কিছু বই কিছু কথা। নীলাঞ্জন কুমার
বিদায় তোমাকে, হে স্থগিত উচ্চারণ । ব্রজ চট্টোপাধ্যায় । কন্ঠস্বর প্রকাশনী । পনেরো টাকা।
' দুরত্বে কেন এই ক্লান্তি, কোলাহল হলেই অস্থির কেন ' কেনই বা উচ্চারণে এই স্তব্ধতা/ স্বপ্নে আলোহীনতাই বা কেন ' (যদি পাও খুঁজে নাও ') এই পংক্তির মতো অলঙ্ঘ হাজারো প্রশ্নের মধ্যে দিনযাপন করেছিলেন প্রয়াত কবি ব্রজ চট্টোপাধ্যায় । এই প্রশ্নের উত্তর তিনি পাননি, তবে পেয়েছিলেন সামান্য হলেও কবিতার সন্ধান । যার জন্যে পাই: ' এই ভূমির দখলে আমার শক্তি/ প্রকৃতভাবে প্রতিষ্ঠা হলেও তুমি দাঁড়াবে কোথায়? ' ( ' ভাবনা ') , ' চোখে ভয়ংকর দৃষ্টি তাকে জন্মের ক্ষণে নিয়ে যায়/ আমি আমার এই অস্তিত্বের জন্য দায়ী? '( ' হঠাৎ গানের মধ্যে এক শব্দহীনতা ') -র ভেতর দিয়ে তাঁর অমোঘ প্রশ্নাবলি পাঠকের কাছে ছুঁড়ে দেন তিনি 'বিদায় তোমাকে, হে স্থগিত উচ্চারণ ' কাব্যগ্রন্থে । ২০০০ সালের কাব্যগ্রন্থটির ভেতরে কখনো সখনো তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি কাব্যিক মগ্নতা , কখনো বা কবিতাহীন সরল গদ্য বিব্রত করে, কিন্তু তাও চাবিকাঠি দিয়ে গেছেন পাঠককে যা দিয়ে অন্তত এই প্রশ্নের ঘর খুলে দেওয়া যায় ।
কবি ব্রজ চট্টোপাধ্যায়ের সৃষ্টি নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে তাঁর বিশ্ব সাহিত্যের উপর নিবন্ধের কথা । যা একটি কবিতা পত্রিকাতে নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে । তারপর অনুবাদ, সব শেষে কবিতা ।
তাঁর কবিতায় প্রধান অভাব রহস্যময়তা , কঠিন সত্য এটিই । তবু তার মধ্যে লক্ষ্যণীয়: ' তবু কেন আজও ভিক্ষা এই/ উদ্ধত অহংকারের কাছে? / মোমের মতো জ্বলতে থাকে স্থবির সময় । ' ( মোমের মতো জ্বলতে থাকে স্থবির সময় ') , ' সে একা একা নিজের আলোয়/ স্নান সেরে ফেরে/ অবিরত ...' ( ' এক নতুন শিল্পকলা ')। কবিকৃত প্রচ্ছদটি দেখে বোঝা যায় কবি তাঁর শখ মিটিয়েছেন ও পাঠকের বিরক্তির কারণ হয়ে উঠতে চেয়েছেন । বিন্দুমাত্র চিত্রশিল্প ও প্রচ্ছদের মাহাত্ম্য না জানা মানুষ প্রচ্ছদ করলে এরকম কুচ্ছিত প্রচ্ছদ হবে, তাতে অবাক হওয়ার বিন্দুমাত্র কারনই নেই ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন