সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
৯৯.
কবিতাপাক্ষিক প্রকাশনী-র একটি বই -এর নাম :
' আমাদের গৌরাঙ্গ মিত্র '।ওই গ্রন্থটির জন্য আমি লিখেছিলাম :
' আমরা প্রকাশ করছি ' আমাদের গৌরাঙ্গ মিত্র ' মলাটনামের একটি বই। আমি পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাস রাখি। শুধু বিশ্বাস করে বসে থাকি না। সেই বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ঘোষণা করি : এখন আমাদের পরিবারের বাইরে থেকে আর মহৎ কবিতা লেখা সম্ভব নয়। মহৎ কবিতা লিখতে গেলে আমাদের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত থাকাটা জরুরি ।'
এই ঘোষণা করতে বুকের পাটা লাগে। আমার সেটা আছে। কারণ আমাদের পরিবার কবিতার স্থিতাবস্থায় বিশ্বাস করে না। আমরা কবিতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
এখন এসব কথা থাক। এখন কেবলই গৌরাঙ্গকথা।
গৌরাঙ্গ মিত্র কোনো এক দিবসে মনের হরষে লিখেছিল :
' এক লাইন কথা আর তিন লাইন নীরবতা দিয়ে
আমার নতুন কবিতার খসড়া তৈরি হবে '
খুবই মূল্যবান কথা। এরকম বাণী-র জন্য চিরকাল অপেক্ষা করে বসে থাকা যায়।
আমি একটা ফর্মুলা-র কথা দীর্ঘকাল বলে আসছি।তা হল : দেখা -শোনা - জানার সঙ্গে নাদেখা- নাশোনা- নাজানাকে নির্দিষ্ট অনুপাতে মেশাতে হবে। আমি মিশ্রণের অনুপাতটা বলতে পারিনি। জানতাম না বলেই। গৌরাঙ্গ মিত্র আমার অনুজ , আমার প্রিয়জন সে জেনে গেছে অনুপাতটি :
১ লাইন কথা + ৩ লাইন নীরবতা = ১ টি কবিতার খসড়া। অর্থাৎ ফর্মুলাটা হল 1 : 3 .
একভাগ জানাশোনাদেখা-র সঙ্গে তিনভাগ নাজানানাশোনানাদেখা-কে মেলাতে হবে।
যাঁরা কবিতা লেখেন তাঁরা গৌরাঙ্গ মিত্র নির্দেশিত অনুপাতের সূত্রটি কাজে লাগাতে পারেন। আমি যোগ করলাম : বিফলে মূল্য ফেরত !
গৌরাঙ্গ মিত্র-র কয়েকটি সফেদ শব্দসমষ্টি শোনা যাক :
১॥ এসো সরলরেখার সঙ্গে ভাব-বিনিময় করি ,
২॥আর তখনো শরীরের রসায়ন জুড়ে লবণপোকারা
৩॥ছুটে যাই মৌনব্রতী জঙ্গলের কাছে ,
৪॥ মানুষের থেকে গাছেরা বেশি স্বপ্নপ্রিয় ,
৫॥ আমার কাঁধে ডানাওয়ালা পাখি , মাথার ভেতর
অশ্রুনদী , দৃষ্টির ভেতর রং পেনসিলে আঁকা স্বপ্ন।
এইগুলি ব্যাখ্যা করার জন্য এই লেখার উপস্থাপনা নয় , এই লেখার মুখ্য উদ্দেশ্য হল : পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। শুধুমাত্র জানিয়ে রাখতে চাই আধুনিক কালখণ্ডের কবিতায় এগুলি অজানা ছিল। এখানেই কবিতার ইন্দ্রজাল , কবিতার ম্যাজিক এবং কবিতার নতুন মানচিত্র।
কবিতা এবং অণুকবিতার মধ্যে কোনো বিরোধ দেখি না আমি । আর ছোটো কবিতা বা অণুকবিতার আলোচনায় গৌরাঙ্গ-কে অবহেলা করার মতো একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি গৌরাঙ্গ মিত্র -র মাত্র ৫ টি উদাহরণ দিচ্ছি। বিচার করবেন আপনারা।
১. পাতাল
কোনো ভূগর্ভ- রেল আজও / পাতালে পৌঁছোতে পারেনি/ পাতালে পৌঁছোতে পারে, একমাত্র সীতা।
২.প্রজাপতি
মৃতদেহের উপরে, ছড়ানো ফুলের দিকে/ প্রজাপতিরা
কোনোদিন উড়ে যায় না।
৩.সিঁড়ি ভাঙা অঙ্কের সিঁড়ির উপরে/ যে প্রত্নকথা জেগে আছে তা শুনতে পায় / কেবলমাত্র হৃৎপিণ্ডঅলা গাছ।
৪ .আকাশ
আকাশের নিজস্ব এক বর্ণমালা আছে / বর্ণমালার নাম নক্ষত্রপুঞ্জ।
৫. ভাষা
গাছেদের ভাষা শিখে নাও আগে/ তারপর কোরো জঙ্গলসাফারি।
এই কবিতাগুলি প্রবাদে পরিণত হবে অচিরেই, সেই বিশ্বাস আমার আছে। আর সেই বিশ্বাসের সঙ্গে প্রবাদের মিশ্রণ ঘটিয়ে গৌরাঙ্গ-র ' আধখানা প্রবাদ '
থেকে গুটিকয় প্রবাদ তুলে ধরছি :
১. জলের সব ঢেউ ঘটমান বর্তমানের।
২. পিঁপড়েরা ঘুমিয়ে থাকে নাতিশীতোষ্ণ শব্দের ভিতর
৩.ডাহুকপাখির সঙ্গে ইছামতী নদীর কত গল্প হয়।
৪.মাতৃভাষা জানা তোমার ছায়াটিও হারিয়ে গেছে।।আমার উদ্ধৃতিগুলি -কে কি আধখানা প্রবাদ মনে হচ্ছে ? আমার কিন্তু আধখানা নয় , একটা গোটা প্রবাদ মনে হচ্ছে।
চলতেই থাকবে গৌরাঙ্গ মিত্র-র কবিতাকথা। কিন্তু কবিতার পাশাপাশি গৌরাঙ্গ-র ভ্রমণকথাও একই রকম পাঠকপ্রিয়।
গৌরাঙ্গ -র হিমালয় বা অন্যত্র ভ্রমণের বইগুলি শুধুমাত্র গাইডবই নয়, প্রকৃত ভ্রমণসাহিত্য এগুলি।এই সুযোগে বই-এর নামগুলি জানিয়ে রাখছি :
কুমায়ুন , জানা-অজানা / মধ্যপ্রদেশ: পাঁচমারি, কানহা /রূপলাবণ্যের কাশ্মীর / সিকিম সিকোয়েন্স/ রাজভূমি রাজস্থান / চোখের আলোয় লেহ লাদাখ।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা লিখেছে গৌরাঙ্গ মিত্র, 'রবীন্দ্রসরণি ', এখানে গৌরাঙ্গ-র ভ্রমণসঙ্গী হলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বা রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণপথটিকে একাত্মে অনুসরণ করেছে গৌরাঙ্গ মিত্র। এটাও খুবই উল্লেখযোগ্য কাজ
প্রভাত চৌধুরী
৯৯.
কবিতাপাক্ষিক প্রকাশনী-র একটি বই -এর নাম :
' আমাদের গৌরাঙ্গ মিত্র '।ওই গ্রন্থটির জন্য আমি লিখেছিলাম :
' আমরা প্রকাশ করছি ' আমাদের গৌরাঙ্গ মিত্র ' মলাটনামের একটি বই। আমি পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাস রাখি। শুধু বিশ্বাস করে বসে থাকি না। সেই বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ঘোষণা করি : এখন আমাদের পরিবারের বাইরে থেকে আর মহৎ কবিতা লেখা সম্ভব নয়। মহৎ কবিতা লিখতে গেলে আমাদের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত থাকাটা জরুরি ।'
এই ঘোষণা করতে বুকের পাটা লাগে। আমার সেটা আছে। কারণ আমাদের পরিবার কবিতার স্থিতাবস্থায় বিশ্বাস করে না। আমরা কবিতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
এখন এসব কথা থাক। এখন কেবলই গৌরাঙ্গকথা।
গৌরাঙ্গ মিত্র কোনো এক দিবসে মনের হরষে লিখেছিল :
' এক লাইন কথা আর তিন লাইন নীরবতা দিয়ে
আমার নতুন কবিতার খসড়া তৈরি হবে '
খুবই মূল্যবান কথা। এরকম বাণী-র জন্য চিরকাল অপেক্ষা করে বসে থাকা যায়।
আমি একটা ফর্মুলা-র কথা দীর্ঘকাল বলে আসছি।তা হল : দেখা -শোনা - জানার সঙ্গে নাদেখা- নাশোনা- নাজানাকে নির্দিষ্ট অনুপাতে মেশাতে হবে। আমি মিশ্রণের অনুপাতটা বলতে পারিনি। জানতাম না বলেই। গৌরাঙ্গ মিত্র আমার অনুজ , আমার প্রিয়জন সে জেনে গেছে অনুপাতটি :
১ লাইন কথা + ৩ লাইন নীরবতা = ১ টি কবিতার খসড়া। অর্থাৎ ফর্মুলাটা হল 1 : 3 .
একভাগ জানাশোনাদেখা-র সঙ্গে তিনভাগ নাজানানাশোনানাদেখা-কে মেলাতে হবে।
যাঁরা কবিতা লেখেন তাঁরা গৌরাঙ্গ মিত্র নির্দেশিত অনুপাতের সূত্রটি কাজে লাগাতে পারেন। আমি যোগ করলাম : বিফলে মূল্য ফেরত !
গৌরাঙ্গ মিত্র-র কয়েকটি সফেদ শব্দসমষ্টি শোনা যাক :
১॥ এসো সরলরেখার সঙ্গে ভাব-বিনিময় করি ,
২॥আর তখনো শরীরের রসায়ন জুড়ে লবণপোকারা
৩॥ছুটে যাই মৌনব্রতী জঙ্গলের কাছে ,
৪॥ মানুষের থেকে গাছেরা বেশি স্বপ্নপ্রিয় ,
৫॥ আমার কাঁধে ডানাওয়ালা পাখি , মাথার ভেতর
অশ্রুনদী , দৃষ্টির ভেতর রং পেনসিলে আঁকা স্বপ্ন।
এইগুলি ব্যাখ্যা করার জন্য এই লেখার উপস্থাপনা নয় , এই লেখার মুখ্য উদ্দেশ্য হল : পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। শুধুমাত্র জানিয়ে রাখতে চাই আধুনিক কালখণ্ডের কবিতায় এগুলি অজানা ছিল। এখানেই কবিতার ইন্দ্রজাল , কবিতার ম্যাজিক এবং কবিতার নতুন মানচিত্র।
কবিতা এবং অণুকবিতার মধ্যে কোনো বিরোধ দেখি না আমি । আর ছোটো কবিতা বা অণুকবিতার আলোচনায় গৌরাঙ্গ-কে অবহেলা করার মতো একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি গৌরাঙ্গ মিত্র -র মাত্র ৫ টি উদাহরণ দিচ্ছি। বিচার করবেন আপনারা।
১. পাতাল
কোনো ভূগর্ভ- রেল আজও / পাতালে পৌঁছোতে পারেনি/ পাতালে পৌঁছোতে পারে, একমাত্র সীতা।
২.প্রজাপতি
মৃতদেহের উপরে, ছড়ানো ফুলের দিকে/ প্রজাপতিরা
কোনোদিন উড়ে যায় না।
৩.সিঁড়ি ভাঙা অঙ্কের সিঁড়ির উপরে/ যে প্রত্নকথা জেগে আছে তা শুনতে পায় / কেবলমাত্র হৃৎপিণ্ডঅলা গাছ।
৪ .আকাশ
আকাশের নিজস্ব এক বর্ণমালা আছে / বর্ণমালার নাম নক্ষত্রপুঞ্জ।
৫. ভাষা
গাছেদের ভাষা শিখে নাও আগে/ তারপর কোরো জঙ্গলসাফারি।
এই কবিতাগুলি প্রবাদে পরিণত হবে অচিরেই, সেই বিশ্বাস আমার আছে। আর সেই বিশ্বাসের সঙ্গে প্রবাদের মিশ্রণ ঘটিয়ে গৌরাঙ্গ-র ' আধখানা প্রবাদ '
থেকে গুটিকয় প্রবাদ তুলে ধরছি :
১. জলের সব ঢেউ ঘটমান বর্তমানের।
২. পিঁপড়েরা ঘুমিয়ে থাকে নাতিশীতোষ্ণ শব্দের ভিতর
৩.ডাহুকপাখির সঙ্গে ইছামতী নদীর কত গল্প হয়।
৪.মাতৃভাষা জানা তোমার ছায়াটিও হারিয়ে গেছে।।আমার উদ্ধৃতিগুলি -কে কি আধখানা প্রবাদ মনে হচ্ছে ? আমার কিন্তু আধখানা নয় , একটা গোটা প্রবাদ মনে হচ্ছে।
চলতেই থাকবে গৌরাঙ্গ মিত্র-র কবিতাকথা। কিন্তু কবিতার পাশাপাশি গৌরাঙ্গ-র ভ্রমণকথাও একই রকম পাঠকপ্রিয়।
গৌরাঙ্গ -র হিমালয় বা অন্যত্র ভ্রমণের বইগুলি শুধুমাত্র গাইডবই নয়, প্রকৃত ভ্রমণসাহিত্য এগুলি।এই সুযোগে বই-এর নামগুলি জানিয়ে রাখছি :
কুমায়ুন , জানা-অজানা / মধ্যপ্রদেশ: পাঁচমারি, কানহা /রূপলাবণ্যের কাশ্মীর / সিকিম সিকোয়েন্স/ রাজভূমি রাজস্থান / চোখের আলোয় লেহ লাদাখ।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা লিখেছে গৌরাঙ্গ মিত্র, 'রবীন্দ্রসরণি ', এখানে গৌরাঙ্গ-র ভ্রমণসঙ্গী হলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বা রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণপথটিকে একাত্মে অনুসরণ করেছে গৌরাঙ্গ মিত্র। এটাও খুবই উল্লেখযোগ্য কাজ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন