কিছু বই কিছু কথা২০৬ । নীলাঞ্জন কুমার
দুই মেরুর এক আকাশ । পঙ্কজ মন্ডল ও রনজিৎ হালদার । কুড়ি টাকা ।
এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত যৌথ কাব্যগ্রন্থের একটা চল ছিল বাংলা সাহিত্যে । বর্তমানে তা নিশ্চিহ্ন । কারণ কবিদের ভেতরে ইনডিভিজুয়ালিটির আধিক্য । একটু কম বয়সে বহু যৌথ কাব্যগ্রন্থ পড়েছিলাম আর তাতে সমসাময়িক একাধিক কবির কবিতার তুলনামূলক চিন্তাভাবনা করা যেত , যেমন ২০০৯সালে দুই কবি পঙ্কজ মন্ডল ও রণজিৎ হালদার -এর যৌথ কাব্যগ্রন্থ
' দুই মেরুর এক আকাশ ' পুণঃপাঠ করতে গিয়ে
করছি ।
এই ক্ষীণতনু কাব্যপুস্তিকাটিতে দুই কবির বিপরীতমুখী চিন্তার আভাস জাগায় । কবি পঙ্কজ মন্ডলের কবিতার দিকটির নাম ' পাথর কাঁপানো ডাক ' । শিরোনাম পড়ে মনে হতেই পারে, বেশ কিছু উচ্চগ্রামের কবিতা এখানে স্থান পেয়েছে । কিন্তু তা কখনোই নয়, স্বভাব নম্র এই কবি কি কোনদিন উচ্চ গ্রামের কিছু লিখতে পারেন? তাই তাঁর স্বভাবসুলভ পংক্তি পাই: ' অনাথের হাতে যে ছেঁড়া আঁচল পড়ে থাকে মৃত/ তার ফাঁসে মমি বিদ্ধ, ছাই ওড়ে দগ্ধ দেবতার । ( ' ভূমিপুত্র ') , 'পাখির মতো তীব্র মায়ায় ভরে থাকুক চিত্র গীতি / জলের বৃত্তে অপেক্ষা থাক জেলের জালের শেষের ছবি । '(জলের লিখন ) কত চিত্রময়তা ঘেরা এই পংক্তি মনের মধ্যে রিনরিন করে । কবির বর্তমান কবিতার সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে দেখি তাঁর বর্তমানের কবিতার গঠন প্রাথমিকভাবে এখান থেকে শুরু হচ্ছে । তবে এখন তা পরিবর্তন করার সময় এসে
গিয়েছে । বড় বিষয় এই তিনি পংক্তির ভেতর দিয়ে বাধ্য করেন তাঁর কবিতায় তন্নিষ্ঠ হতে গভীর মায়াজাল সৃষ্টির মাধ্যমে ।
কবি রণজিৎ হালদারের কবিতার দিকটির নাম 'জন্ম ও মৃত্যুর উর্দ্ধে ', যেখানে পঙ্কজের কবিতার সঙ্গে তুলনামূলক চিন্তা করলে তাঁকে বেশ খানিকটা ম্লান বলতেই হয় শব্দে ও ব্যন্ঞ্জনায় । ' ...তোমার একাকীত্বের' আকাশেআমি/ ক্রমশ দেবতা হতে হতে ভীষণ সুদূর হয়ে যাবো। ' ( আমার স্বর্গ) ,'আগামীকাল/ খবরের কাগজে হয়তোবা দেখতে পাবো/ পেতলের ঘুঘু
প্রসব করেছে সোনার ডিম । ' ( পেতলের ঘুঘু ও সোনার ডিম ' ) , ' এটা আমার কবিতা নয়/ এ আমার অন্ধকারে সূর্যমুক্তির লালবাজারের চাবি '( ' লালবাজারের চাবি ') কে চেষ্টা বলবো তার বেশি নয় । ভালো লাগলো অঙ্কনহীন প্রচ্ছদ । তবে জমির কালার হাল্কা হলে আরো জমতো ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন