কিছু বই কিছু কথা - ১৮৯ । নীলাঞ্জন কুমার
একা ধুলোপথে । সন্তোষ মুখোপাধ্যায় । নবজাতক প্রকাশনী । পঁচিশ টাকা ।
সময়ঘড়ির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা জীবনের বাইরেও যে জীবন আছে, তাকে খুঁজে ফেরার কারণে কবিরা তাঁদের কবিতা পাঠকের কাছে বিস্ময় গড়ে তোলেন। তা পারেন বলেই কবি সন্তোষ মুখোপাধ্যায় সব অসম্ভব সহজে লিখে ফেলতে পারেন সহজে । যেমন, 'ধুলোপথে বিমর্ষ প্রহরে/ এ সময় কোথায় ফেরাবে? / অসংখ্য বৃক্ষবীজে, শিকড়ে, কুসুমে/ এভাবেই থেকে যেতে চাই দীর্ঘদিন । ' এর মতো পংক্তি তাই পেয়ে যাই তাঁর ' একা ধুলোপথে ' কাব্যগ্রন্থের ভেতর । কবি আরো লেখেন: ' বসে থাকি, লুকিয়ে ঘুমাই/ একদিন অন্তত তবে অন্যভাবে অন্য ইচ্ছা করি । ' ( ' এসো হাত ধরি ')
' শোকার্ত স্বপ্নেরা অবিরাম ছায়া হয়ে পিছু পিছু ঘোরে/ অল্প চাঁদের আয়ু সেও এসে অহংকারে পথ আটকায় '
( ' প্রস্তুতি ') প্রিয় হয়ে যাওয়া পংক্তি । যার ভেতরে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে হয় ।
কবি সেই কবিতা লেখেন যার ভেতর গড়ে ওঠে সরলতা । যা শান্ত হাওয়ার পরশ ছড়িয়ে দিয়ে যায় । তাঁর কবিতার ভেতরে স্বচ্ছ শব্দগুলো ঢেউয়ের পর ঢেউ হয়ে রক্তে আছড়ে পড়ে বলে মগ্ন হতে অসুবিধে হয় না । সে কারণে দেখা, শোনা, ভাবার ভেতরে এক সুসামন্ঞ্জস্য গড়ে তুলে তিনি লাইনের পর লাইন সাজান । যা প্রকৃত পাঠককে খুশি করতে পারে । সে কারণে: ' ঝোলানো কুয়াশাগুলি বক্সীগন্ঞ্জে নদীপাড়ে ভীরু পায়ে/ কখনো দাঁড়ায় ' ( ' তাঁতঘরে গান ') বাস্তবের ভেতর অসামান্য সৌন্দর্যকে তিনি অক্লেশে ঢুকিয়ে স্মরণীয় উচ্চারণে মুহূর্ত বদলে দেন ।
' মানুষেরা সুখী হোক, মিথ্যেগুলো ডুবে যাক পৃথিবীর তিনভাগ জলে ' ( ' সব মানুষ সুখে থাক ') আমরা সবাই চাই, কিন্তু এ কবির মতো বলা হয় না ।
' একা ধুলোপথে ' বারবার পড়া ও জাগিয়ে তোলার কাব্যগ্রন্থ বলতে অত্যুক্তি হয় না । মুনিকেশ শীলের সাদাসিধে প্রচ্ছদ বইটির মেজাজের সঙ্গে মিলেমিশে যায় ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন