সবাই মিলে সিনেমা হলে (৯)
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন
ও
বাংলা সিনেমা
সিনেমা তো মানুষের কাছে পৌঁছনোর শক্তিশালী উপায় । কিন্তু , সে কি সময়ের হাত ধরে চলে ? এর উত্তর একইসঙ্গে হ্যাঁ এবং না ।
সিনেমা একইসঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্য । সিনেমা বানাতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা লাগে । তাই সে অধিকাংশ সময়ই মানুষকে খুশি রাখতেই ব্যস্ত থাকে । মানুষকে সচেতন করার কথা অনেকসময়ই ভুলে যায়।
এই যেমন , ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন । এ ব্যাপারে , ভারতীয় সিনেমার কথা ছেড়েই দিচ্ছি । বাংলা সিনেমার ভূমিকা কি ? উহুঁ, বলবার মতো কিছু নয় ।
এই প্রসঙ্গটা কেন উঠল, বলি । উনিশশো ৪০-৫০ এর দশকে , ভারতে সিনেমা যখন গরীব বড়লোক নির্বিশেষে সব মানুষকে মাতিয়ে তুলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে , তখন একদল সমাজ সচেতন শিল্পী এই প্রশ্ন তুললেন যে , শিল্পের দায় সমাজের কাছে ? না শুধুই বিনোদনের কাছে ? বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী , গণনাট্য পন্থী শিল্পীরাই মূলত প্রশ্নটা তুললেন । কিন্তু তারাও গল্প-কবিতা - উপন্যাস - গান নাটকে সমাজ সচেতনতার পক্ষে উচ্চকণ্ঠ হয়েও সিনেমা প্রসঙ্গে প্রায় নীরব রইলেন । এর কারণ সম্ভবত এই যে , সিনেমা তৈরি জিনিসটাই বড়লোকি ব্যাপার । আমাদের কাজ গরীব-গুরবো , খেটে খাওয়া মানুষদের নিয়ে । সুতরাং , এই নিয়ে মাথা ঘামিয়ে আর কি হবে ?
উনিশশো ২০-৩০-৪০এর দশকে এ দেশে ব্রিটিশ বিরোধী জনজোয়ার যখন তুঙ্গে , তখন বাংলা সিনেমায় কি সেই আন্দোলনের কোনও প্রতিফলন ছিল ? ইতিহাস বলছে --- ছিল না । প্রযোজক- পরিচালকেরা তখন দর্শকদের শুধু বিনোদন দিয়ে পয়সা কামাতেই ব্যস্ত ছিলেন । দেশের স্বাধীনতার কাছে তাদের কোনও দায়বদ্ধতা ছিল না ।
এর কারণ কি ? সাহসের অভাব ? নাকি , পয়সার অভাব ? ইতিহাস বলছে ----প্রথমটা । কেন না , জাঁকজমকপূর্ণ ধর্মমূলক- পৌরাণিক গল্প , রাজা- রাজড়ার গল্প , সংসারের গণ্ডগোলের গল্প কিংবা নারী-পুরুষের প্রেম বিরহের বড় বড় বাজেটের গল্প বলতে , কই ? তাদের তো পয়সার অভাব হয় নি । পর্দায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের গল্প বললে ইংরেজ সরকার চটে যাবে যে । মুনাফা লোটবার ক্ষতি হবে না ?
১৯৪২ সালে " ভারত ছাড়ো " আন্দোলন শুরু হবার দু বছর পরে , ১৯৪৪ সালে বিমল রায় পরিচালিত " উদয়ের পথে " ছবিটি মুক্তি পায় এবং বিপুল বাণিজ্যিক সাফল্য পায় । ছবিটি সমাজসচেতন অবশ্যই । কিন্তু সরাসরি তাকে সরকার বিরোধী ছবি বলা চলে না ।
১৯৪৮ এবং ১৯৫১ সালে হেমেন গুপ্ত মশাই নিশ্চিন্তে " ভুলি নাই " এবং " ৪২ " নামে স্বাধীনতা আন্দোলন নির্ভর দুটি ছবি বানিয়েছিলেন । নিশ্চিন্তে , কারণ দেশ ততদিনে স্বাধীন হয়ে গেছে যে। ব্রিটিশ বিরোধিতা ততদিনে সিনেমায় বাণিজ্যিক সফলতা আনবার মশলায় পরিণত হয়ে গেছে । সদ্যস্বাধীন দেশে দুটি ছবিই ভালো চলেছিল । তারপরেও নানা সময়ে " চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন " ( লুণ্ঠন ? সাহেবরা বলত । আসলে তা দখল ) , " শহীদ ক্ষুদিরাম " , " শপথ নিলাম " এ রকম বেশ কিছু ব্রিটিশ সরকার বিরোধী সিনেমা তৈরি হয়েছিল বটে ,কিন্তু ততদিনে দেশ অনেকগুলো স্বাধীনতা দিবস পার করে ফেলেছে ।
তাই , ইতিহাসের খাতিরে এ কথা বলতে আমরা বাধ্য যে , বাংলায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সিনেমার মতো এত শক্তিশালী এই গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রায় শূন্য।
তাছাড়া , ৪০-এর দশক থেকে আজ পর্যন্ত পশ্চিমবাংলায় গ্রামজীবন এবং গরীব মানুষদের নিয়ে অনেক সমাজ সচেতন সিনেমা তৈরি হলেও , সেগুলো কোনদিনই ভারতীয় বা বাংলা সিনেমার মূলধারার স্বীকৃতি আদায় করতে পারে নি ।
কেন ? সে অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ । পরে কখনও আলোচনা করা যাবে ।
কিন্তু বিষয়টি আমাদের ভাবায় ।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন
ও
বাংলা সিনেমা
সিনেমা তো মানুষের কাছে পৌঁছনোর শক্তিশালী উপায় । কিন্তু , সে কি সময়ের হাত ধরে চলে ? এর উত্তর একইসঙ্গে হ্যাঁ এবং না ।
সিনেমা একইসঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্য । সিনেমা বানাতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা লাগে । তাই সে অধিকাংশ সময়ই মানুষকে খুশি রাখতেই ব্যস্ত থাকে । মানুষকে সচেতন করার কথা অনেকসময়ই ভুলে যায়।
এই যেমন , ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন । এ ব্যাপারে , ভারতীয় সিনেমার কথা ছেড়েই দিচ্ছি । বাংলা সিনেমার ভূমিকা কি ? উহুঁ, বলবার মতো কিছু নয় ।
এই প্রসঙ্গটা কেন উঠল, বলি । উনিশশো ৪০-৫০ এর দশকে , ভারতে সিনেমা যখন গরীব বড়লোক নির্বিশেষে সব মানুষকে মাতিয়ে তুলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে , তখন একদল সমাজ সচেতন শিল্পী এই প্রশ্ন তুললেন যে , শিল্পের দায় সমাজের কাছে ? না শুধুই বিনোদনের কাছে ? বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী , গণনাট্য পন্থী শিল্পীরাই মূলত প্রশ্নটা তুললেন । কিন্তু তারাও গল্প-কবিতা - উপন্যাস - গান নাটকে সমাজ সচেতনতার পক্ষে উচ্চকণ্ঠ হয়েও সিনেমা প্রসঙ্গে প্রায় নীরব রইলেন । এর কারণ সম্ভবত এই যে , সিনেমা তৈরি জিনিসটাই বড়লোকি ব্যাপার । আমাদের কাজ গরীব-গুরবো , খেটে খাওয়া মানুষদের নিয়ে । সুতরাং , এই নিয়ে মাথা ঘামিয়ে আর কি হবে ?
উনিশশো ২০-৩০-৪০এর দশকে এ দেশে ব্রিটিশ বিরোধী জনজোয়ার যখন তুঙ্গে , তখন বাংলা সিনেমায় কি সেই আন্দোলনের কোনও প্রতিফলন ছিল ? ইতিহাস বলছে --- ছিল না । প্রযোজক- পরিচালকেরা তখন দর্শকদের শুধু বিনোদন দিয়ে পয়সা কামাতেই ব্যস্ত ছিলেন । দেশের স্বাধীনতার কাছে তাদের কোনও দায়বদ্ধতা ছিল না ।
এর কারণ কি ? সাহসের অভাব ? নাকি , পয়সার অভাব ? ইতিহাস বলছে ----প্রথমটা । কেন না , জাঁকজমকপূর্ণ ধর্মমূলক- পৌরাণিক গল্প , রাজা- রাজড়ার গল্প , সংসারের গণ্ডগোলের গল্প কিংবা নারী-পুরুষের প্রেম বিরহের বড় বড় বাজেটের গল্প বলতে , কই ? তাদের তো পয়সার অভাব হয় নি । পর্দায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের গল্প বললে ইংরেজ সরকার চটে যাবে যে । মুনাফা লোটবার ক্ষতি হবে না ?
১৯৪২ সালে " ভারত ছাড়ো " আন্দোলন শুরু হবার দু বছর পরে , ১৯৪৪ সালে বিমল রায় পরিচালিত " উদয়ের পথে " ছবিটি মুক্তি পায় এবং বিপুল বাণিজ্যিক সাফল্য পায় । ছবিটি সমাজসচেতন অবশ্যই । কিন্তু সরাসরি তাকে সরকার বিরোধী ছবি বলা চলে না ।
১৯৪৮ এবং ১৯৫১ সালে হেমেন গুপ্ত মশাই নিশ্চিন্তে " ভুলি নাই " এবং " ৪২ " নামে স্বাধীনতা আন্দোলন নির্ভর দুটি ছবি বানিয়েছিলেন । নিশ্চিন্তে , কারণ দেশ ততদিনে স্বাধীন হয়ে গেছে যে। ব্রিটিশ বিরোধিতা ততদিনে সিনেমায় বাণিজ্যিক সফলতা আনবার মশলায় পরিণত হয়ে গেছে । সদ্যস্বাধীন দেশে দুটি ছবিই ভালো চলেছিল । তারপরেও নানা সময়ে " চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন " ( লুণ্ঠন ? সাহেবরা বলত । আসলে তা দখল ) , " শহীদ ক্ষুদিরাম " , " শপথ নিলাম " এ রকম বেশ কিছু ব্রিটিশ সরকার বিরোধী সিনেমা তৈরি হয়েছিল বটে ,কিন্তু ততদিনে দেশ অনেকগুলো স্বাধীনতা দিবস পার করে ফেলেছে ।
তাই , ইতিহাসের খাতিরে এ কথা বলতে আমরা বাধ্য যে , বাংলায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সিনেমার মতো এত শক্তিশালী এই গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রায় শূন্য।
তাছাড়া , ৪০-এর দশক থেকে আজ পর্যন্ত পশ্চিমবাংলায় গ্রামজীবন এবং গরীব মানুষদের নিয়ে অনেক সমাজ সচেতন সিনেমা তৈরি হলেও , সেগুলো কোনদিনই ভারতীয় বা বাংলা সিনেমার মূলধারার স্বীকৃতি আদায় করতে পারে নি ।
কেন ? সে অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ । পরে কখনও আলোচনা করা যাবে ।
কিন্তু বিষয়টি আমাদের ভাবায় ।
সুন্দর তথ্যপূর্ণ লেখা
উত্তরমুছুনসুন্দর তথ্যবহুল লেখা
উত্তরমুছুন