সৌমিত্র রায় -এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
১০১.
দৈনিক বাংলা অন লাইন দৈনিকের কর্ণধার সৌমিত্র রায় -কে ধন্যবাদ। একটি অ-বাণিজ্যিক অন লাইন পত্রিকায় আমার নিজস্ব মতামত প্রকাশের সুযোগ দেবার জন্য। আমি চিরকাল ছাঁচের বাইরের লেখা লেখার চেষ্টা করেছি। অর্থাৎ ছাঁচ থেকে বেরিয়ে এসে লিখেছি। মূলত আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য লিখেছি। সেই লেখাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রকাশ করে চলেছে। আমার কৃতজ্ঞতা জানানো কর্তব্য , জানালাম।
এখন দশঘরা চ্যাপ্টার । এই চ্যাপ্টারে একজন ডাক্তারবাবু আছেন , ড: গদাধর দাস। যিনি পেশাতে চিকিৎসক হতে পারেন , কিন্তু তিনি ছিলেন মূলত কবিতার কারিগর।বা কবি তৈরির করিগর।যাঁরা বিশ্বাস করেন কবি তৈরি করি যায় না , আমি তাঁদের সঙ্গে সহমত হতে পারলাম না। গদাধর দাস-এর প্রত্যক্ষ গাইডেন্সে একঝাঁক কবি উঠে এসেছিল দশঘরা নামক এক দূরবর্তী গ্রাম থেকে। দশঘরা-র দু-দিকে দুটি ট্রেনলাইন। একদিকে তারকেশ্বর অন্যদিকে গুড়াপ ।ট্রেন থেকে নেমে গাড়ি। দশঘরা-য় জমিদারি ছিল রায়-দের। তাঁদের নাচঘরেই অনুষ্ঠান হয়েছে। নাচঘরের বাইরে বেশ অনেকগুলি সিমেন্টের পরি ছিল। কয়েকটি ক্ষত , কয়েকটি অক্ষত। এখনো আমি মাঝেমধ্যে এই পরিদের সঙ্গ পাই।
আফজল আলি-র বাড়ি গঙ্গেশনগর , দশঘরা থেকে সাইকেল-পথ।আমি মোটরবাইকে গেছি বেশ কয়েকবার। আর আফজলের বউ ফরিদা আমার পছন্দ মতো বিরিয়ানির রন্ধনপদ্ধতিতে পটু।।আর কী চাই। এবার কবিতাতে আসা যাক।
কবিতাপাক্ষিক-এ এক সময় শব্দছক শুরু হয়েছিল।প্রথম উত্তরদাতার জন্য পুরস্কার ঘোষিত ছিল। প্রতিবারই পুরস্কার পেতেন ড: গদাধর দাস। চিঠিপত্র এবং ফোন , এই ছিল যোগাযোগের মাধ্যম।
জানা গেল ড : দাসের চেম্বার শেষ হবার পর আড্ডা বসে। কবিদের আড্ডা ।ওই আড্ডায় যারা যোগ দ্যায় তারা নবীন। নামগুলি জেনে রাখা যাক :
আফজল আলি , সেখ আজেহার , জুলফিকার এ খলিফা ,বিজন দাস। আর তরুণ সংগীতশিল্পী নবকুমার দাসেরও সন্ধান পেয়েছিলাম এই দশঘরা সূত্রেই। এর মধ্যে আফজলের সঙ্গে যোগাযোগ বেশি হতে থাকে। এক সময় কবিতাপাক্ষিক-এর এডিটোরিয়াল টিমে ছিল আফজল। দীর্ঘ সময়ের জন্য। সেসব কথা আফজল প্রসঙ্গে আসবে। আজ ডাঃ গদাধর দাস-কথার অর্থ হল গদাধর দাসের কবিতার কথা।
কিছু কবিতার পঙ্ ক্তি পড়ে নেওয়া যাক :
১॥ সকালবেলার ভাষা যেমন ধীরে ধীরে পাল্টে যায় বিকালে তেমনি বিকালের / ভাষা সেভাবেই পাল্টে যায় সন্ধ্যায়।
২ ॥ গোলাপগন্ধের জ্যামিতি নিয়ে একটু এদিক ওদিক করলেই আলোকে/ পুলকে ভেসে ওঠে এক স্বপ্নময় রাত্রি , যেখানে শব্দের বুকে লুকোনো থাকে/ নীল রং।
৩ ॥ পৃথিবীর আগামী জন্মদিনের খুব একটা দেরি নেই।
৪ ॥ ফলিতবিদ্যার/ জন্য তোমাকে তুলে রাখলাম দশবছর পরের এক শীতের / ঝুলবারান্দায়।
৫॥ আহিরভৈরোঁ দিয়ে জলশরীরের বৃত্তাংশ আঁকবার কিছু আগেই / চিরকালীন যোগিয়া তার নিজস্ব কণ্ঠে কোমল ধৈবত উচ্চারণের/ মধ্যে শুনিয়েছিল বিশুদ্ধ রাগ বিস্তারের প্রতিশ্রুতি
৬॥ শতাব্দের পিছনে আয়না ধরলে তোমার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার একটু রদবদল/হয়ে যাবে। দেখা যাবে সামনে হাওয়ানিশান, অথচ জন্মান্ধ পৃথিবী খুঁজে পায় না/ অতিজাগতিক প্রশ্নকূটের চালচিত্র ।
এই কবিতাগুলির রচনাকাল 2000- 2001।অর্থাৎ কুড়ি বছর আগের। এখনো আলোচনায় আসছে। যতদিন যাবে , তত বেশি বেশি করে আলোচনা উঠে আসবে । বা আলোচিত হবে ।
ডা : গদাধর দাসের কথা মনে পড়লে অবাক হয়ে যাই । বয়সে আমার থেকেও কিছুটা বড়ো। বসবাস করেন কলকাতা থেকে বেশ অনেকটা দূরে। তাঁর চেতনার মধ্যে কীভাবে গোলাপগন্ধের যে একটি নিজস্ব জ্যামিতি আছে ,সেই আপডেট কীভাবে এসে পৌঁছলো , সেটা এখনো আবিষ্কার করতে পারিনি। এটাও জানতে পারিনি কোন মন্ত্রবলে আফজল , আজেহার বা জুলফিকরের মতো নবীন প্রজন্মকে দীক্ষিত করে তুলেছিলেন বহুরৈখিক কবিতার দিকে আকৃষ্ট করতে।
ভাবছি একটি প্রকল্প কবিতাপাক্ষিক দপ্তরে একটা ফাঁকা চেয়ার রাখা থাকবে , যা চিহ্নিত থাকবে ডা: গদাধর দাসের নামে।
প্রভাত চৌধুরী
১০১.
দৈনিক বাংলা অন লাইন দৈনিকের কর্ণধার সৌমিত্র রায় -কে ধন্যবাদ। একটি অ-বাণিজ্যিক অন লাইন পত্রিকায় আমার নিজস্ব মতামত প্রকাশের সুযোগ দেবার জন্য। আমি চিরকাল ছাঁচের বাইরের লেখা লেখার চেষ্টা করেছি। অর্থাৎ ছাঁচ থেকে বেরিয়ে এসে লিখেছি। মূলত আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য লিখেছি। সেই লেখাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রকাশ করে চলেছে। আমার কৃতজ্ঞতা জানানো কর্তব্য , জানালাম।
এখন দশঘরা চ্যাপ্টার । এই চ্যাপ্টারে একজন ডাক্তারবাবু আছেন , ড: গদাধর দাস। যিনি পেশাতে চিকিৎসক হতে পারেন , কিন্তু তিনি ছিলেন মূলত কবিতার কারিগর।বা কবি তৈরির করিগর।যাঁরা বিশ্বাস করেন কবি তৈরি করি যায় না , আমি তাঁদের সঙ্গে সহমত হতে পারলাম না। গদাধর দাস-এর প্রত্যক্ষ গাইডেন্সে একঝাঁক কবি উঠে এসেছিল দশঘরা নামক এক দূরবর্তী গ্রাম থেকে। দশঘরা-র দু-দিকে দুটি ট্রেনলাইন। একদিকে তারকেশ্বর অন্যদিকে গুড়াপ ।ট্রেন থেকে নেমে গাড়ি। দশঘরা-য় জমিদারি ছিল রায়-দের। তাঁদের নাচঘরেই অনুষ্ঠান হয়েছে। নাচঘরের বাইরে বেশ অনেকগুলি সিমেন্টের পরি ছিল। কয়েকটি ক্ষত , কয়েকটি অক্ষত। এখনো আমি মাঝেমধ্যে এই পরিদের সঙ্গ পাই।
আফজল আলি-র বাড়ি গঙ্গেশনগর , দশঘরা থেকে সাইকেল-পথ।আমি মোটরবাইকে গেছি বেশ কয়েকবার। আর আফজলের বউ ফরিদা আমার পছন্দ মতো বিরিয়ানির রন্ধনপদ্ধতিতে পটু।।আর কী চাই। এবার কবিতাতে আসা যাক।
কবিতাপাক্ষিক-এ এক সময় শব্দছক শুরু হয়েছিল।প্রথম উত্তরদাতার জন্য পুরস্কার ঘোষিত ছিল। প্রতিবারই পুরস্কার পেতেন ড: গদাধর দাস। চিঠিপত্র এবং ফোন , এই ছিল যোগাযোগের মাধ্যম।
জানা গেল ড : দাসের চেম্বার শেষ হবার পর আড্ডা বসে। কবিদের আড্ডা ।ওই আড্ডায় যারা যোগ দ্যায় তারা নবীন। নামগুলি জেনে রাখা যাক :
আফজল আলি , সেখ আজেহার , জুলফিকার এ খলিফা ,বিজন দাস। আর তরুণ সংগীতশিল্পী নবকুমার দাসেরও সন্ধান পেয়েছিলাম এই দশঘরা সূত্রেই। এর মধ্যে আফজলের সঙ্গে যোগাযোগ বেশি হতে থাকে। এক সময় কবিতাপাক্ষিক-এর এডিটোরিয়াল টিমে ছিল আফজল। দীর্ঘ সময়ের জন্য। সেসব কথা আফজল প্রসঙ্গে আসবে। আজ ডাঃ গদাধর দাস-কথার অর্থ হল গদাধর দাসের কবিতার কথা।
কিছু কবিতার পঙ্ ক্তি পড়ে নেওয়া যাক :
১॥ সকালবেলার ভাষা যেমন ধীরে ধীরে পাল্টে যায় বিকালে তেমনি বিকালের / ভাষা সেভাবেই পাল্টে যায় সন্ধ্যায়।
২ ॥ গোলাপগন্ধের জ্যামিতি নিয়ে একটু এদিক ওদিক করলেই আলোকে/ পুলকে ভেসে ওঠে এক স্বপ্নময় রাত্রি , যেখানে শব্দের বুকে লুকোনো থাকে/ নীল রং।
৩ ॥ পৃথিবীর আগামী জন্মদিনের খুব একটা দেরি নেই।
৪ ॥ ফলিতবিদ্যার/ জন্য তোমাকে তুলে রাখলাম দশবছর পরের এক শীতের / ঝুলবারান্দায়।
৫॥ আহিরভৈরোঁ দিয়ে জলশরীরের বৃত্তাংশ আঁকবার কিছু আগেই / চিরকালীন যোগিয়া তার নিজস্ব কণ্ঠে কোমল ধৈবত উচ্চারণের/ মধ্যে শুনিয়েছিল বিশুদ্ধ রাগ বিস্তারের প্রতিশ্রুতি
৬॥ শতাব্দের পিছনে আয়না ধরলে তোমার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার একটু রদবদল/হয়ে যাবে। দেখা যাবে সামনে হাওয়ানিশান, অথচ জন্মান্ধ পৃথিবী খুঁজে পায় না/ অতিজাগতিক প্রশ্নকূটের চালচিত্র ।
এই কবিতাগুলির রচনাকাল 2000- 2001।অর্থাৎ কুড়ি বছর আগের। এখনো আলোচনায় আসছে। যতদিন যাবে , তত বেশি বেশি করে আলোচনা উঠে আসবে । বা আলোচিত হবে ।
ডা : গদাধর দাসের কথা মনে পড়লে অবাক হয়ে যাই । বয়সে আমার থেকেও কিছুটা বড়ো। বসবাস করেন কলকাতা থেকে বেশ অনেকটা দূরে। তাঁর চেতনার মধ্যে কীভাবে গোলাপগন্ধের যে একটি নিজস্ব জ্যামিতি আছে ,সেই আপডেট কীভাবে এসে পৌঁছলো , সেটা এখনো আবিষ্কার করতে পারিনি। এটাও জানতে পারিনি কোন মন্ত্রবলে আফজল , আজেহার বা জুলফিকরের মতো নবীন প্রজন্মকে দীক্ষিত করে তুলেছিলেন বহুরৈখিক কবিতার দিকে আকৃষ্ট করতে।
ভাবছি একটি প্রকল্প কবিতাপাক্ষিক দপ্তরে একটা ফাঁকা চেয়ার রাখা থাকবে , যা চিহ্নিত থাকবে ডা: গদাধর দাসের নামে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন