সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০২০

সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য ১৬১ || প্রভাত চৌধুরী || ধারাবাহিক বিভাগ

সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য

প্রভাত চৌধুরী



১৬১.

মতিউল্লাহ্ যা লিখেছিল , তাতে অর্ধেকটা ঢাকা ছিল। মূল ব্যাপারটা ছিল আলোক সরকার এবং কবিতাপাক্ষিক-এর রসায়ন কিংবা ভূ-বিজ্ঞান। আমাকে অনেকেই যাঁরা তীব্র আধুনিকতা-বিরোধী মনে করেন , সেটি আপাদমস্তক ঠিক। তবে আরো একটা কথাও আমি বলে থাকি : আধুনিকতার পূর্ণ বিকাশ ছাড়া পোস্টমডার্ন কালখণ্ডে ঢোকার গেটপাশ পাওয়া যাবে না। 

আমি যেমন আত্মকেন্দ্রিক , আধুনিকরা আমার থেকে  অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক। আমি দেখেছিলাম এবং বুঝেছিলাম আধুনিক কালখণ্ডের একজন প্রধান কবি আলোক সরকার এবং প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত। আলোকদাকে যাঁরা দেবতা বলে পুজো করেন , তাঁরা কখনোই তাঁর কাব্যসমগ্র প্রকাশের আয়োজন করেননি। করবেনও না। তাঁরা নিজেদের নিয়েই মশগুল থাকতে আগ্রহী । আর বিভিন্ন বাণিজ্য-সফল প্রকাশনা সংস্থার অভিভাবক কবিজনেরা এক রহস্যময় কারণে আলোক সরকার এবং প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত সম্পর্কে উদাসীন থাকেন। অভিভাবক কবির গুণগ্রাহী তরুণ কবিদের শ্রেষ্ঠ কবিতা মহাসমারোহে প্রকাশ হলেও আলোকদা এবং প্রণবেন্দুদার শ্রেষ্ঠ কবিতা প্রকাশিত হয়নি। 

এই ব্যাপারটা মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম :

আলোক সরকার- এর কবিতা সমগ্র চার খণ্ডে প্রকাশ করব।

প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত - নির্বাচিত কবিতা প্রকাশ করব।

দুটি কাজই আমরা আমাদের সাধ্যমতো করেছিলাম।এমনকী আলোক সরকারের গদ্যসমগ্র এবং শতভিষা - সংকলনও প্রকাশ করেছিলাম।

আলোকদার কবিতা সমগ্র-র প্রচ্ছদ করে দিয়েছিল কবি-শিল্পী শ্যামলবরণ সাহা।

আর প্রণবেন্দুদার নির্বাচিত কবিতা-র যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেছিল কবি-প্রাবন্ধিক সুজিত সরকার।

আলোক সরকারের কবিতা সমগ্র -র প্রকাশ পূর্ব গ্রাহক সংগ্রহের জন্য  পুরুলিয়া এবং কৃষ্ণনগর গিয়েছিলাম। কিন্তু ফিরেছিলাম ফাঁকা হাতে। যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন বলে যাব , এই প্রতিহিংসার কথা। নিজে আর আমরা সেটা করে দিলাম তাতেও অনাস্থা।

কিন্তু আমি তত্ত্বগতভাবে নিজের অবস্থানে স্থির ছিলাম। এরপর মুহম্মদ মতিউল্লাহ্ বলেছিল শতভিষা -র কথা ।আলোক সরকার দীপংকর দাশগুপ্ত তরুণ মিত্র- দের ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত পত্রিকাটি নিয়ে কবিতাপ্রেমীদের কাছে পৌঁছে দেওয়াও একটা অসমাপ্ত কাজ। আধুনিকতা থেকে বের হবার জন্য এই কাজগুলি খুবই জরুরি মনেবলে যাব , এই প্রতিহিংসার কথা। নিজেদের করার যোগ্যতা , আর আমরা সেটা করে দিলাম তাতেও অনাস্থা।

কিন্তু আমি তত্ত্বগতভাবে নিজের অবস্থানে স্থির ছিলাম। এরপর মুহম্মদ মতিউল্লাহ্ বলেছিল শতভিষা -র কথা ।আলোক সরকার দীপংকর দাশগুপ্ত তরুণ মিত্র- দের ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত পত্রিকাটি নিয়ে কবিতাপ্রেমীদের কাছে পৌঁছে দেওয়াও একটা অসমাপ্ত কাজ। আধুনিকতা থেকে বের হবার জন্য এই কাজগুলি খুবই  জরুরি মনে হয়েছিল আমার।

এই কথা আগেও বহুবার বলেছি। আলোক-ভক্তরা এক কান দিয়ে শুনেছেন , অন্য কান দিয়ে বের করে দিয়েছেন। ভুল বললাম। এক চোখ দিয়ে দেখেছেন , অন্য চোখের ভ্রু-পল্লবে ঢেকে দিয়েছেন। তাদের গায়ের চামড়া এতটাই পুরু যে কোনো রকম অপমান এঁদের স্পর্শ করে না।

ছিলাম ' আমাদের কবিতাপাক্ষিক ' আলোচনায় , সেখানে মতি-র লেখার একটা সূত্র ধরে অনেকগুলি  প্রয়োজনীয় কথা বলে রাখলাম। এবার ফিরে যাই কবিতাপাক্ষিক -কথায়।

এরপর আমি বলছি কবি এবং কথাসাহিত্যিক কামাল হোসেন - এর কথা। আমাদের সৌভাগ্য কবিতাপাক্ষিক-এর প্রধান স্তম্ভ নাসের হোসেনের দাদা কামাল হোসেন। কামাল কথাসাহিত্যিক রূপে বেশি পরিচিত । আমার মনে হয় কবি হিসেবেও কামাল হোসেন সমান পারদর্শী। কামাল লিখেছিল :

কবিতাপাক্ষিক মানে আমার কাছে একজন মানুষের স্বপ্নের অন্বেষণ কিংবা তারাদের উদ্যানে নিয়মিত সৌন্দর্যের ফুল ফোটা দেখে যাওয়া।

দীপ সাউ এমন একজন মানুষ যে নিজে থেকে নিজেকে কখনোই জাহির করেনি । যতটা সম্ভব আড়ালে থাকতে চেয়েছে। এবং সেই আড়াল থেকে যে আলো দেখিয়েছে , আমরা সেই আলো-কে অনুসরণ করে হেঁটে গেছি মাত্র।

মনে রাখতে কবিতাপাক্ষিক-এর প্রস্তুতি পর্বে পেয়েছিলাম দীপ সাউ-কে । তার আগে কোনো পরিচয় ছিল না। এমনকী সেসময় শ্যামলবরণ সাহা-কেও চিনতাম না। না-চেনার কারণ আমার দশ বছরের নির্বাসনপর্ব।

দীপ সাউ লিখেছিল :

এই পত্রিকা কবিদের বসবাসের জন্য এক স্বভূমি করে যাবে। তাদের ঝান্ডায় প্রকীর্ণ , মানুষ যতদিন বাঁচবে, কবিতার স্বপ্নও বাঁচবে।  

শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায় ১৪০৪ সনের শ্রাবণমাসে কবিতাপাক্ষিকের গ্রাহক হবার জন্য বহু কষ্টে হাজির হয়েছিল ৩৬ ডি , হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের দপ্তরে। শনিবার। আমরা তখন কলেজ রো-র অন্নপূর্ণা প্রকাশনীর ঘরে। শুভাশিস হাল ছাড়েনি। হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট থেকে কলেজ রো। তখন ওই দপ্তরে অজয় দাশগুপ্ত এবং আমি।

   শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায় নিজের যোগ্যতায় স্থান করে নিয়েছিল কবিতাপাক্ষিক সম্পাদকমণ্ডলীতে। এটা কোনো ম্যাজিকে হয়নি। সম্পাদকমণ্ডলীতে নিতে বাধ্য হয়েছিলাম আমরা।

সেসব কথা মনে করিয়ে দিল ' আমাদের কবিতাপাক্ষিক '- এ প্রকাশিত শুভাশিসের লেখাটি থেকে।

চলতে থাকুক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...