সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
১৬৮.
মৃত্যুঞ্জয় সেন আমাদের দশকের কবি এবং গদ্যকার।ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের বিশাল বাড়িটিতে একসময় যাতায়াত ছিল। সূত্র : স্নেহাকর ভট্টাচার্য-র সঙ্গে দেখা- সাক্ষাৎ। সেটা ছিল কবিপত্র-কাল। আবার এই কবিতাপাক্ষিক পর্বে মৃত্যুঞ্জয় সেন। কবিতাপাক্ষিকের প্রস্তুতিপর্বে।
আমরা প্রথম যেবার বইমেলা দৈনিক বের করেছিলাম সেবার মৃত্যুঞ্জয়ের সূর্যতোরণ-এ দৈনিকের পেজ মেকাপ করতে গিয়েছিলাম।
আমাদের কবিতাপাক্ষিক লেখাটি মৃত্যুঞ্জয় সেন শেষ করেছিলেন কীভাবে সেটা পড়ে নিন :
' এই কাগজের সঙ্গে যাঁরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত , তাঁদের প্রতি , তাঁদের গৌরবকাহিনির প্রতি থাকল আমার চিরদিনের মুগ্ধতা '।
আমরাও মুগ্ধ মৃত্যুঞ্জয় , আপনিও আমাদের পরিবারের একজন ছিলেন। এখনো আছেন ।
কালীকৃষ্ণ গুহ তখন, অর্থাৎ ২০০৩ - এ লিখেছিল : প্রভাতের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের বয়স প্রায় চল্লিশ বছর ---
একদম। হ্যাঁ , লেখালেখির শুরুতে । আমাদের যখন সাম্প্রতিক , কালীকৃষ্ণদের তখন ক্রান্তদর্শী , সুনীথ মজুমদারদের তখন প্রতিবিম্ব , মৃণাল বসুচৌধুরীদের তখন শ্রুতি।
পত্রিকা ভিন্ন , লেখার জগৎ ভিন্ন ; তবু বন্ধুত্ব ছিল অভিন্ন , অটুট।
আজ এখন ২০২০ ।
এখন বন্ধুত্বের অঙ্ক করা যাক।
২০২০ --- ২০০৩ = ১৭
আর ৪০ + ১৭ = ৫৭
এই ৫৭ বছরের বন্ধুত্ব আমাদের। এখনো অটুট। আমার প্রথম জীবনের অনেকের কাছেই আমি ভিন্ন গ্রহের মানুষ। আমি অচ্ছুত ।কিন্তু একমাত্র কালীকৃষ্ণ এখন আমাকে অস্বীকার করে না। আমার বন্ধুত্বকে মনে রাখে। আমি কৃতজ্ঞ।
আমি কালীকৃষ্ণ গুহ উবাচ বলে কিছু আপনাদের পড়াতে চাইছি :
' বলা বাহুল্য , লেখালেখির মূল্যবোধের দিক থেকে আমি একজন পুরোনো লোক।প্রায় জরাগ্রস্ত। প্রভাতের সঙ্গে আমার ধ্যানধারণার বিশেষ কোনো মিল নেই। তবু প্রভাত আমাকে তার সঙ্গে রাখলো।আমাকে কবিতাপাক্ষিকে লিখে যেতে বললো। '
' প্রভাত বললো সে আমার নির্বাচিত কবিতা বের করতে চায়। '।
" আমার 'নির্বাচিত কবিতা ' প্রকাশিত হল , '
এসব কালীকৃষ্ণ-র কথা। এবার আমার একটি সাফল্য-র কথা শুনিয়ে রাখি :
সিউড়িতে কালীকৃষ্ণ কেন্দ্রিক একটি অনুষ্ঠান ছিল। আমি আমন্ত্রিত ছিলাম। সময় মতো পৌঁছে গিয়েছিলাম সিউড়ি। ছিলাম ইরিগেশন বাংলোয় যুক্ত কমিটির কমরেডদের ব্যবস্থাপনায়। পরদিন অনুষ্ঠানে গেলাম। হলে বসার জায়গা পেয়েই আমি ধন্য হয়েছিলাম। কেউই আমাকে মঞ্চে কিছু বলার জন্য আমন্ত্রণ করেনি।এমনকী বন্ধুবর কালীকৃষ্ণ গুহও নির্বাক ছিল। এই সাফল্য আমাকে গর্বিত করেছিল ।তারপরও কিন্তু কবিতাপাক্ষিকের দরজা কালীকৃষ্ণ-র জন্য সদাসর্বদা উন্মুক্ত ছিল।
কালীকৃষ্ণ আরো যা বলেছিল তার কয়েক লাইন :
' কবিতাপাক্ষিক দশ বছর ধরে নিয়মিত নিরবচ্ছিন্নভাবে কীভাবে প্রকাশিত হতে পারল ভাবতে অবাক হতে হয়। পত্রিকার পাশাপাশি অগণিত বই , কবিসম্মেশন , তর্কবিতর্ক। প্রভাতের জীবনে কোনো বিশ্রামের দরকার নেই ? নাকি এই বিপুল কর্মকাণ্ডের মধ্যেই তার বিশ্রামের একটা পাটাতন রাখা আছে ? '
ঠিক তা-ই কালীকৃষ্ণ। আমি আমার বরাদ্দ কাজের মধ্যেই একটা বিশ্রামের ' ময়ূর সিংহাসন ' পেতে রাখি। পাটাতন বড়ো ঠুনকো ! আমি তো মধ্যস্বত্বভোগী জমিদারের বংশধর।আমাকে পাঠাতন মানায় না। আমার চাই ' ময়ূর সিংহাসন ' !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন