সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
১৫০.
উৎসব -কথা শুরু করার আগে একটা আদি-কথা বলে রাখতে চাইছি। এই ' আদি '-র সঙ্গে আদি ঢাকেশ্বরী কিংবা আদি মোহিনীমোহনের কোনো চেনা-জানা নেই।
আদি কথাটি হল কোথায় অনুষ্ঠান , কবে অনুষ্ঠান , কী অনুষ্ঠান ইত্যাদি ঠিক করতাম আমি। তারপর তার জন্য যাবতীয় কাজ পালন করত নাসের হোসেন। যেমন ধরুন , কেন্দ্রীয় উৎসব হবে বাংলা আকাদেমি সভাঘরে এবং রবীন্দ্রসদন প্রাঙ্গণে। এটুকুই জানিয়ে ছিলাম নাসেরকে। এরপর প্রেক্ষাগৃহ এবং মুক্তমঞ্চ বুকিং-এর যাবতীয় কাজ নাসেরের। আমি বলে দিয়েই খালাস । নাসের কীভাবে এসব করত তার বিন্দুবিসর্গ আমি জানি না।
আমি একটা জিনিস খুব ভালো করে জানতাম , নাসের যখন দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে , তখন আমার অহেতুক ভাবনা করার কিছু নেই।
উৎসবে কবিতাপাক্ষিক পরিবারের লোকজনদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল ' শোভনালয় ' -এ।ওখানেই থাকা এবং খাওয়া। এসবের বা এদের দ্যাখাশোনার দায়িত্বে ছিল যূথিকা রাজা ছাড়াও বাসুদেবপুরের ইন্দ্রজিৎ ঘোষ এবং পাণ্ডুকের জয়ন্ত ঘোষ ।আর চারজনকে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছিলাম আমি।
মনে আছে বড়ো বড়ো ব্যানার আঁকার জন্য দু-তিন দিন আগেই উপস্থিত হয়েছিল শিল্পী তাপস দাস।এই ব্যানারের যাবতীয় কাজ হয়েছিল কানাইলাল জানা-র বেকার রোডের আবাসনের খোলা আঙিনায়। মনের আনন্দে দিন-রাত কাজ করে গেছে তাপস। একজন শিল্পী-র কবিতার জন্য , কবিতাপাক্ষিকের জন্য এই অবদান চিরদিন মনে রাখতে হবে। তাপস-কে দেখেছিলাম কাটোয়া বইমেলাকে সুসজ্জিত করতে । আমি তাপসের কাছে ঋণী।
২ নভেম্বর ২০০৩। সেই শুভদিন। বাংলাকবিতার ঐতিহাসিক দিন , ৪৯ টি প্রান্তে কবিতাউৎসব পালন করার পর কেন্দ্রীয় উৎসব।
সেদিন বাজারের দায়িত্বে ছিলাম আমি আর দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়। রান্না কেষ্টঠাকুরের।
বেলা ১২ টায় শোভনালয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু সহ অন্যান্য সকলে। একত্রে পাতপেড়ে খাওয়ার পর বেশ কয়েকটি গাড়ি আমাদের পৌঁছে দিয়েছিল বাংলা আকাদেমি-রবীন্দ্রসদন -এ।
ঠিক ১ টায় কেন্দ্রীয় কবিতাউৎসবের সূচনা করলেন উৎপলকুমার বসু , মঞ্চ থেকে পুষ্পবৃষ্টি করে। যাঁদের বাসনা হবে তাঁরা মঞ্চটিকে অন্তরিক্ষ ভেবে নিতে পারেন। মঞ্চে তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উৎপল চক্রবর্তী উৎপল ফকির এবং দীপংকর ঘোষ।
মঞ্চে ৩ উৎপলের উপস্থিতির কারণ ভারতের জাতীয় পুষ্প পদ্ম। ৩ পদ্ম দিয়ে কেউ যদি আমার পদ্ম-প্রীতি দেখতে পান , দেখতে পারেন। আমি আপত্তি করছি না।
অগ্রজদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য - স্মারক প্রদান করা হয়েছিল যথাক্রমে উৎপলকুমার বসু অমিতাভ দাশগুপ্ত তরুণ সান্যাল এবং দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়-কে।
এরপর , ৬-এর দশকের প্রয়াত কবিদের নামাঙ্কিত কবিতাপাক্ষিক সম্মান তুলে দেওয়া হল অনন্ত দাশ আফজল আলি গৌরশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় গৌরাঙ্গ মিত্র তৃপ্তি সান্ত্রা নুরুল আমিন বিশ্বাস প্রশান্ত গুহমজুমদার সঞ্জীব প্রমাণিক এবং সুবীর ঘোষ-এর হাতে। সমীর চক্রবর্তী আসতে পারেননি । সোনালি বেগমও অনুপস্থিত ছিল।
দাহপত্র এবং মনচাষা পত্রিকাদুটিকেও প্রথামতো স্মারক দেওয়া হয়েছিল।
সেবার সনাতন দে স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়-কে।
তুষার চট্টোপাধ্যায় এবং কমলেশ চক্রবর্তী নামাঙ্কিত স্মারক সম্মান দেওয়া হয়েছিল যথাক্রমে মুহম্মদ মতিউল্লাহ এবং প্রবুদ্ধ বাগচী-কে।
অরুণ মিত্র স্মারক সম্মান : সুশীল ভৌমিক।
সমগ্র অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক রবীন্দু বিশ্বাস। সহকারী : শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায় ।
অনুষ্ঠানের বাকি ধারাভাষ্য আগামীকাল নামক একটি কাল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন