সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
১৬৭.
অরূপ আচার্য রাইটার্সের । আমার নির্বাসনপর্বেও যোগাযোগ ছিল। অরূপ মূলত গল্পের ।আমাদের একটা খেলা চলত। আমাকে বলতে হত বাংলাসাহিত্য -র দশটি সেরা উপন্যাস-এর তালিকা। এইসব খেলা এখন ফেসবুকে হয়, দেখি ।আমরা খেলতাম ১৯৯০/৯১-এ ।
অরূপ তার লেখাটি শেষ করেছিল কীভাবে , দেখুন :
' সর্বোপরি বলতে হয় কবিতার প্রতি তার নির্মোহ ভালোবাসা ছাড়া একটি নিয়মিত পাক্ষিক কবিতার কাগজ হওয়া সম্ভব নয় দীর্ঘকাল ধরে। এটা তাকে তোষামোদ নয়, এটা জানানো কর্তব্য মনে করি '।
দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়ও রাইটার্সের ।আবার কবিতাপাক্ষিক পরিবারের । আমরা একসঙ্গে গেছি মালদা থেকে দুর্গাপুর, শান্তিনিকেতন , ছান্দার , কাটোয়া , এমনকী সিঙ্গুর বইমেলাতেও। দেবাশিসের পুরোনো লেখাটি পড়তে পড়তে মনে পড়ে গেল আমাদের সাদা দুষ্টমি-র কথা।
দেবাশিসদের শিবরামপুরের বাড়িতেও অনেকবার গেছি। ' জন্মদিন ' , প্রায় একটি দীর্ঘকবিতা ওর বাড়িতে বসেই লেখা।
দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় ' আমাদের কবিতাপাক্ষিক ' শীর্ষক লেখাটির শেষ প্যারাগ্রাফটি শুরু হয়েছিল :
' যা বলার তা হল ,মানচিত্র চুপচাপ বসে বদলানো যায় না, তার জন্য স্বপ্নকে জ্যামিতিক পরিসরে সাজাতে হয় , ডাকতে হয় প্রান্তিকেও । প্রতিটি স্পর্শ জীবনের প্রতিটি অণুপরমাণুকে জারিত করে স্বপ্ন ও মানচিত্র গঠন করতে হয় । সেখানে অবশ্যই থাকবে সুতানের জঙ্গল। নৌকোবিহার ,ছাঁদারের লোকসংগীত , কাটোয়ার নিতাই ক্ষাপার বাউল গান , ঠাকুরের বজ্রাসন , রজতেন্দ্রর উদাত্ত কণ্ঠস্বরে রবীন্দ্রগান , শান্তনুর মনমজানো বাঁশি , নাসেরদার মিটি মিটি হাসি , স্টলে মুরারির পাঠককে ডেকে বলা : নিয়ে যান প্রেমের কবিতা, বিরহের কবিতা, ভালোলাগার কবিতা। পোস্টমডার্ন মানচিত্র --- এই তো , এর বেশি আর কীই বা যার ভূমধ্যে স্বপ্ন ও কবিতা তীব্র।'
আর কীই বা লিখতে পারত দেবাশিস ! মন এবং প্রাণ উজাড় করে কবিতাপাক্ষিক সঙ্গে ছিল এবং আছেও।
সুজিত সরকার সম্বন্ধে যতটুকু বলতে পারব আমি সেটা সুজিত-কে সর্বাঙ্গে চেনাতে সক্ষম হব না আমি। কবি এবং প্রবন্ধকার হিসেবে সর্বজন পরিচিত সুজিত সরকার এক সময় কবিতাপাক্ষিকের এডিটোরিয়াল টিমে ছিল। এবং ওর পরিকল্পনা এবং আয়োজনে আমরা ' কবিতা পরিচয় ' সংখ্যা প্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছিলাম। ওর ' কবিতা কেন কবিতা ' গদ্যের বইটি আমরা দু-হাজার কপি বিক্রি করেছি।
সুজিত সরকার সম্পর্কে একটি গোপন সংবাদ জানিয়ে রাখছি। সংবাদটি বেশি লোকজানাজানি করবেন না। করলে আমি লজ্জা পাবো। আমি যে ইংরেজিতে দক্ষ নই , এটা ইতিমধ্যে অনেকেই জেনে গেছেন। কিন্তু আমি যে সুজিতের কাছে ইংরেজি কবিতার ক্লাস করেছি , এটা অনেকেই জানতেন না। সেই অর্থে সুজিত সরকার আমার শিক্ষকও।
সেই সুজিত লিখেছিল :
' কবিতার নতুন মানচিত্র নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছিল কবিতাপাক্ষিক এবং দিনে দিনে পোস্টমডার্ন কবিতা ও পোস্টমডার্ন তত্ত্বের অবিরাম প্রকাশের মধ্য দিয়ে এই ঘোষণা আজ অবশেষে সত্য হ্য়ে উঠেছে। বিশ শতকের শেষ দশক থেকে বাংলা কবিতায় যে বড়ো রকমের পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে তার পেছনে ' কবিতাপাক্ষিক '- এর অবদান অনেকটাই। তরুণতম কবিদের কথা বাদই দিলাভ , শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ও সদ্যপ্রয়াত মঞ্জুষ দাশগুপ্তের মতো প্রতিষ্ঠিত ও বিখ্যাত কবিরাও যে এই পত্রিকার সংস্পর্শে এসে নিজেদের লিখনভঙ্গিমাকে জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে কিছুটা বদলে ফেলেছেন তা লক্ষ করে আমি বিস্মিত হয়েছি।'
এই কথাগুলি কিন্তু আমার কথা নয়। বিশিষ্ট কবি প্রাবন্ধিক সুজিত সরকার-এর কথাগুলি আমি উদ্ধৃত করলাম মাত্র।
ধন্যবাদ সুজিত। ঠিক এই সময় আমার চোখে পড়ে গেল তোমার এই লেখাটি। এখন একদল মান্ধাতাগন্ধী কবিতালেখক একযোগে কবিতায় আপডেট বিষয়টি সহ্য করতে পারছেন না।তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের সনাতন-পন্থায় আস্থা রেখে চলতে চাইছেন। তাতে তাঁদের স্বাধীনতায় আমি হস্তক্ষেপ করতে যাব কেন ? এই জন্মান্ধদের চোখে আলো ফোটানোর সব দায়িত্ব আমার একার নয়। এখনকার কবিতা মনোযোগ দিয়ে পড়লেই বিষয়টি দিনের আলোর মতো স্বচ্ছ হয়ে যাবে।
মান্ধাতাগন্ধী বা মান্ধাতাপন্থীরা সমস্ত সময়েই বিরাজ করেন। তাঁরা এগিয়ে যেতে চান না অথবা তাঁদের এগিয়ে যাবার ক্ষমতাই নেই ।তাঁরা ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পরবেন।ততদিন আমরা আমাদের মতো করে কবিতার আপডেট করে যাব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন