চিঠি
প্রশান্ত দে
শেষবারের মতো আবর্জনা ফেলে ডাম্পিং গ্ৰাউন্ড থেকে ফিরে গেল পৌরসভার গাড়িটা।ঐ গাড়িটার প্রায় পিছন পিছন আসছিল সুমনা।কিন্তু মাঝে যানজটে আটকে গিয়ে আর আসা হয়নি।যতটুকু রাস্তা এসেছে ততটুকুই বাতাসে উড়ে যাওয়া কাগজ,প্লাস্টিক নজর করে এসেছে- যদি উড়ে যায় চিঠিটা!
মাঝে মাঝে মা-য়ের প্রতি বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলেছে ,'কি দরকার ছিল সুটকেশটা পরিষ্কার করার!"
ডাম্পিং গ্ৰাউন্ডে পৌঁছে সুমনা দিশাহারা হয়ে গেছে।এত আবর্জনা!কোনটাইবা আজকের?
আজকের খুঁজতে গিয়ে দেখতে পেল,একজায়গায় একটু ধূঁয়া উঠছে।সেই জায়গাটায় আগে হাত দিয়ে খুঁজতে লাগল সুমনা।
সেই পথ দিয়েই সাইকেল চালিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছিল সুমনার কলেজের ইয়ারমেট দিলিপ।দিলিপ প্রথমে একটা চারচাকা গাড়ি ও এক চল্লিশ উর্ধ্ব মহিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল দূরথেকে।কাছে আসতেই একটু কৌতুহল নিয়ে তাকাতেই মহিলাটিকে চিনি চিনি মনে হল।কিন্তু যেভাবে হাত দিয়ে আবর্জনা ঘাটছে তাতে সুমনা বলে বিশ্বাস হল না।তবুও কাছে গিয়ে বলল,কি এমন খুঁজছেন?আপনাকে একটু সাহায্য করতে পারি?"
সুমনা খুঁজতে খুঁজতেই মুখ তুলে দিলিপের দিকে তাকাল ।এবং দিলিপের গালের বড়ো কালো তিলটাকে দেখেই চিনে নিয়ে বলল,'আপনি দিলিপ না?'
দিলিপও বলব বলব করে বলেই ফেলল,সুমনা'
দুই ইয়ারমেটের এতদিন পরে দেখা।সুমনা চিঠির দুঃচিন্তা একটূ ভুলে গেল।
দিলিপ বলল,"কি খুঁজছিলি
-না -কিছু না
কিছু তো একটা বটে,না হলে এমন উদগ্ৰীব হয়ে খুঁজছিলি কেন?'
সুমনা বলেই ফেলল।সৌমেনের হাতে লেখা শেষ চিঠিটার কথা।
দিলিপ অবাক হয়ে বলল,'তুই এখনো সৌমেন কে ভুলিসনি?
কি করে ভুলি বল?ওই আমার প্রথম ও শেষ।
সুমনার চোখ জলে ছল্ ছল্ করে উঠেছে দেখে আর কথা না বাড়িয়ে দিলিপও তার কাজে হাত লাগাল।
এই কাজের মধ্যেই দু-জনের কথা হচ্ছে।ভালো-মন্দ বাড়ির খবর।
-তোর মেয়ে এখন কিসে পড়ছে?
-চতুর্থ শ্রেনিতে ।ভীষন জলি।সারা ঘর একাই তোলপাড় করে।
তারপর একটু সময় নিয়ে দিলিপ বলল, সেদিন যদি তুই অ্যাবরসন না করাতিস আজ তোকে এমন চিঠির জন্য খুঁজে মরতে হত না।যে ছবিটা চিঠিতে ফুটে উঠতো তা সন্তানেও কম ছিল না।'
-"কি করব বল?তোরা তো সব জানিস।সৌমেন হঠাৎ নিরুদ্দেশ হল।কলকাতা যে গেল আর ফিরলই নাই।
তারপর সমাজ---"
এই খোঁজা খুঁজির মধ্যেই সুমনার হাতটা একটা বস্তায় লাগল।মনে হল বস্তাটা একটু নড়ে উঠল।সুমনা ভয়ে মা-গো বলে পিছিয়ে গেল।
কি-হলো?বলে দিলিপ সুমনার কাছে গেল।
এবং দেখতে পেল একটা বস্তা ।মুখটা বাঁধা।এবং নড়ছে।
দিলিপ ভয়ে ভয়ে বস্তাটাকে তুলে রাস্তায় রাখতেই একটা সদ্যজাত শিশুর কান্না শুনতে পেল।
দিলিপ বুকে সাহস নিয়ে ধীরে ধীরে বস্তার মুখটা খুলল।
দেখতে পেল, একটি ফুটফুটে শিশু।
সুমনা ভেবে পাচ্ছে না এই শিশুটির কি হবে।
দিলিপ বলল,তুই এককাজ কর কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।তুই একে ঘর নিয়ে গিয়ে নিজের মেয়ের মতো মানুষ কর'
সুমনা রাজি হয়ে গেল।
দিলিপ সুমনার কোলে শিশুটিকে তুলে দিয়ে বলল,জানবি চিঠিটা পেয়ে গেছি।
আর হ্যাঁ তোর মেয়ের নাম রাখবি ,চিঠি।
প্রশান্ত দে
শেষবারের মতো আবর্জনা ফেলে ডাম্পিং গ্ৰাউন্ড থেকে ফিরে গেল পৌরসভার গাড়িটা।ঐ গাড়িটার প্রায় পিছন পিছন আসছিল সুমনা।কিন্তু মাঝে যানজটে আটকে গিয়ে আর আসা হয়নি।যতটুকু রাস্তা এসেছে ততটুকুই বাতাসে উড়ে যাওয়া কাগজ,প্লাস্টিক নজর করে এসেছে- যদি উড়ে যায় চিঠিটা!
মাঝে মাঝে মা-য়ের প্রতি বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলেছে ,'কি দরকার ছিল সুটকেশটা পরিষ্কার করার!"
ডাম্পিং গ্ৰাউন্ডে পৌঁছে সুমনা দিশাহারা হয়ে গেছে।এত আবর্জনা!কোনটাইবা আজকের?
আজকের খুঁজতে গিয়ে দেখতে পেল,একজায়গায় একটু ধূঁয়া উঠছে।সেই জায়গাটায় আগে হাত দিয়ে খুঁজতে লাগল সুমনা।
সেই পথ দিয়েই সাইকেল চালিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছিল সুমনার কলেজের ইয়ারমেট দিলিপ।দিলিপ প্রথমে একটা চারচাকা গাড়ি ও এক চল্লিশ উর্ধ্ব মহিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল দূরথেকে।কাছে আসতেই একটু কৌতুহল নিয়ে তাকাতেই মহিলাটিকে চিনি চিনি মনে হল।কিন্তু যেভাবে হাত দিয়ে আবর্জনা ঘাটছে তাতে সুমনা বলে বিশ্বাস হল না।তবুও কাছে গিয়ে বলল,কি এমন খুঁজছেন?আপনাকে একটু সাহায্য করতে পারি?"
সুমনা খুঁজতে খুঁজতেই মুখ তুলে দিলিপের দিকে তাকাল ।এবং দিলিপের গালের বড়ো কালো তিলটাকে দেখেই চিনে নিয়ে বলল,'আপনি দিলিপ না?'
দিলিপও বলব বলব করে বলেই ফেলল,সুমনা'
দুই ইয়ারমেটের এতদিন পরে দেখা।সুমনা চিঠির দুঃচিন্তা একটূ ভুলে গেল।
দিলিপ বলল,"কি খুঁজছিলি
-না -কিছু না
কিছু তো একটা বটে,না হলে এমন উদগ্ৰীব হয়ে খুঁজছিলি কেন?'
সুমনা বলেই ফেলল।সৌমেনের হাতে লেখা শেষ চিঠিটার কথা।
দিলিপ অবাক হয়ে বলল,'তুই এখনো সৌমেন কে ভুলিসনি?
কি করে ভুলি বল?ওই আমার প্রথম ও শেষ।
সুমনার চোখ জলে ছল্ ছল্ করে উঠেছে দেখে আর কথা না বাড়িয়ে দিলিপও তার কাজে হাত লাগাল।
এই কাজের মধ্যেই দু-জনের কথা হচ্ছে।ভালো-মন্দ বাড়ির খবর।
-তোর মেয়ে এখন কিসে পড়ছে?
-চতুর্থ শ্রেনিতে ।ভীষন জলি।সারা ঘর একাই তোলপাড় করে।
তারপর একটু সময় নিয়ে দিলিপ বলল, সেদিন যদি তুই অ্যাবরসন না করাতিস আজ তোকে এমন চিঠির জন্য খুঁজে মরতে হত না।যে ছবিটা চিঠিতে ফুটে উঠতো তা সন্তানেও কম ছিল না।'
-"কি করব বল?তোরা তো সব জানিস।সৌমেন হঠাৎ নিরুদ্দেশ হল।কলকাতা যে গেল আর ফিরলই নাই।
তারপর সমাজ---"
এই খোঁজা খুঁজির মধ্যেই সুমনার হাতটা একটা বস্তায় লাগল।মনে হল বস্তাটা একটু নড়ে উঠল।সুমনা ভয়ে মা-গো বলে পিছিয়ে গেল।
কি-হলো?বলে দিলিপ সুমনার কাছে গেল।
এবং দেখতে পেল একটা বস্তা ।মুখটা বাঁধা।এবং নড়ছে।
দিলিপ ভয়ে ভয়ে বস্তাটাকে তুলে রাস্তায় রাখতেই একটা সদ্যজাত শিশুর কান্না শুনতে পেল।
দিলিপ বুকে সাহস নিয়ে ধীরে ধীরে বস্তার মুখটা খুলল।
দেখতে পেল, একটি ফুটফুটে শিশু।
সুমনা ভেবে পাচ্ছে না এই শিশুটির কি হবে।
দিলিপ বলল,তুই এককাজ কর কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।তুই একে ঘর নিয়ে গিয়ে নিজের মেয়ের মতো মানুষ কর'
সুমনা রাজি হয়ে গেল।
দিলিপ সুমনার কোলে শিশুটিকে তুলে দিয়ে বলল,জানবি চিঠিটা পেয়ে গেছি।
আর হ্যাঁ তোর মেয়ের নাম রাখবি ,চিঠি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন