নস্টালজিয়া ২৪
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
এই সময়টা সিজন্ চেঞ্জ- এর। বাংলায় ছটি ঋতুর সৌন্দর্য আমরা উপভোগ করলেও শীতের স্থায়িত্ব খুব কম এখানে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশ আমাদের। এই শরৎ আর শীতের মাঝে হেমন্তে বরাবরই আমার জ্বর, সর্দি কাশি হতো ছোটবেলায়। অনিয়ম করতাম উপযুক্ত পোশাক- আশাকের। গরম জামা ঠিক মত পরতাম না বলে ঠান্ডা লেগে যেত আমার এই সময়। মুর্শিদাবাদে খুব ঠান্ডা পড়ে যেত কালীপুজোর সময়ে। আমাদের বাড়িতে কালীপুজো হতো ভাই হবার পরে। মা কালীর কাছে মা মানত করেছিল দুটি কন্যার পরে একটি পুত্র জন্মালে "মা"কে ঘরে আনবে। কেন যে আমার কু- সংস্কারমুক্ত ধর্মপ্রাণ মা এমন মানত করেছিল জানি না। হয়তো ভেবেছিল ভবিষ্যতে মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে একাকীত্বের কথা চিন্তা করে। পরে বাবার মৃত্যুর পর যখন সব কিছু থেকেও ক্রমশ একা হয়ে গেছিল সাংসারিক তুচ্ছতায়, অনেক আফসোস করত এই নিয়ে পুত্র সন্তান নিয়ে। যাই হোক আমার বাবা মায়ের এই কালী পুজোর মানত- এ মোটেই খুশি হয় নি । খুব নিয়ম করে ধূমধামের সঙ্গে আমাদের বাড়িতে পরপর ন'বছর মা কালীর পুজো হয়েছিল। আমার ছোটবেলায় খুব আনন্দ হতো এই কালীপুজোর সময়। আমাদের পাড়ার সবাইকে নেমন্তন্ন করা হতো। সারারাত জেগে খুব আনন্দ হতো তখন। কিন্তু তারপরই আমার জ্বর হতো অনিয়ম হতো বলে। আমাদের বাড়ির কাছেই চক কালীবাড়ি। মা খুব জাগ্রত সেখানে। ভর দুপুরে বা অমাবস্যার রাতে ঐ মন্দিরের পাশ দিয়ে আসতে আমাদের গা ছমছম করতো। এবছরটা কোভিড এর কারণে খুব খারাপ যাচ্ছিল। আরও খারাপ হয়ে গেল আমি যথারীতি জ্বরে পড়লাম। চারিদিকে পরিস্থিতি খারাপ, আমার জ্বরের লক্ষণটাও ভালো না, স্বাদ গন্ধ রহিত হয়ে বাধ্য হয়ে কোভিড পরীক্ষা করলাম। জানলাম আমিও পজিটিভ এখন। আপাতত ঘরেই বন্দি এখন। এরকম জ্বর আগেও তো হতো কিন্তু এবার কিছু জিনিস অন্যবারের মতো না। হোম আইশোলেশন, ড্রপলেট, মাস্ক, স্যানিটাইজার, অক্সিমিটার কোভিডের কচকচি। শ্বাসকষ্ট নেই তাই এ যাত্রা বেঁচে যাবো নিশ্চয়ই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন