সৌমিত্র রায় -এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
১৭৯.
কবিদের নির্দিষ্ট কোনো জীবিকা আছে বলে আমার জানা নেই। তবে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন কবিতার সঙ্গে থাকেন এটা আগে যতটা প্রকট ছিল , এখন ততটা নেই। যেমন দেখুন তিনের দশকের বিশিষ্ট কবিরা অনেকেই অধ্যাপক ছিলেন। এবং ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন।
এখন কবিতা লেখার জন্য অধ্যাপনা করাটা বাধ্যতামূলক নয়। যে কেউই কবিতা লিখতে পারেন।তবে তাঁকে কবিতার মানুষ হতে হবে। এই কবিতার মানুষ হবার প্রাথমিক শর্ত হল : কবিতার সঙ্গে থাকা । বা কবিসঙ্গে থাকা।
এভাবে শুরু করার উদ্দেশ্য হল এখন আমি যাঁর কথা বা যাঁর লেখা কথা তুলে আনব তিনি অধ্যাপক নন। তিনি ডেন্টাল সার্জন। বা দন্ত- বিশারদ। তিনি ড : প্রদীপ ঘোষ ।
আমি হেলথে কাজ করতাম। করণিকের কাজ। এক সময় দাঁতের চিকিৎসকদের এস্টাবলিস্টমেন্ট -এর প্রাথমিক কাজকর্ম দেখিশুনো করতাম। সেই সূত্রেই প্রদীপ ঘোষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ এবং ঘনিষ্টতা। প্রদীপের উদ্যোগে কবিতাপাক্ষিকের দশ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে দক্ষিণেশ্বরে একটি উৎসব হয়েছিল। সেই উৎসব থেকেই পেয়েছিলাম উৎপল ফকির এবং সহজ মা-কে। যা পেয়ে আমি পূর্ণ হয়েছিলাম। প্রদীপ আমার ৬০ তম জন্মদিন তথা কবিতাচর্চাকেন্দ্র-র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বাঁকুড়ায় কাদাকুলিতে গিয়েছিল।
এই প্রদীপ ঘোষ-এর কবিতাপাক্ষিক কেমন একবার দেখে নেওয়া যাক :
' প্রভাত চৌধুরীর হৃদয় খামারের ফসল কবিতাপাক্ষিক বাংলার কবি, কবিতাপ্রমিক ও প্রেমিকেরা যত্নে ঘরে তুলে রাখবেন আশা নিয়ে শেষ করছি।
নুরুল আমিন বিশ্বাস -এরও আমাদের কবিতাপাক্ষিক শীর্ষক একটি লেখা ছিল৷
নুরুলের একটা মাত্র স্বীকারোক্তি আমার এই ধারাবাহিকে রাখছি অতীতকে স্বীকৃতি দেবার জন্য।নুরুল লিখেছিল :
' আর এই ভাবনার জন্য প্রত্যেক সদস্যকে আমি স্যালুট করি। কবিতা ছেড়ে দিলেও আজীবন আমি তোমার। তোমারই রয়ে গেলুম ।'
না নুরুল সততার জন্য আমি অনেক কিছুই ত্যাগ করতে পারি। বন্ধুত্বও মুছে দিতে পারি।
গৌরশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় সত্তরের প্রতিষ্ঠিত কবি।কবিতাপাক্ষিকের কবি এবং আত্মজন। আমার পূর্বাহ্ণের বন্ধু , উত্তরপর্বেরও। এই দীর্ঘপথ পরিক্রমা থেকে বলা যায় , গৌরশংকরের মতো হৃদয়বান বন্ধু পাওয়াটা আমার ভাগ্য।
গৌরশংকর লিখেছিল :
' পরিকল্পনার আর একটা জুতসই শব্দ হতে পারে রূপায়ণ , উদ্ভাবন , নকশা ইত্যাদি তবে ৩৬ডি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের একতলার ফালি গলি পেরিয়ে ঘরে ঢুকে যেদিন দেখলাম কবিতা আর রান্নার ব্যঞ্জনগন্ধ একসঙ্গে মিলেমিশ আছে শান্তনু রজতেন্দ্র এবং প্রভাত চৌধুরীকে ঘিরে এবং রাত করে নাসের-এর প্রবেশ ---- তখন মনে মনে এই পরিবারের একজন হতে বাধা আছে বলে মনে হল না।'
গৌরশংকর আরো বলেছিল :
' আসলে অচলায়তন উপেক্ষা করার কাজটি কবিরাই করতে পারেন আর সেই উপেক্ষা তৈরি হয় গঠনকর্মে উদ্দীপনা সঞ্চয়ের সৃষ্টি করা, যার জন্যে এই
অচলায়তনকে সরিয়ে, সব ইলিউশন দূর করে নটে গাছটি মুড়োবে না। সে কারণেই তৈরি পোস্টমডার্ন স্বপ্নভাবনা ,ইন্দ্রিয়মুখর না হয়ে ঘটি ডোবা জলের আধার ধীরে ধীরে একদিন সাগরে পরিণত হতে পেরেছে ' ।
গৌরশংকর শেষ করেছিল কীভাবে , তা পড়ুন :
' এবার এইসকল সমীকরণের সূত্র ধরে আমি লিখতে পারি এতসব সুস্থতার ভিতরেও যে কবিতামনস্ক অনুসন্ধান এতদিন ধরে একটা নিজস্ব কবিতাভূমি তৈরি করেছে , সেই ভূমিতে গড়ে ওঠা পরিবারের সদস্য ভাবতে দোষ কোথায় ?'
না গৌরশংকর কোথাও কোনো দোষ নেই।এই পরিবার, কবিতার পরিবার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন