নস্টালজিয়া ১৭
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
"আশ্বিনের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি / পূজার সময় এলো কাছে" এ শুধু নিছকই কবিতা ছিল না আমার ছোটবেলায়, এই কবিতার অনুভবের ব্যাপ্তি ছিল শৈশবের মন জুড়ে। এই বছরটা (২০২০)আমাদের সবার জীবনেই সমস্ত অভিজ্ঞতার বাইরে। তাই এবারের সঙ্গে কোনো সময়ের তুলনা করা যায় না। তখন আশ্বিন মাস এলেই আকাশের রং কেমন পাল্টে যেত,বাতাসে শিউলির সুবাস, কাশের বনে লাগত দোলা।আমার ছোটবেলার একটা স্বভাব ছিল কবিতায় প্রকৃতির যে রূপ বর্ণনা পড়তাম তার সঙ্গে বাস্তবকে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম। এটা শিশুকাল থেকে আপনা হতেই গড়ে উঠেছিল। "এসেছে শরৎ হিমের পরশ" পড়তে পড়তে "আমলকি বন কাঁপে যেন তার বুক করে দুরু দুরু " পড়লেই অপূর্ব অনুভবে রোমাঞ্চিত হতাম। আমলকি গাছ তখন দেখি নি , অথচ সেই গাছের পাতা খসে যাওয়ার সময় সমাগত জেনে আমার মন কী এক বিষণ্ণতায় ছেয়ে যেত যেন।
এই আশ্বিনে মনে পড়ে ঘাসের বনে, গাছের পাতায় খুব ফড়িং এর ওড়াউড়ি হত। তখন নানা রঙের প্রজাপতিও দেখতাম ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াতে। আগে ই বলেছি আমাদের বাড়িতে অনেক ফুলগাছ ছিল। তাই হয়ত প্রজাপতি আসত সেই সব ফুলের মধু পান করতে ।আমার ছোটবেলায় ফড়িং ধরার নেশা ছিল। তাই বলে কখনই তাদের ধরে ডানা ছিঁড়ে ফেলতাম না। পুজোর আগে এ এক আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। তখন আমাদের এ এক খেলা ছিল। চারিদিকে পুজো পুজো ভাব জাগলে মনেও লাগত খুশির ছোঁয়া। আমরা তখন জানতাম কোথায় বেশি ফড়িং ওড়ে। আমাদের বাড়ির কাছে ফাক্কু নবাবের একটা মস্ত বাগান ছিল। সেখানে আম, জাম কাঁঠাল, ফলসা এসব অনেক বড় বড় গাছ ছিল। সেখানে ঘাসের জমিতে অনেক ফড়িং উড়ত। আমরা ছেলে মেয়ে অনেকে মিলে সেখানে ফড়িং ধরার খেলায় মাততাম। ফড়িং ধরে তাদের কচি ঘাস খাওয়াতাম।খেলি হলে আবার তাদের উড়িয়ে দিতাম । এই সময়ে আমরা ঘুড়িও ওড়াতাম খুব। আমরা খোলা ছাদে ঘুড়ি ওড়াতাম বলে মা ঠাকুমার কাছে বকাও খেতাম । আমাদের বাড়িতে নারকেল গাছ থাকায় ঘুড়ি ওড়ানোর অসুবিধা হত। তাই ঘুড়ি লাটাই নিয়ে চলে যেতাম প্রতিবেশী বন্ধু তেওয়ারিদের বাগানে। তবে সত্যি বলতে কি আমার এসবের আয়োজনটাই ছিল বেশি, আমার ঘুড়ি বেশি উঁচুতে উড়ত না। আমার ঘুড়ি লাটাই অন্যরা নিয়ে ওড়াতো আর আমি ঘাসের জমিতে বসে দূর আকাশে রং বেরং এর ঘুড়ির ওড়া দেখে মুক্তির আনন্দ উপভোগ করতাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন