নস্টালজিয়া ১৪
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
ছোটবেলার এক একটা ঘটনা বড় বেলায় কেমন করে গল্প হয়ে যায়। এই রকম কত ঘটনা মনে পড়ছে আজ। আমাদের বাড়ির উঠোনে ছিল চারটে নারকেল গাছ। ভাদ্র মাস এলেই সেই গাছ কাটার লোক আসত। গাছ কাটা মানে নারকেল গাছের পাতা কাটা, পাকা পরিণত নারকেল পাড়া, ডাবের কাঁদি নামানো ইত্যাদি। পুজোর আগে এই সময় নারকেল গাছগুলোকেও সাফ সুতরো করা হতো। পুজোয় অনেকগুলো কাচের বয়াম ভরে চিনির নাড়ু, গুড়ের নাড়ু ও নারকেলের নানা রকম মিষ্টি তৈরি করা হত। আমাদের বাড়ির অধিকাংশ রান্নাতেও নারকেল দিত মা। আমার বাবা কাকা খুব ভালো ডাব চিংড়ি করতে পারতো। শুধু পুজোর সময় বলে না বারোমাস আমাদের ঘরে নারকেল নাড়ু থাকতো। এটা আমাদের খুব প্রিয় একটি খাদ্যবস্তু ছিল। অনেক নারকেল হতো এই চারটে গাছে। একটা মস্ত বড় সাঁড়াশি ছিল নারকেল ছাড়ানোর জন্য। ঐ সাঁড়াশি দিয়ে আমরা ছোট বড় সবাই খুব তাড়াতাড়ি নারকেল ছাড়াতে পারতাম। নারকেল পাতা থেকে কাঠি ছাড়িয়ে তাই দিয়ে ঝাঁটা তৈরি হত।কতজন নারকেল পাতা আর শুকনো ডালপাতা, বাগরা নিয়ে যেত জ্বালানির জন্য। এখনকার শহরের ছেলেমেয়েরা এইসব আনন্দের গভীরতা অনুভব করতে পারবে না। পাকা ঝুনো নারকেল ছাড়াও বাবা দোমালা আর ডাবও পাড়াতো এই দিন। আমরা তখন প্রতিদিন বাড়ির ডাবের জল খেতাম। ইচ্ছে হলেই নারকেল খেতাম।কিছুদিন আগে আমার allergy test হলে জানতে পারলাম আমার নারকেলে নাকি allergy , নারকেল খেতাম আগে এতো কই কিছু তো অসুবিধে কখনও বুঝতে পারি নি। আত্মীয়- স্বজন, পাড়া- প্রতিবেশীদের মা এইসময় বাড়ির গাছের নারকেল দিত। তবে আমাদের পাড়ায় তখন অধিকাংশ বাড়িতেই নারকেল গাছ ছিল। নারকেল গাছ কাটানোর দিন খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার মন খুশিতে পূর্ণ হতো, কারণ আমাদের বাড়িটা তখন খুব খোলামেলা লাগতো। পুজো এসে গেছে এই অনুভূতিটা আরও গাঢ় হত যেন । উঠোনে দাঁড়িয়ে নীল আকাশ দেখতে পেতাম। এমনিতেই অনেক গাছপালা তার সাথে উঁচু নারকেল গাছের পাতার জন্য বাড়ি থেকে আকাশ দেখতে হতো পাতার ফাঁকে ফাঁকে অথবা ছাদে গিয়ে। বাড়ির উঠোনে একটা পেয়ারা গাছ আর একটা শিউলি ফুলের গাছ পাশাপাশি ছিল। বর্ষায় যেমন গাছ ভরে দারুণ পেয়ারা হতো তেমনই শরৎকাল জুড়ে আমাদের বাড়ির বাতাসে শিউলির গন্ধ ভাসত। ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠেই দেখতাম কেমন সাদা চাদর বিছিয়ে আছে শিউলি গাছের তলায়। পাড়ার অনেকেই সেই ভোরে ফুল কুড়োতে আসতো। কে কত তাড়াতাড়ি কত বেশি ফুল কুড়াতে পারে তার এক নীরব প্রতিযোগিতা চলতো যেন। সেই আনন্দের স্মৃতি আজও মনে আছে, হাতে লেগে আছে শিউলির সুগন্ধ। আর সাজি নিয়ে ফুল কুড়োনোর আনন্দময় দিনগুলো সময় কখন যে কুড়িয়ে নিয়ে গেছে জানতেই পারি নি। আজ সে বাড়ি আমার নেই, সেই গাছ হয়তো আছে কিন্তু আমার সেই সাজি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
ছোটবেলার এক একটা ঘটনা বড় বেলায় কেমন করে গল্প হয়ে যায়। এই রকম কত ঘটনা মনে পড়ছে আজ। আমাদের বাড়ির উঠোনে ছিল চারটে নারকেল গাছ। ভাদ্র মাস এলেই সেই গাছ কাটার লোক আসত। গাছ কাটা মানে নারকেল গাছের পাতা কাটা, পাকা পরিণত নারকেল পাড়া, ডাবের কাঁদি নামানো ইত্যাদি। পুজোর আগে এই সময় নারকেল গাছগুলোকেও সাফ সুতরো করা হতো। পুজোয় অনেকগুলো কাচের বয়াম ভরে চিনির নাড়ু, গুড়ের নাড়ু ও নারকেলের নানা রকম মিষ্টি তৈরি করা হত। আমাদের বাড়ির অধিকাংশ রান্নাতেও নারকেল দিত মা। আমার বাবা কাকা খুব ভালো ডাব চিংড়ি করতে পারতো। শুধু পুজোর সময় বলে না বারোমাস আমাদের ঘরে নারকেল নাড়ু থাকতো। এটা আমাদের খুব প্রিয় একটি খাদ্যবস্তু ছিল। অনেক নারকেল হতো এই চারটে গাছে। একটা মস্ত বড় সাঁড়াশি ছিল নারকেল ছাড়ানোর জন্য। ঐ সাঁড়াশি দিয়ে আমরা ছোট বড় সবাই খুব তাড়াতাড়ি নারকেল ছাড়াতে পারতাম। নারকেল পাতা থেকে কাঠি ছাড়িয়ে তাই দিয়ে ঝাঁটা তৈরি হত।কতজন নারকেল পাতা আর শুকনো ডালপাতা, বাগরা নিয়ে যেত জ্বালানির জন্য। এখনকার শহরের ছেলেমেয়েরা এইসব আনন্দের গভীরতা অনুভব করতে পারবে না। পাকা ঝুনো নারকেল ছাড়াও বাবা দোমালা আর ডাবও পাড়াতো এই দিন। আমরা তখন প্রতিদিন বাড়ির ডাবের জল খেতাম। ইচ্ছে হলেই নারকেল খেতাম।কিছুদিন আগে আমার allergy test হলে জানতে পারলাম আমার নারকেলে নাকি allergy , নারকেল খেতাম আগে এতো কই কিছু তো অসুবিধে কখনও বুঝতে পারি নি। আত্মীয়- স্বজন, পাড়া- প্রতিবেশীদের মা এইসময় বাড়ির গাছের নারকেল দিত। তবে আমাদের পাড়ায় তখন অধিকাংশ বাড়িতেই নারকেল গাছ ছিল। নারকেল গাছ কাটানোর দিন খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার মন খুশিতে পূর্ণ হতো, কারণ আমাদের বাড়িটা তখন খুব খোলামেলা লাগতো। পুজো এসে গেছে এই অনুভূতিটা আরও গাঢ় হত যেন । উঠোনে দাঁড়িয়ে নীল আকাশ দেখতে পেতাম। এমনিতেই অনেক গাছপালা তার সাথে উঁচু নারকেল গাছের পাতার জন্য বাড়ি থেকে আকাশ দেখতে হতো পাতার ফাঁকে ফাঁকে অথবা ছাদে গিয়ে। বাড়ির উঠোনে একটা পেয়ারা গাছ আর একটা শিউলি ফুলের গাছ পাশাপাশি ছিল। বর্ষায় যেমন গাছ ভরে দারুণ পেয়ারা হতো তেমনই শরৎকাল জুড়ে আমাদের বাড়ির বাতাসে শিউলির গন্ধ ভাসত। ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠেই দেখতাম কেমন সাদা চাদর বিছিয়ে আছে শিউলি গাছের তলায়। পাড়ার অনেকেই সেই ভোরে ফুল কুড়োতে আসতো। কে কত তাড়াতাড়ি কত বেশি ফুল কুড়াতে পারে তার এক নীরব প্রতিযোগিতা চলতো যেন। সেই আনন্দের স্মৃতি আজও মনে আছে, হাতে লেগে আছে শিউলির সুগন্ধ। আর সাজি নিয়ে ফুল কুড়োনোর আনন্দময় দিনগুলো সময় কখন যে কুড়িয়ে নিয়ে গেছে জানতেই পারি নি। আজ সে বাড়ি আমার নেই, সেই গাছ হয়তো আছে কিন্তু আমার সেই সাজি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন