রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

সবাই মিলে সিনেমা হলে- ১৩ || কান্তিরঞ্জন দে || সাপ্তাহিক বিভাগ

সবাই মিলে সিনেমা হলে- ১৩
কান্তিরঞ্জন দে


 সিনেমা দেখাটাও একটা শিল্প
--------------------------------------

     চোখ থাকলেই সিনেমা দেখা যায় না । কান থাকলেই গান শোনা যায় না । তার জন্যে অন্যরকমের  চোখ কান লাগে। এ আবার কি ধরণের কথা ? হ্যাঁ মশাই , ঠিকই বলছি ।
      কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থাকলেই কি সাহিত্যের পাঠক হওয়া যায় ? তার জন্যে মানসিকতা চাই , আগ্রহ চাই , এবং সবচেয়ে বেশি চাই চর্চা । ইংরিজিতে যাকে বলে----অ্যাপটিচিউড্ , ইন্টারেস্ট অ্যাণ্ড প্র্যাক্সিস। একটু খোলশা করে বলুন তো মশাই ।

         অক্ষর জ্ঞান ছাড়া গল্প-কবিতা-উপন্যাস-প্রবন্ধ পড়া  অসম্ভব । কিন্তু , সিনেমা দেখতে গেলে শুধু দৃষ্টিশক্তি আর শ্রবণশক্তি থাকলেই চলে । ঠিক কিনা ? একদম ঠিক ।
         আজ্ঞে না । একদম ভুল । কিরকম ? সিনেমা দেখতে গেলে শুধু একজোড়া চোখকান হলেই চলে না । তারসঙ্গে লাগে মগজ ও হৃদয় । আহা, সে তো যে কোনও শিল্প উপভোগের ক্ষেত্রেই সত্যি । অন্যান্য শিল্প মাধ্যমের ক্ষেত্রে এ সত্যটা স্বীকৃতি পেয়ে গেলেও , সিনেমার  ক্ষেত্রে অনেকেই এখনও এই সত্যটা মানতে চান না । তারা মনে করেন ,  দেখবার জন্য দুটো চোখ ( একটা হলেও অসুবিধে নেই ), আর শোনবার জন্য দুটো কান , আর হাতে কিছু সময় থাকলেই সিনেমা দেখা যায়। আজকাল তো আবার সিনেমা দেখবার জন্য পকেটে হার্ড ক্যাশ থাকারও দরকার নেই ।

      আজ্ঞে না মশাই । সিনেমা ব্যাপারটা অত শস্তা নয় । সিনেমা দেখতে গেলে ওই ব্যাপারগুলো তো লাগেই । তার সঙ্গে লাগে বুদ্ধি আর আবেগ মেশানো চর্চা । এই চর্চা সিনেমার প্রতি তীব্র ভালোবাসা ছাড়া সম্ভবই নয় । কেন না , তীব্র ভালোবাসাই তীব্র আগ্রহের জন্ম দেয় । আর আগ্রহ থেকেই আসে চর্চার অভ্যেস ।

      সারা পৃথিবীতে সিনেমা একটা সিরিয়াস আর্ট ফর্ম-----এই সত্যটা আজ সারা পৃথিবীতেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে । সুতরাং তাকে সঠিকভাবে উপভোগ করতে গেলে এই শিল্পমাধ্যমটিকে   ভালোভাবে বোঝা দরকার । আর  বোঝা ব্যাপারটা ধারাবাহিক চর্চা ছাড়া সম্ভবই নয় । সিনেমা তৈরির কলাকৌশল , সিনেমা শিল্পের বিভিন্ন শাখাপ্রশাখা ও বিভাগ , দেশবিদেশে সিনেমা তৈরির নানারকমের রীতিনীতি এবং বিভিন্ন দশকে সিনেমা মাধ্যমে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন গুলো হয়েছে , সেগুলো সম্পর্কে একজন দর্শক যত বেশি ওয়াকিব হাল থাকবেন ,  সিনেমা দেখে তিনি  তত  বেশি  গভীর আনন্দ আবিষ্কার করতে পারবেন।

      যেমন ,  গানের তাল , লয় , ছন্দ , সুরের বিস্তার সম্বন্ধে যার যত বেশি  সক্রিয় চর্চা, তিনি যেমন নানা ধরণের গান শোনার মজাটা তত বেশি উপভোগ করতে পারেন----সিনেমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক  তাই ।

     সিনেমা দেখতে শেখানোর পদ্ধতি হিসেবে তাই চলচ্চিত্র বিদ্যা বা ফিল্ম স্টাডিজ বিষয়টার জন্ম । আমাদের পশ্চিমবঙ্গে  অ-সরকারি ভাবে  চলচ্চিত্র বিদ্যা চর্চার শুরু ১৯৭০-এর দশকে । এই বিষয়ের পথিকৃৎ ফাদার গাস্তঁ রোবের্জ সম্প্রতি ৮৫ বছর বয়সে কলকাতায় মারা গেলেন । সরকারি উদ্যোগে কলকাতায় এই বিদ্যার চর্চার শুরু হয় ১৯৮৭ সাল নাগাদ। আর পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কলেজে পাঠ্য বিষয় হিসেবে এটি চালু হতে থাকে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে ।

      যৌবনে সত্যজিৎ রায় যখন সিনেমা দেখতে যেতেন , তখন সঙ্গে পকেট ডায়রি আর পেন নিয়ে যেতেন । ছবির উল্লেখযোগ্য নানা খুঁটিনাটি তিনি তাঁর ডায়েরিতে নোট করে নিতেন ।

        একজন সিরিয়াস সিনেমা প্রেমী দর্শক থেকে সত্যজিৎ  রায় ভবিষ্যতে বিশ্ববিখ্যাত চিত্র পরিচালক হয়ে ওঠেন । সবাই হয়তো চিত্র পরিচালক হবেন না । কিন্তু সিনেমা যারা সত্যি সত্যি ভালোবাসেন , তারা জানেন---- সিনেমা দেখতে জানাও একটি সুন্দর শিল্প ।

       সিনেমা  কিভাবে ভালো করে দেখা যায় , সিনেমা দেখা ব্যাপারটা কখন কিভাবে শিল্প হয়ে ওঠে, এ নিয়ে পরের বারে আলাপ করার ইচ্ছে রইল ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...