে মনে হয় কবি নৃপেন চক্রবর্তী , তাঁর 'মেটারনিটি লিভ ও ঈশ্বরচন্দ্রের বর্ণপরিচয় ' কাব্যগ্রন্থে।কবি এ রকমের লেখেন , কারণ তিনি যা দেখেন তাকে গভীরে জারিত না করে একটি শব্দও কাগজে খরচ করতে নারাজ বলে । তাই আরো পাই: ' তারা অনেকেই এল দিব্যি গলায় উত্তরীয় ঝুলিয়ে/ আরও বেশি করে/ কবিতা লিখছেন/ তবে মানুষের জন্য নয়/ রাজার জন্য ' ( ' বুদ্ধিজীবী)'এক্সকেলেটরের ক্রমাগত ওঠানামা দেখতে দেখতে/ গেঁয়ো ছেলেটা বোকার মতো তখনও/ ডুমুর পাতার ফাঁকে চেনা পাখিটাকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে ।' ( শিলনোড়া কিংবা মিক্সি মেশিন ') র মতো কবিতাগুলির ভেতরে ।
কবির নস্টালজিয়া, প্রেম, বাস্তবতা , ব্যঙ্গ, ক্ষোভ মিলিয়ে মিশিয়ে গড়ে তোলা কাব্যগ্রন্থটিকে বড় অনিবার্য বলে মনে হয় । তাঁর নাতিদীর্ঘ কবিতাগুলি দীর্ঘ কবিতার চাইতে আরো বেশি আকর্ষণীয় হলেও সামগ্রিকভাবে কবিতা লেখা বা বলার মুন্সিয়ানা প্রশংসনীয়। যেমন : ' সেতো শুধু কাকতাড়ুয়া হয়ে/ শূন্য মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা/ উচ্চারণহীন গল্পকথা! ' ( কাকতাড়ুয়া), ' চার দেওয়ালের ভেজানো দরজায়/ এখন শুধু তির্যক চোখের চাউনি/ আর রকমারী পারফিউমের গন্ধ ভেসে বেড়ায়! ' ( উঠোন) ' দগ্ধ হতে হতেই খুঁজে পাবে/ প্রতিক্ষেপণের অব্যর্থ তূণীর । ' ( ' দগ্ধ হতে হতে ই যাপনের গল্প- কথা খুঁজে পাওয়া
যায় ')।
মাটি থেকে উঠে আসা তাঁর অগণিত কবিতা আমাদের ভেতরে চমৎকার আনে । তাই অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মতো এই গ্রন্থটি উৎকৃষ্ট হয়ে ওঠে । সাদামাঠা লেখনীর গুণে মননের সন্ধান দেওয়া তার প্রধান গুণ বলে কবিকে হাজারো কবির ভীড়ে মিশিয়ে ফেলতে হয় না । শ্যামল জানা- র অন্যান্য প্রচ্ছদগুলির মতো এই বইটির প্রচ্ছদ, প্রকৃতভাবে কি হতে পারে বুঝিয়ে ছাড়ে । প্রচ্ছদের টোটালিটির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন