কিছু বই কিছু কথা ২০১। নীলাঞ্জন কুমার
দুই স্রোতের এক মোহনা । পঙ্কজ মন্ডল ও অমলেন্দু বিশ্বাস । নৌকা । আঠারো টাকা ।
দুই সমসাময়িক কবিকে যখন একই বইতে পাওয়া যায় তখন দুই কবির ভেতর একটা তুলনা আপনা থেকেই চলে আসে । তাকে পরিহার করে যদি আলাদা ভাবে বিশ্লেষণ করি তবে তাদের স্বাতন্ত্রতা বেশি করে ফুটে উঠবে বলে মনে করি । যেমন কবি পঙ্কজ মন্ডলের আজ থেকে এগার বছর আগের কাব্য প্রকৃতি সঙ্গে পরিচিতি ঘটাতে গিয়ে দেখি তিনি আজকের জায়গা থেকে অনেকাংশে পিছিয়ে ছিলেন , আজকের কবিতায় তাঁর প্রধান রোগ তৎসম শব্দের আনুগত্য তাঁকে জড়িয়ে ধরলেও তা কিন্তু অচেতন ভাবে হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি এখানে পরিহার করেছেন, যেমন: ' সন্তানও কখনো সখনো পিতা হয়ে যায়/ সিংহটি কখনো রিং মাস্টার হয় না । ' ( ' স্বপ্নকথা ') যা পাই তাঁর ও অমলেন্দু বিশ্বাসের যুগ্ম গ্রন্থ ' দুই স্রোতের এক মোহনা ' (২০০৯ সালে প্রকাশিত) কাব্যগ্রন্থের মধ্যে । পঙ্কজ মন্ডলের বাকি কবিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মনে করি এই সব পংক্তিতে : ' চিকিৎসক নিরুপায় হলে/ রুগীদের মুখগুলি কিভাবে বদলে যায় , জানো?' ( ' আরোগ্য ') ফেটে যাওয়া বেলুনের রঙ পরে থাকো/ ছেঁড়া ঘুম নিয়ে । ' ( ' আকাঙ্ক্ষা '), ' রাত্রি ঘনতর হলে/ সৃষ্টি হয় ভাঙা পাত্রে অলীক আবেগ ।' ( ' অন্যরূপ ')।
পাশাপাশি অমলেন্দু বিশ্বাসের কবিতা অনেক সুসংবদ্ধ । তাঁর কবিতার গভীরতা তন্নিষ্ঠ করে : ' ওই দ্যাখো ভোর চোখে দোর খুলে এখনো একাকী/ আমার আত্মজ আঁকে নতুন মাটির পদাবলী .... ' ( ' নতুন মাটির পদাবলী ')। ' সপ্ত ঘোড়া সূর্যাস্তের লাগাম রয়েছে এই দ্যাখো- / প্রত্যয়প্রবর হাতে ফিরিয়ে দেবেই সূর্যোদয়ে । ' (' শ্রী, রাত্রিজল ') , ' আসলে ভাষার নিচে কবিতা হৃদয়/ মাদুর বিছিয়ে রেখে দু'দন্ড জিরোয় .... ' ( ভাষা, সীমান্ত মানে না ') -র উৎকৃষ্টতা ।
পঙ্কজ মন্ডল ও অমলেন্দু বিশ্বাসের কবিতার ভেতর দিয়ে দুই কবির যে কবিতা চর্চা তাঁদের দুই বিপরীত স্রোতে নিয়ে যায় । কার্যত সেখানে বইটির নামকরণ সুপ্রযুক্ত । হিমদল রায়ের প্রচ্ছদ সেই স্রোত চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন মাত্র ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন