সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
১৯৬.
আমাদের এই সমবায়ী কবিতা লেখায় কোনো পূর্ব নির্ধারিত শর্ত ছিল না। কোনো ম্যানিফেস্টো ছিল না। লেখার আনন্দে লেখা। লেখাটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই মূল টার্গেট ছিল।
প্রথম অধিবেশন থেকেই কিছুটা লেখার পর কবিতাগুলি পাঠ করা হয়েছে। সকলে সমবেতভাবে শুনেছি। আসলে কবিতাগুলির মধ্যে নিজেদের ধরে রাখার জন্যই এই শোনার আয়োজন। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম কবিতাগুলির নিজস্ব সামর্থ্য ও সৌন্দর্য। পড়ার ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা ছিল নাসেরের। নাসের ছাড়াও কবিতা পড়েছিল অমিতাভ ইন্দ্রাণী শুভাশিস রুদ্র গৌরাঙ্গ রিমি পিনাকীরঞ্জন এবং আমিও। ফোটৌ তুলেছিল অমিতাভ মৈত্র এবং বরুণ সরকার।
তৃতীয় অধিবেশনের কবিতাগুলি লেখা হয়েছিল আমাদের কাদাকুলির বাড়িতে। একতলার বড়োঘরে।
রাত প্রায় একটায় শোওয়র আয়োজন।
যে ঘরে লেখা চলছিল সেখানে মেঝেতে মাদুর পেতে নাসের সৌমিত্র এবং আমি। খাটে অনুপম বরুণ আর রুদ্র। পাশের ঘরে খাটে ইন্দ্রাণী , মাদুরে যূথিকা। দোতলা একটা ঘরে মা আর মেজবোন। আর একটা ঘরে অমিতাভ আর শুভাশিস।
পরদিন রবিবার।ভোর ৫টায় রুদ্র-র ডাকে উঠে পড়লাম। ইন্দ্রাণীর পায়ে সমস্যা। ওকে ডাকা হল না।বাকি সকলে জঙ্গলের পথে।
নাসের কী লিখেছিল পড়ুন :
' ভোরে ভেজা গাছপালা ঘাস ও মাটি।সর্বত্র টলটল করছে শিশিরজল। জঙ্গলে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পল বোঝা গেল এসময় এই নির্জনে অনায়াসে প্রাকৃতিক কার্য সমাধা করা যায় এবং প্রকৃতির সদিচ্ছায় প্রতিটি গাছে জলসিক্ত টয়লেট-পত্র বিদ্যমান।'
[15/11, 8:45 pm] Kobi Prabhat Chowdhury: ১৯৫ ॥ শেষাংশ
জঙ্গলবিজয় করে ফিরে এসেছিলাম ৭টা নাগাদ। মুড়ি সহযোগে চা খাওয়ার পর নাসের চলে গেল বাস ধরতে। এগিয়ে দিতে গেল রুদ্র শুভাশিস গৌরাঙ্গ সৌমিত্র অনুপম। নাসের বাসে উঠে পড়ার পর সকলেই ফিরে এসেছিল কাদাকুলি।ইন্দ্রাণীও স্নান করে রেডি। যাওয়া হল মাদল। ৮টায় শুরু হল চতুর্থ অধিবেশন। টার্গেট ছিল ১০০টি কবিতা লেখা। বাকি ছিল আরো ২৫ টি কবিতা। সেই কবিতাগুলি লেখা হয়ে গিয়েছিল ১২টার মধ্যে।
কীভাবে সমবায়ী কবিতাগুলি লিখেছিলাম তার কিছু তথ্য পরিবেশন করছি।
প্রথম দিকে , শুরুর সময় এক একজন দু-তিন লাইন লেখার পর অন্যজন পরের দু-তিন লাইন যোগ করেছিল। তারপর অন্যজন। একটা কবিতাতে প্রায় তিন থেকে চারজনের কলম ব্যবহৃত হয়েছিল। প্রথম কবিতাটি যেমন শুরু করেছিলাম , তেমনই দ্বিতীয় কবিতাটি শুরু করেছিল দ্বিতীয় কবিতাটি।
পরের দিকে ঠিক হল প্রত্যেক এক লাইন লেখে থেমে যাবে । পরের লাইনটা লিখবে অন্য কেউ। তার পরের লাইনটি অন্য কেউ। এভাবে একটা কবিতাতে ৮- ১০ জনের ইনভল্টমেন্ট ছিল এটাও বলা যায়। আর একদম শেষের দিকে একটি শব্দ যুক্ত করেই থেমে গেছে একজন , পরের শব্দ অন্যজন। এই শেষ পর্বের কবিতাগুলিতে সকলেই তাদের শব্দ রাখতে সমর্থ হয়েছিল।
একটা কথা খুব বড়ো গলা করে বলতে পারি , কবিতালেখার ইতিহাসে সমগ্র পৃথিবীতে এই নজির একটাও দেখাতে পারবেন না কেউ। আমি যদি মাথা নিচু করার কৌশলটা রপ্ত করতে পারতাম তাহলে এতদিনে আমার মূর্তি বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যেত।
আমাদের কলকাতায় ফিরে আসার বিবরণ খুব একটা জরুরি নয়।
বরং অনুরোধ করব যাঁরা এখনো মাদলে লেখা কবিতা বইটি পড়েননি , তাঁরা অনুগ্রহ করে পড়বেন। পড়লে এই মহান কীর্তির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন । একজন পাঠক হিসেবে আপনিও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে যাবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন