দীর্ঘ কবিতা
ফুরিয়ে আসছে দিন
সুধাংশুরঞ্জন সাহা
পৃথিবীর সবকিছু বদলে যাচ্ছে অনবরত ।
মাটি জল বায়ু আর ভূ-বৈচিত্রে সেই কবে যেন
বেসামাল এক ধাক্কা লেগেছিল হঠাৎ করেই।
ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব হল উনবিংশ শতাব্দীতে।
মানুষের চোখে এক প্রকৌশল ডানা মেলেছিল।
মানুষও ভেবেছিল তারা সব বদলাতে পারে।
#
সুফল কিছু মিলেছে জীবনের গুণগতমানে ।
কালক্রমে দেখা গেল, জল বাতাস দূষিত হচ্ছে।
ভূবৈচিত্র ক্রমে ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে ।
একে একে হারাচ্ছিল বাস্তুতন্ত্রের সব চরিত্র।
কার্যকারিতা হারায় তার যাবতীয় উপাদান।
আট লক্ষ বছরের ইতিহাসে যা ঘটেনি তাই
ঘটে চলল পঞ্চাশ ষাট বছরের ব্যবধানে।
সবচেয়ে উষ্ণতম হয়ে উঠল এই শতাব্দী ।
#
আমার শহর এক উষ্ণতম দ্বীপের মতন ।
কলকাতা শহরকে দিশেহারা দেখিনি এমন।
নানা প্রশ্ন উড়ে আসে,জবাব কঠিন হয় ক্রমে !
শিল্প বিপ্লবের পরে, কার্বন, বিষাক্ত কার্বনই
বেশি মিশেছে বাতাসে, কমপক্ষে চল্লিশ শতাংশ
তার আবহমন্ডল গিলেছে সাত আট দশকে ।
#
আমাদের পৃথিবীর যে তিন শতাংশ জল, সেই
জল এই শতাব্দীর মাঝেই উষ্ণ হয়ে উঠবে ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই শতাব্দীর মাঝামাঝি
উত্তর মেরু অঞ্চল আর হিমালয় অঞ্চলের
জমে থাকা বরফও দ্রুত গলতে শুরু করবে ।
সমুদ্রতল উঁচুতে উঠছে আমাদের অলক্ষ্যে ।
সমীক্ষা বলছে, গত এক শতাব্দীতে আমাদের
সুন্দরবনের ভূমি ক্ষয়ে গেছে ভয়াবহভাবে ।
#
আর সাগর এগিয়ে গেছে কয়েক কিলোমিটার ।
বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে গেছে কয়েক কোটি হেক্টর,
দিন, মাস ও বছর আমাদের অক্সিজেন দিয়ে
বেঁচে থাকতে সাহায্য করে সহজ সরল বন।
কত কৃষিজমি আর চারণভূমি হারিয়েছে জাত !
আমাদের ব্যবহৃত কত হাজার টন প্লাষ্টিক...
#
কত পরিমাণ বর্জ্য তৈরি করে সে হিসেব কেউ
রাখে না নির্ঘাৎ, এই অঢেল বর্জ্য সমুদ্রে মেশে।
অক্সিজেন শূন্যতায় ভোগে সমুদ্রের কিছু অংশ,
যেখানে কোন উদ্ভিদ কিংবা প্রাণী বাঁচবে না আর।
মাত্র চল্লিশ বছরে অসংখ্য প্রজাতি লুপ্তপ্রায় ।
গবেষকদের মতে, সংখ্যাও কমেছে ততোধিক।
সবচেয়ে বেশি কমে গেছে মিষ্টি জলের প্রাণীই।
কীটনাশক অথবা কেমিক্যাল সারও ঘাতক ।
#
বাস্তব্যবিদ্য্যায় বলে,পৃথিবীর মানুষের জন্য
বেঁচে থাকার জন্যই মাথাপিছু জমি চাই যতো
এখন পাওয়া যায় মোটামুটি অর্ধেকটা তার
অর্থাৎ জনসংখ্যার জন্য চাই দ্বিতীয় পৃথিবী ।
এতো অভাবে মানুষ তাহলে বেঁচে আছে কীভাবে ?
ভূগর্ভস্থ জলস্তর, বায়ুর উপাদান বিষিয়ে !
#
মানুষ প্রতিনিয়ত গোপনে ধ্বংস করে নিজেকে
জানেনা, মিনিটে মুছে দিচ্ছে কত অরণ্যসম্পদ
এই ভাবেই ক্রমশ বিপন্নতা ঘনিয়ে আসছে ।
অবশেষে মানুষই মানুষের প্রকৃত ঘাতক।
এই ধ্বংসলীলা যদি চলতে থাকে অবাধে তবে,
পৃথিবীতে মানুষের আয়ু দ্রুত ফুরিয়ে আসছে ।
ফুরিয়ে আসছে দিন, গোনা শুরু ধ্বংসের প্রহর ।
করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক তারই পূর্বাভাস !
----------------------------------------
সুধাংশুরঞ্জন সাহা
৫৭/৬এ/২ সন্তোষ রায় রোড
শিবম অ্যাপার্টমেন্টস
কলকাতা - ৭০০০০৮
কথা : ৮৬৯৭৯০০৬০৬
ভালো লাগল।
উত্তরমুছুনপৃথিবীর প্রদূষণ ও ভবিষ্যত পরিবেশের জন্যে হাহাকার লেখকের কলমে যথাযথ ভাবে উঠে এসেছে।
উত্তরমুছুন