সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
১৮০.
আমাদের কবিতাপাক্ষিক শীর্ষক সংখ্যায় শেষ লেখাটি ছিল নাসের হোসেনের। আর প্রথমটি ছিল আমার।
আমি যা বলার সবটাই তো বলছি , পরিবারের অন্য সকলের লেখার বা বলার মধ্য দিয়ে। আর নাসের তো সে সুযোগ পাচ্ছে না । এখন আমি নাসের কী লিখেছিল তা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি এসব বলাবলি সবই কিন্তু প্রথম দশ বছরের কথা । বা দশ বছরের প্রেক্ষিত-কথা।
নাসের হোসেন উবাচ :
' উৎসবের অনেকগুলো রঙিন বেলুন উঠে যাচ্ছে আকাশে , তাদের প্রত্যেকটির গায়ে লেখা রয়েছে কবিতাপাক্ষিক ১০ বছর । অজস্র রঙিন পতাকায় ছেয়ে যাচ্ছে চারপাশ । পাখি ও মানুষের গান একাকার হয়ে যাচ্ছে। '
এরপর নাসের লিপিবদ্ধ করেছিল কবিতাপাক্ষিকে প্রবেশ-কথা। এবং কবিতাপাক্ষিকের কিছু কর্মকাণ্ড।
ওখান থেকেই আমি কয়েকটি অংশ টুকরো- টুকরোভাবে তুলে ধরছি।
' এরপর প্রভাতদা আমাকে প্রুফ দেখার আনন্দটা পাইয়ে দিলেন।তার আগে প্রুফ দেখা আমার কাছে অত্যন্ত কষ্টকর মনে হত। পরে হাজার হাজার পাতা প্রুফ দেখতে হয়েছে , এখন ভাবলে অবাক লাগে '।
' কবিতাপাক্ষিক-এর ৪১ সংখ্যায় কবিতা সংবাদে প্রভাতদা ঘোষণা করলেন : পরবর্তী সংখ্যা থেকে কবিতা সংবাদ লিখবেন অর্জুন মিশ্র কলম-নামের আড়ালে এই সময়ের একজন বিশিষ্ট তরুণ কবি। প্রভাতদা চেয়েছিলেন আমি কবিতা সংবাদ লেখাটা নাসের হোসেন নামেই লিখি ।কিন্তু আমি চাইছিলাম অর্জুন মিশ্র নাম নিয়ে ধারাবাহিক কলাম লিখতে। অর্জুন মিশ্র নামটি তারও কয়েক বছর আগে আমাকে দিয়েছিলেনThe Statesnan - এর চিত্রকর অলোক ভট্টাচার্য ' ।
' ১০ বছর ধরে চারটি ক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব সহকারে কাজ করেছি। চারটি ক্ষেত্র হল ----বাড়ি, অফিস , লেখালেখি/ শিল্পসাধনা এবং কবিতাপাক্ষিক-এর কাজ। প্রভাতদা আর আমার অফিস পাশাপাশি হওয়ায় কবিতাপাক্ষিক সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রয়োজন-মতো যে কোনো সময়ে সক্রিয় থেকেছি। তাছাড়া প্রায়-প্রতিদিন রাত সাড়ে আটটা- নটা নাগাদ প্রভাতদার বাড়িতে।'
এই ধারাবাহিকতাই কবিতাপাক্ষিক-কে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মূল রহস্য বা শক্তি। অন্য যে কোনো অবাণিজ্যিক পত্রিকায় যদি আর একজন নাসের হোসেন থাকত , তারাও অবলীলায় কবিতাপাক্ষিক- এর মতো ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারত। এই কথার সূত্র ধরে আরো গুটিকয় কথা বলে রাখতে চাইছি। যেসব কথা লিখিত না থাকলে বহু ভ্রন্তি দূর হবে না ।
যেমন আমার চরিত্রের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল মানুষকে অপমান করা। সত্য সত্যই তিনি এমন কাজ করেছেন সেটাকে কিছুতেই সমর্থন করা যায় না। তাঁকে আক্রমণ করতেই হবে। আর আমি অধিকাংশ মানুষকেই মৃত-মানুষ মনে করি। কাজেই রণক্ষেত্রে মৃত সৈনিকদের মুখের কোনো সংলাপই আমার কাছে জরুরি নয়।
আর নাসের ঠিক আমার উলটোটা। একশো বছর চেষ্টা করেও যার পক্ষে কবিতার একটা লাইনও লেখার সম্ভাবনা নেই , নাসের জেনেবুঝে তাদের গুরুত্ব দিয়ে এসেছে চিরটা কাল ।
আর একটা কথা নাসের হোসেন-এর একজনও শত্রু নেই। সকলেই নাসেরের আত্মজন।
এই ঘটনাগুলিই কবিতাপাক্ষিক পরিবারের রক্ষা- কবজের কাজ করেছে।
নাসের জানে কোনটা কবিতা আর কোনটা কবিতা নয়। কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলেনি তোমার এটি কিছুই হয়নি।
কিন্তু নাসেরের অসুস্থতার সময় বুঝে গেলাম কে আসল বন্ধু !
আরো একটা গোপনকথা ফাঁস করে দিচ্ছি।তা হল :
অনেকের ধারণা আমি একজন বানান-বিশারদ। এই ধারণাটি ভুল। আমি বানান-সচেতন । কারণ বানানের ব্যাপারে সদাসর্বদা আমাকে সাহায্য করে নাসের হোসেন এবং যূথিকা চৌধুরী। আর আমি যে বানানে বিশাল দক্ষ সেটা প্রমাণ করার জন্য লিখে ফেললাম --- বানানের হ্যান্ডবুক।
আমার এই সমস্ত দুর্বলতাগুলি সযত্নে আড়াল করে রেখেছে নাসের হোসেন।
আরো অনেক কথা লিখেছি ' আমাদের নাসের হোসেন ' গ্রন্থটিতে। এই বইটি একটি অবশ্যপাঠ্য বই।
শেষ কথাটি হল এই পৃথিবী আরো কয়েকজন নাসের হোসেন থাকলে , পৃথিবীটা অনেক বেশি সুন্দর হত। কারণ সুন্দরের শ্রেষ্ঠতম পূজারি-র নাম নাসের হোসেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন