সবাই মিলে সিনেমা হলে (১৪)
কিভাবে সিনেমা " দেখব ?"
সত্যি সত্যি যদি সিনেমার রূপ রস দৃশ্যসুখ উপভোগ করতে চান, তাহলে আগ্রহের সঙ্গে আপনাকে কতগুলো দিকের নিয়মিত চর্চা করতেই হবে । যেমন------
১) ১৮৯৫ সালে সিনেমার জন্ম লগ্ন থেকে বিশ্ব সিনেমার ধারাবাহিক ইতিহাস জেনে নিতে হবে । এটা করতে পারেন---( ক) বাংলা এবং ইংরিজিতে সিনেমার ইতিহাসের বইপত্র পড়ে । ( খ ) ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে ১৮৯৫ সালে লুমিয়ের ভাইদের তোলা আদি সিনেমা থেকে একদম সাম্প্রতিক কালের সিনেমা, আপনি পরপর পেয়ে যাবেন ইউ টিউব চ্যানেলে ।
দেশে দেশে নানা ধরণের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মতো সিনেমা মাধ্যমটিও দেশ ভেদে নানান বৈচিত্র্যে ভরপুর । হলিউডের সিনেমাই পৃথিবীর একমাত্র সিনেমা নয় । ব্রিটিশ ফিল্ম এবং অ্যামেরিকান ফিল্ম ভাষা এবং সংস্কৃতির দিক থেকে অনেকটা একইরকম লাগে ।
কিন্তু, জার্মানি , ফ্রান্সের মতো পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে পোল্যাণ্ড কিংবা চেকোশ্লভাকিয়া সহ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সিনেমার সঙ্গে হলিউডের সিনেমার ধরণধারণ অনেকটাই আলাদা ।
ফ্রান্স, জার্মানি , পোল্যাণ্ড তো নানা ধরণের চলচ্চিত্র রীতির আন্দোলনের জন্যও বিখ্যাত ।
তেমনি আবার , দক্ষিণ অ্যামেরিকা বা ল্যাতিন অ্যামেরিকার সিনেমায় গল্প কথন রীতি একেবারেই আলাদা । সেখানে সিনেমায় গল্প বলার রীতিকে ভেঙ্গে চুরে , কাহিনীর গতিকে আগুপিছু করে দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে পরিবেশন করেন ওরা । নিয়মিত ওই সব সিনেমা দেখতে দেখতে তার মজাটাও পেতে থাকবেন আপনি ।
এশিয়ার মধ্যে জাপানী চলচ্চিত্র, বিশেষত আকিরা কুরোশওয়া পরিচালিত ছবিগুলি তো সারা পৃথিবীর চলচ্চিত্র রসিকদের কাছেই অসম্ভব প্রিয় । কুরোশওয়া তো হলিউড ফিল্ম কোম্পানি গুলোরও টনক নাড়িয়ে দিয়েছিল ।
গত ২৫/ ৩০ বছরে ইরাণে নির্মিত সিনেমা , কিংবা কোরিয়ার সিনেমা তাদের অভিনব ও আধুনিকতম সিনেমা রীতিতে সারা পৃথিবীতেই হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে ।
আমাদের দেশে হিন্দি সিনেমাকে আমরা বরাবরই বাণিজ্যিক সিনেমার প্রতিভূ হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত । কিন্তু সিরিয়াস চলচ্চিত্র রসিকেরা জানেন , সেই ১৯৩০-এর দশক থেকেই হিন্দি সিনেমা জগতেও প্রচুর ব্যতিক্রমী ছবি তৈরি হয়েছে । গত ১০/১৫ বছরে অনেক শিক্ষিত তরুণেরা এসে মুম্বাই সিনেমাতেও বেশ কিছু বুদ্ধিদীপ্ত সিনেমা তৈরি করেছেন / করছেন ।
বাংলা সিনেমার কথা আর আলাদা করে বলছি না । বাঙালির পক্ষে সেই তিরিশের দশকে নিউ থিয়েটার্সের আমল থেকে সত্যজিৎ- ঋত্বিক-মৃণাল-তপন সিংহ- তরুণ মজুমদার হয়ে হাল আমলের বাংলা সিনেমার গুণাগুণ ধারাবাহিক ভাবে জেনে নেওয়া কঠিন কোনও ব্যাপার নয় ।
সিনেমা যেহেতু চিত্রকলা , সংগীত , গল্প-উপন্যাস- কবিতা-নাটক সবক'টি প্রচলিত শিল্প মাধ্যমের সংমিশ্রণে তৈরি হয় , তাই সিনেমার ধারাবাহিক ইতিহাস জানবার পর এই প্রচলিত শিল্প মাধ্যম গুলির সব ক'টি সম্পর্কেই আপনাকে অন্তত প্রাথমিক ধারণাটুকু চর্চার মধ্য দিয়ে তৈরি করে নিতেই হবে । বিশেষত , চিত্রকলা এবং সংগীত ( পাশ্চাত্য সংগীতের সোনাটা ফর্ম ) সম্পর্কে ধারণা থাকলে, যে কোনও দেশের , যে কোনও রীতির সিনেমার রস গ্রহণ আপনার পক্ষে অনেক সহজ ও আনন্দময় হয়ে উঠতে পারে ।
ভালো সিনেমার গভীর রসগ্রহণ যে কত আনন্দজনক , যারা জানেন , তারা জানেন । বুঝহ রসিকজন , যে জানহ সন্ধান ।
ঠিকঠাক ভাবে সিনেমা দেখতে পারার মধ্য দিয়ে গভীর আনন্দ পাওয়ার আরও কিছু সুলুক সন্ধান আছে ।
সে সব পদ্ধতি নিয়ে আরও কিছু কথা বলবার ইচ্ছে রইল , পরের বারে ।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন