সার্ধশতে, গান্ধি মহারাজ : স্মরণ (১৮৬৯-২০১৯)
শিবদেব মিত্র
বিতর্ক তাঁর পিছু ধাওয়া করতে কসুর না করলেও, তাঁকে বিচলিত করতে পারেনি! বরং 'দুঃখেষ্বনুদ্বিগ্নমনা, সুখেষু বিগতস্পৃহঃ', মুনিপ্রবর মুণ্ডিতমস্তক, শীর্ণদেহী, হাতে লাঠি, চাদর মোড়া, দৃঢ়চেতা 'বার্ধক্য হীন ' যুবক ঋষিপুরুষটির অহিংস, আত্মমোক্ষকামী মাতৃ আরাধনা ব্রতে জাতি সভ্যতার প্রেক্ষাপটে শাশ্বত, সনাতন আশ্রয় অনুভব করেছে! দেশ তাঁকে পরশ-পাথর মেনেছে- সংকটে, উচ্ছ্বাসে ও বিশ্বাসে| তবে 'রত্ন' মানতে দ্বিধাগ্রস্ততা অনুভব করেছে ।
রাষ্ট্র তাঁর অবিস্মরণীয় স্মৃতি কে রাষ্ট্রিক প্রথায় উদযাপন করেছে। আবেগ দিয়ে বিবেককে স্তব্ধ করেছে। তাঁকে মান্যতা দিয়েছে, তবে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণে বিরত থেকেছে। শিক্ষায়, শিল্পে, স্বাস্থ্যে, সমাজ ভাবনায় বা দেশ নির্মাণে- দেশ তাঁকে অবান্তর, অবাস্তব ভাবনার জনক আখ্যায় আখ্যায়িত করে, তাঁর সঙ্গ পরিত্যাগ করেছে। পরিস্থিতির সঙ্গে তিনি আপোস করেন নি। মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন- ন্যুনতম আপোস যদিও বা করা চলে, তবে তা নীতির সঙ্গে। চলতি হাওয়ার সাথে না! আর সংগ্রাম হল- বাস্তবটাকে ই আদর্শের পরিপূরক করে তোলা! রাজনীতি করা আর ব্যক্তিসত্বার পরমার্থিক বিকাশ সাধনের মাঝে তফাত মানতেন না। মানতেন, জনপরিসরের মাঝে থেকেও আত্মিক ও সার্বিক অহিংসার সাধন, সত্যবাদিতা ও লোভ সংবরণের মাধ্যমে মোক্ষ লাভ সম্ভব!
পাশ্চাত্য দার্শনিক অ্যাডাম স্মিথ প্রমুখের মনুষ্য সভ্যতায় স্বার্থপরতা ও স্বার্থ সন্ধানের প্রতি স্বীকৃতির উল্টোপিঠে দাঁড়িয়ে আত্মিক বিকাশ, ব্যক্তি উৎকর্ষ সাধন ও মোক্ষ লাভের পরমার্থিক চেতনাকে স্বীকৃতি দিয়ে জীবনচর্যায় সত্য-অহিংসা ও সরলতার প্রতিধ্বনি তুলেই, তিনি মহাত্মা। একক ও স্বতঃপ্রদীপ্ত আলোকবর্তিকা। অহিংসাকে নিশ্চিত করলে তবেই সম্ভব উন্নয়ন! যেন তেন প্রকারেণ চটজলদি উন্নয়নে ছিলেন নিমরাজি। আক্ষরিক অর্থেই চেয়েছিলেন "সবকা সাথ, সবকা বিকাশ"। সংসদীয় রাজনীতির ছিলেন ঘোরতর বিরোধী!
বিজ্ঞানমনস্কতার অভাব, স্বেচ্ছাপ্রকাশ ব্যসন, একগুঁয়েমি, আলস্য, অবাস্তবের প্রতি টান প্রভৃতির তীর তাঁকে বারবার বিদ্ধ করলেও ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক কুরুক্ষেত্রে তিনিই ভীষ্ম! মহাত্মা! শরশয্যাকে উপেক্ষা করে, সার্ধশত বর্ষেও ভারতাত্মার এক এবং একমাত্র ধর্মনিরপক্ষ, গণতান্ত্রিক, আদর্শ, অভিভাবকোচিত অবিসংবাদী মুখ- আজও সেই গান্ধি মহারাজ!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন