মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

নস্টালজিয়া ১৮ || পৃথা চট্টোপাধ্যায় || ন্যানো টেক্সট

নস্টালজিয়া ১৮

পৃথা চট্টোপাধ্যায়




পুজোর দিন এগিয়ে এলেও  এবার এই করোনার আবহে কারোরই সেই ভাবে পুজোর অনুভব আসছে না। এ এক অদ্ভুত সময়। কখনো কেউ এইরকম সময়, এরকম  আতঙ্কিত দিন  যে আসতে পারে আমরা হয়ত কল্পনাও করি নি। বরাবরই পুজোর সময় এগিয়ে আসা মানেই খুশি খুশি ভাব। নতুন জামা কাপড়ের গন্ধ। আলমারি খুললেই ন্যাপথালিনের গন্ধ। এখনও ন্যাপথালিনের গন্ধের সাথে আমার ছোটবেলার অনেক কথা ,অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আমাদের নতুন জুতো মোজা কেনা হতো পুজোর সময়।আমরা পুজোর সময় জুতোর সাথে অবশ্যই মোজা কিনতাম।জুতো, জামা সব এক সাইজ করে বড়ো কেনা হতো আমাদের।জুতোর ক্ষেত্রে শৌখিনতার চেয়ে টেকসই যাতে হয় সেদিকে বেশি গুরুত্ব দিত মা।বেল্ট দেওয়া জুতো অথবা এখন যাকে ব্যালেরিনা বলে সেই ধরনের জুতো কেনা হতো ছোটবেলায়।   মোজা যদিও শীত কালে পারতাম তবু পুজোর সময়ই কেনা হতো।ছোটবেলায় পুজোতে নতুন জামার সাথে নতুন জুতো পরে প্রতিবছর  পায়ে ফোস্কা পড়ত। ঠাকুর দেখতে বেড়িয়ে হাঁটতে কষ্ট হতো। পুজোর আগে জুতো পরে একটু অভ্যাস করে রাখলে এটা হয় না তখন জানতাম না। আর তখন ধারণা ছিল আগে ব্যবহার করা মানেই তো  পুরোনো হয়ে যাওয়া। পুজো শেষ হলে সব  নতুন জামা কেচে মা আলমারিতে অথবা ট্রাঙ্কে রেখে দিত,আর গতবছরের জামা বের করে দিত পুজোর পর ব্যবহারের জন্য।  নতুন প্রসাধন সামগ্রীও কেনা হতো পুজোর সময়। আমার মা তেমন সাজগোজ করত না। সিঁদুরের টিপ আর সাধারণ আটপৌরে শাড়িতে মাকে কী সুন্দর লাগত! আমি আর বোন যেতাম বাবার সঙ্গে  বাবার  বন্ধু ভবাকাকুর দোকানে সাজগোজের  জিনিস কিনতে।তখন সেই দোকানের নাম ছিল উর্বশী।অনেক দিন লালবাগ ছেড়ে কলকাতায়। জানি না সেই দোকান এখন আছে কি না। খুব প্রথাগতভাবে প্রতি বছর একই জিনিস কেনা হতো। চুলের তেল ডাবর আমলা, পন্ডস্ পাউডার, ভিকো ক্রিম, ফেমিনা ক্রিম, ক্লিনিক প্লাস শ্যাম্পু, পন্ডস্ কোল্ড ক্রিম,সিঁদুর, আলতা, একটা নেলপালিশ, দুটো টিপের পাতা নানারঙের, সিঙ্গার টিপ,ওলি সেন্ট। যদিও আমাদের কাজল পাতা হত কাজল লতায় তবু  সিঙ্গার কাজলের ছোট্ট  কৌটো, আমাদের চুলের ক্লিপ আর কাচের চুড়িও কিনতাম । সামনে শীতকাল আসবে তাই ভেবে একটা বসন্ত মালতি আর বোরোলীনও পুজোর সময়ই কেনা হতো। একটু বড় হবার পর আমরা পাড়ার চুড়িওয়ালির বাড়িতে কাচের চুড়ি পরতাম  পুজোর নতুন জামার  সঙ্গে রং  মিলিয়ে। মা আমার হাত কেটে যাওয়ার ভয়ে কাচের চুড়ি পরা পছন্দ করতো না। পুজোর সময় শুধু ঠাকুর দেখা আর খাওয়া এই নিয়মে চলতাম না। তখন অবাধ মুক্তি। আমার মায়ের কড়া শাসন থাকলেও এই দিনগুলোতে  মা একটুও বকতো না।পুজোর ক' দিন তো মোটেই পড়াশোনা করতাম  না। মহালয়ার  পর থেকেই আকাশে বাতাসে খুশির সুর ধ্বনিত হতো। খুব ছোটাছুটি খেলতাম আমরা।একবার দেওয়াল বা কোথাও ধাক্কা লাগলে অথবা হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে কাচের চুড়ি  সত্যিই ভেঙে যেত। মন খারাপ হলেও সেদিকে বিশেষ ভ্রূক্ষেপ থাকত না। আবার খেলায় মেতে যেতাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...