কিছু বই কিছু কথা। নীলাঞ্জন কুমার
এই আকাশ । অসীম চট্টোপাধ্যায় । কবোষ্ণ । পনেরো টাকা ।
' সামনে প্রজ্জ্বলিত কাঠের আগুন/ ভাতের বদলে থালা হল খানখান । ' ( ' উপোসী চাঁদ ') , 'তবু বেঁচে থাকে চিতায় না পোড়া কথা / অনুভবে বাঘ নখ আঁচড়/ আরো কত কী- নিজস্ব আয়নায় ' ( ' বাঘ নখ আঁচড় ') - এর মতো পংক্তির ভেতর থেকে চেতনা ছড়িয়ে গড়ে উঠেছে কবি অসীম চট্টোপাধ্যায়ের কাব্যগ্রন্থ 'এই আকাশ ' ২০০২সালে । আফশোস , সুন্দর শুরু করা এই কবি কিভাবে হঠাৎ করে লেখা বন্ধ করে দিল তা রহস্য । কবি অসীম বুকের ভেতরের ক্ষোভ দুঃখ আনন্দ সব ভাগাভাগি করে তুলে ধরেছেনকাব্যগ্রন্থটিতে । সে কারণে তাঁকে পড়তে ভালো লাগে: ' তুমিতো আকাশ ভেঙে হেঁটে যাও/ আমি দেখি গরীব সকাল/ যে সারাদিন ছেঁড়া চাদর গায়ে/ খুঁড়িয়ে হেঁটে যায় ' (সকাল), ' কে যেন সারাদিন গভীর দুঃখ ভেঙে/ চলে যায় ভোরের সিগন্যাল দেখে । ' ( ' ভোরের সিগন্যাল ') - এর মতো সম্ভাবনাময় পংক্তির কল্যাণে ।
কাব্য সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে কিছু কিছু সময় তাঁর কবিতা বিব্রত করলেও, সামগ্রিক অর্থে উক্ত পংক্তিগুলির কল্যাণে তাঁকে কবি হিসেবে মেনে নিতে হয় । অসীম খুব বেশি না লিখলেও তাঁকে একসময় লিটল ম্যাগাজিনের পাতায় পাওয়া ও পড়ার জন্য তাঁর কবিতার ক্ষেত্রে নাড়িজ্ঞান আছে বলে দুঃখ লাগে তাঁর সফল হতে হতে কবিতা ছেড়ে চলে যাওয়া!
অসীম তাঁর কবিতায় সত্যপথের চিহ্ন রেখে গেছেন, যা পাই: ' আনাচেকানাচে আমাদের ঘরদুয়ারে / দুয়ার যতই শক্তপোক্ত রাখা থাক না কেন/ আঘাত তবু আঘাত ।' ( ' বামনের খেলা ') , ' প্রেমিক দীঘল পুরুষ কুয়াশা ভেঙে হেঁটে যায়/ ভুল করে চিনে নেয় যুবতী শরীর, / শতছিন্ন কাঁথা পেতে শুয়ে থাকে / রাতের ধবল জ্যোৎস্না , ' ( ' ভোরের সিগন্যাল ')-এর মাধ্যমে । প্রয়াত বিশিষ্ট কবি মতি মুখোপাধ্যায়ের এই বইটির ভূমিকায় লেখেন , যা না তুলে ধরলেই নয় : ' তিনি ভাবুন , আরও কবিতা লিখুন, এই দুঃসময়ে কবিতা ছাড়া কেইবা মুক্তি দিতে পারে । ' কল্লোল দত্ত গুপ্তের প্রচ্ছদের বদলে বইটি প্রচ্ছদহীন হলে বেশি আনন্দ পেতাম ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন