সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
২০০.
দেখতে দেখতে দু-শো। সত্যিই দ্যাখার শেষ নেই। এই দ্যাখার মধ্যে আমার নিজের , নিজেদের , পরিবারের যাবতীয় কিংখাপগুলি তথা কিংবদন্তিগুলি ফুটে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু কতটা ফুটল কুসুম তা জানার উপায় নেই।
আমি সবসময় জেনে নিই আমার কাপড়ের পরিমাণ ঠিক কতটা , সেই মতো কোর্ট-এর মাপ বা ঝুল নির্ধারণ করি। আমি লঙ্ কোর্ট পছন্দ করি না । কারণ আমি জানি লঙ্ কোর্ট ব্যবহারের জন্য যতটা কাপড় প্রয়োজন , তা আমার কাছে নেই।
আর আমি এটাও জানি আমার যতটুকু কাপড় আছে তার পুরোটাই সর্বতোভাবে ব্যবহার করা। সঠিকভাবে ব্যবহার করি।
আরোও একটা কথা আমার নটেগাছটি কখনো ছাগলে খেয়ে যাবার সুযোগ পায় না , সেকারণে আমার কথাও ফুরিয়ে যায় না। তাছাড়া আমার বয়সের গাছপাথর নেই । ছিয়াত্তর প্লাস। তার অর্থ :
৭৬ × ১২ টি মাস।
৭৬ × ১২ × ২৪ টি ঘণ্টা
৭৬ × ১২ × ২৪ × ৬০ মিনিট
৭৬ × ১২ × ২৪ × ৬০ × ৬০ সেকেন্ড
এই হিসেব করতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু সেই ক্যালকুলেশন করতে যাবো কেন।
শৈশবে জেনেছিলাম ঘড়ি এবং ঢেউ কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করে থাকে। আর সেকারণে আমি যদি সময়-কে তার অক্ষরেখায় বিচরণ করতে দিই , তাহলে আমিও আমার ইচ্ছে মতো আমার জন্য নির্ধারিত কক্ষপথে বিচরণ করতে পারি।
বিচরণ শব্দটির গায়ে যদি ঐতিহ্য লাগাতে হয় তখন ব্যবহার করতে হবে ভ্রমণ !
ভ্রমি বিস্ময়ে নয় , ভ্রমি আগ্রহে। এই আগ্রহ থেকে যদি বিস্ময় উদ্ভাসিত হয় , হতে পারে ।
ম্যাক্সিম গোর্কি এই ভ্রমণ বা বিচরণ-ক্ষেত্রকে বলেছেন ' পৃথিবীর পাঠশালা '। অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ' ঈশ্বরের বাগানে '। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়-এর ভাষায় ' ঈশ্বরীতলার রূপকথা '।
এই ভ্রমণ-কে কেউ বললেন : পাঠশালা ।
কেউ বললেন : বাগান ।
কেউ বা সরাসরি রূপকথা-র মর্যাদা দিলেন।
গোর্কি তাঁর ভ্রমণসূচিকে সীমাবদ্ধ রাখলেন পৃথিবীতে। অতীনদা এবং শ্যামলদা আমন্ত্রণ করলেন ঈশ্বরবাবু -কে। একজন ঘুরলেন বাগানে। অন্যজন রূপকথায়।
এসবই বলার কথা , চিহ্নিত করার কথা । সেকারণেই বলা। সেকারণেই চিহ্নিতকরণ ।
একজন লেখকের কাজ তাঁর পরিভ্রমণকে চেনানো।তাঁর পদচিহ্নগুলি পাঠকের সামনে উপস্থিত করা।
' পদচিহ্ন ' শব্দটিতে আপত্তি থাকলে আপনার পছন্দ মতো যে কোনো শব্দ বসিয়ে নিতে পারেন। আমি 'পদচিহ্ন ' শব্দটির ঐতিহ্যটিকে মর্যাদা দিলাম মাত্র ।
এখন এই লেখাটি আত্মজীবনী-র একটা অংশ বা পর্ব মাত্র। তবে এই পর্বটি খুব ছোটো নয়। কারণ কবিতাপাক্ষিক পর্বটির সময়কাল বেশ দীর্ঘ। এর কোনো ' কোমা ' পর্ব নেই। একে প্রভু যিশু-র মতো মৃত্যু-র পর পুনরায় বেঁচে উঠতে হয়নি দৈবাদেশে।
আর এই পর্বের কয়েকটা অলিখিত নিয়ম ছিল। সেই নিয়ম আমি যেমন পালন করতাম অক্ষরে অক্ষরে। আমাদের কবিতাপাক্ষিক পরিবারের সকলেই সেই নিয়ম পালন করতে হত। আর যারা সেই নিয়ম পালন করতে পারতেন না তারা নিজ ইচ্ছায় সরে যেত। অথবা সরিয়ে দেওয়া হত।
আমি মনে করি এসব ক্ষেত্রে ' গণতন্ত্র ' একটি মূল্যহীন শব্দ। ডিক্টেটরশিপ অফ্ দ্য প্রলাতারিয়েত বা একনায়কতন্ত্র-ই প্রতিষ্ঠান ঠিকিয়ে রাখার একমাত্র পন্থা। এখানে কোনো মধ্যপথ নেই। তাবলে গণতন্ত্র শব্দটি অবহেলিত থাকবে ? কখনোই না। গণতন্ত্র-কে সাজিয়ে-গুছিয়ে হাজির করা হবে। একক সিদ্ধান্তটিকে সকলের সিদ্ধান্তে দ্যাখানো কাজ সফলভাবে করানোটাই নেতার প্রধান কাজ।
গণতন্ত্র-কে মাথার উপরে রাখতে হবে সুসজ্জিতভাবে।লক্ষ রাখতে হবে গণতন্ত্র নামক শিরোভূষণটিকে মাথার উপর থেকে মাথার ভেতরে যেন ঢুকতে দেওয়া না হয়। মাথার ভেতরে ঢুকে গেলেই বিপদ। নাটকের দলগুলির মতো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।
গণতন্ত্র সুরক্ষিত থাকুক ।
আসুন সমবেতভাবে গণতন্ত্রের জয়গান করি।
খুব ভালো লাগল।আজ থেকে নিয়মিত পড়ব।এতদিন পড়িনি বলে আফশোষ হচ্ছে।
উত্তরমুছুন