সৌমিত্র রায় -র জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
১৫৭.
আজকের ' মলাটলেখা ' কবিতাপাক্ষিক ২৭২ থেকে নিলাম। যেখানে হেডিং ছিল : একুশের কবিতা ।
নীচে লেখা ছিল :
২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাভাষার একটি রক্তে রাঙানো দিন।আমরা ওইদিন বাংলাভাষার মর্যাদারক্ষার দিন হিসাবে পালন করি ।ও বাংলার দেখাদেখি এ বাংলাতেও এখন ২১শে-র ডাক শোনা যাচ্ছে। বাঙালি কবিরা তো বাংলাভাষাতেই কবিতা লেখেন।আর সে কারণেই বাংলাভাষা কবিদের প্রধান অবলম্বন। এখনকার কবিরা যে ভাষায় কবিতা লিখছেন তার নাম পোস্টমডার্ন কালখণ্ডের বাংলাভাষা। তারই কয়েকটি নিদর্শন এই একুশের কবিতা । লিখেছেন:
রুদ্র কিংশুক গৌরাঙ্গ মিত্র রেজাউদ্দিন স্টালিন রিমি দে বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় অনুপম মুখার্জি সৌম্যজিৎ আচার্য তাপস সরদার সুব্রত চেল শ্যামল শীল গোপাল দাশ ভুবনেশ্বর মজোমদার মন্দ্রাক্রান্তা সেন তিলোত্তমা বসু মানসকুমার চিনি অপূর্বকুমার মাইতি আফজল আলি
মাঝের পাতায় ছিল সৌমিত্র রায়-এর কবিতা।
আমি কয়েকজনের কবিতা থেকে পোস্টমডার্ন কালখণ্ডের বাংলাভাষাকে চিহ্নিত করার কাজটি করার চেষ্টা করছি।
রুদ্র কিংশুক লিখেছিল ৮ টি স্বপ্নের কবিতা।তার মধ্যে মাত্র দু-টি পঙ্ ক্তি :
কৃষিকাজ জানা ছেলে, পাখির কম্পাঙ্ক গান
পড়ে নিই, অনায়াসে তার জঠর জ্যোৎস্না
গৌরাঙ্গ মিত্র -র কবিতা থেকে:
শিংশোর নদীর জলে ধুয়ে ফেলেছি সমস্ত ক্রিয়াপদ, বিপ্রকর্ষ, অভিশ্রুতি ।পাইনগাছগুলোর নীচে বসে গায়ে মাখছি ইউফ্রেতিস নদীতীরের হুলুপ্পুগাছের ছায়া
রিমি দে লিখেছিল ৮ পর্বের বৃত্ত। তার ৫ নম্বরটি:
একটি বল আর বিকেলের সতর্কবার্তা এখন স্থায়ী আসন / সন্ত্রাস ঘন হয়ে আসে ঘরের ভিতর থেকে ।
চোখের/ ভিতর থেকে। বলের বুকের থেকে বোল খুলে পড়ে ,
ফাঁকা মাঠ খেলে ক্রমাগত
বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর লাইন :
' একটা খাটের ওপর দাঁড়িয়ে আছে স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা।
অনুপম মুখার্জি বা এখন অনুপম মুখোপাধ্যায় তখন লিখেছিল :
' প্রতিটি সূর্যমুখী ফুল প্রতিটি চন্দ্রমল্লিকা-র কানে ভরে দেয় / ক্রমে রাত্রি হয়ে ওঠার আশ্চর্য গোপন জাদুকথা ,
সৌম্যজিৎ আচার্য -র তখনকার কবিতা থেকে : এসে গেছে এক ঝিনচ্যাক দিন A ছুটে যাচ্ছে B- এর দিকে--- B জড়িয়ে ধরছে C - এর কোমর ---- D, F, G, H লাইন করে এগিয়ে যাচ্ছে গার্গেল করতে
সুব্রত চেল- এর স্বপ্ন লেখি ডায়েরি। পড়ুন :
' রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো স্বপ্ন আমাদের ডায়েরিতে লেখা হয়নি এখনো / হয়তো হলুদ হয়ে উঠেছে / হয়তো লাল হতে হতে কেউ ঘিরে ধরেছে/
আর হাত দিতে চাইছে না।
শ্যামল শীল লিখেছিল :
' আমার জানলার কাছে যে আকাশ দাঁড়িয়ে থাকে /
তার পকেটে ভরে আমি একদিন নিরুদ্দেশ হয়েছিলাম'
ভুবনেশ্বর মজুমদারের কবিতায় পেলাম :
' যিনি ডানার ভারসাম্য জানেন হাততালি বিষয়ক এটি তার তৃতীয় প্রবন্ধ।তৃতীয় প্রবন্ধের শেষ অনুচ্ছেদে তিনি জানিয়ে দেন তিনি হাততালির আর কোনো দায় স্বীকার করেন না '
তিলোত্তমা বসু-র লালপোকা । প্রথম ৩ লাইন :
একটা লাল রঙের পোকা / আমার চোখের মণির স্বাদে আটকে ছিল।/ কিছুতেই চোখ বন্ধ করতে পারছিলাম না।
আফজল আলি :
তবু সব অন্ধকার অন্ধকার নয়, দূরে পিঁপড়েরা আলো দেখায়,/ অগৌরবের মধ্যবিত্ত চতুর্ভুজ, ঠুনকো আবেগ ,
ওই সংখ্যাতে মাঝের পাতা -র কবি সৌমিত্র রায়। তার ' নিয়মিত কবিতাচর্চা ' থেকে কয়েকটি
১॥ বৃষ্টিভেজা বকুলফুল সকালকে সম্মানিত করে,
২॥ তারাদের শরীর ধুয়ে বৃষ্টি নামে না জানি , রাতের বৃষ্টিধারায় তবু পাই তাদেরই স্মৃতি ধোওয়া জল ,
৩॥ সমস্ত রঙের ছোঁয়াছুঁয়ি পদচারণা যে কোনো পাখির চোখের মতো, আমি তার দৃষ্টি আর পালক হতে চয়েছি শুধু ,
কোনো ব্যাখ্যা নয়। পাঠকের পাঠ্যসূচিতে ঢুকিয়ে দিলাম মাত্র।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন