সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
১০০.
আজ ১০০ তম পর্ব। আজ দৈনিক বাংলা-র জন্য বরাদ্দ করলাম। বাংলায় অনুবাদ করলে যা দাঁড়াবে , তা হল : আজ সৌমিত্র রায়।নরসিংহ লেন-কে অনেকে চেনেন সোমেন মিত্র-র জন্য। আমি চিনি সৌমিত্র রায় - এর জন্য।
প্রথমেই জানিয়ে রাখি সো এবং সৌ দুটি সুদূরবর্তী অক্ষরবন্ধ। দুজনের বিচরণক্ষেত্র ভিন্ন।
সৌমিত্র রায় -এর বাবা চাকরি সূত্রে কলকাতায় থাকতেন।আর সৌমিত্র এসেছিল পড়াশুনো করতে। ইংরেজি নিয়ে পড়ত।
৪৯ পটলডাঙা স্ট্রিটে যখন কবিতাপাক্ষিক দপ্তর উঠে এল , তখন প্রতিদিন আমি যেতাম।শনিবারটা ছিল কবিতাপাঠের দিন। নবীন কবিরা তাদের নতুন লেখা কবিতা নিয়ে চলে আসছ। সৌমিত্র যে কবিতা লেখে সেটা প্রথমে প্রকাশ করেনি। একদিন কয়েকটি কবিতা পড়তে দিয়ে বলেছিল , ওর এক বন্ধুর লেখা। কেমন হয়েছে বলুন। সৌমিত্র-র জানা ছিল না আমার ব্যোমকেশ মুখস্থ। কবিতাগুলো পড়ার পর বলেছিলাম, এগুলো তোমার লেখা। বন্ধুর নামে চালাতে চাইছ কেন !
সৌমিত্র আমার সঙ্গে তর্কে যায়নি। এখনো যায় না।
সৌমিত্র-র দেশের বাড়ি সিংহপুর। একটা মাঠ পেরোলেই বীরসিংহ । সৌমিত্র-র কল্যাণে আমার তীর্থদর্শন হয়েছে।অর্থাৎ বীরসিংহ যাওয়া হয়েছে। গিয়েছিলাম আল পথে , হাঁটাপথে। মাঠ পেরিয়ে ।তখন জমিতে ফসল ছিল না। আলু তোলা হয়ে গেছে।
এত কথা বলার উদ্দেশ্য হল, সৌমিত্র রায় -এর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যটা জেনে রাখা খুবই জরুরি। সাহিত্যের সঙ্গে গোঁয়ারতুমি-র যতটা নিবিড় সম্পর্ক ,গোঁসাইজিদের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা ততটা গভীর নয়। এ থেকে যা বোঝার বুঝে নিন।
আমরা যে বর্ণমালা ব্যবহার করি তার আদিতে মদনমোহন তর্কালংকার মশায় যেমন আছেন , বিদ্যাসাগরও সমপরিমাণে আছেন। আর তথ্য- প্রযুক্তিকে বাংলাকবিতায় যুক্ত করা প্রসঙ্গে সৌমিত্রর ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। এখন যাঁদের ফেসবুক ধ্যানজ্ঞান , তাঁরা জেনে রাখুন সৌমিত্র রায়ই প্রথম ব্যক্তি যে এই প্রযুক্তিকে কবিতার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছিল। এবং এক্ষেত্রে তার ' গোঁ ' -টিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হলেই বিষয়টি জলের মতো তরল হয়ে যাবে। এখন কোনদিকে প্রবাহিত হবে , সেটা বিচার করবে ইতিহাস।
এতটা লেখা এগিয়ে গেল এখনো কবিতা এল না , এনিয়ে কেউ প্রশ্ন করলে তার উত্তর হল , এই রচনাটি কোনো কবিতার ক্লাশনোট নয় , বরং এটি আত্মজীবনী-র অংশ রূপেই বিবেচিত হবে। কাজেই প্রশ্নটিকে উড়িয়ে দিলাম ফুঁ দিয়ে। বরং সৌমিত্র-র কবিতা লেখার প্রক্রিয়া এবং প্রকল্প-কে সমর্থন জানিয়ে ওকে একটা ভালো বাঁধানো ডায়রি দিয়েছিলাম। শর্ত ছিল : এই ডায়রিতে প্রতিদিন কবিতা লিখতে হবে। সৌমিত্র সেই শর্ত পূরণ করেছিল।
এবার সৌমিত্র কিছু কবিতা পাঠ করা যাক। বা কবিতার অংশ পাঠ হোক :
১॥ দু-চোখে অলস প্রজাপতি বা ফুল , কোথাও কোনো ব্যাঙ নেই যে ডেকে উঠলে বুঝবো বর্ষা আসতে পারে ,
২॥ পারো তো প্রজাপতির সুতোয় সেলাই করে দিও শাড়িটা ,
৩॥ঝিল্লি আর ব্যাঙের হলুদ কণ্ঠস্বর মাড়িয়ে সাদা কার্পেটে আঁকা হয়ে যায় রঙিন হারমোনিয়াম ,
৪॥ গ্রামে ফিরে দাওয়ায় চুপচাপ বসে থাকলে ব্রেনের হার্ডডিস্কে যেসব ইনফরমেশন ফাইল হয়
৫॥ কয়েকটা আকুল নামধাতু উড়ছিল আকাশে/ আমি স্বপ্ন পেতেছিলাম সবুজ ঘাসের উপর
আমি যে পাঁচটি বাক্য বা বাক্যাংশ উদ্ধৃত করলাম তাতে তথ্যপ্রযুক্তি সময়ের চিহ্নগুলি স্পষ্ট করে চেনা যাচ্ছে। এসব লেখা কিন্তু ২০০০-২০০১ এই সময়কালের লেখা। তখন সৌমিত্র- সমসাময়িক কবিরা অনেকেই রাঙা মামা দ্যায় হামা লিখে চলেছে।
সৌমিত্র হ্যাম রেডিও-র সঙ্গে যুক্ত প্রায় কিশোরকাল থেকেই। এইসব প্রযুক্তির সঙ্গে সৌমিত্র পরিচয়ই সৌমিত্রকে তথ্যপ্রযুক্তি যুগের সান্নিধ্যে নিয়ে এসেছিল। একটা ধারাবাহিক প্রসেস আছে সমগ্র প্রকল্পটির মধ্যে। এর একটা গভীর ভিত আছে।
সৌমিত্র রায় সম্পর্কে যে-কথাগুলি অবশ্যই বলা উচিত সেগুলি হল :
১॥ চ্যাটসাহিত্য ॥চ্যাটমোডে লিখিত রচনা।
২॥ i কবিতা ॥ এটিও চ্যাটমোডের ভাবনার ব্রাউজ।
৩॥ e কবিতা ॥ইলেকট্রনিক্স পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে কোনো কবিতা লিখে অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ভাবনায় সমৃদ্ধ কবিতাই e কবিতা।
৪॥ শব্দব্রাউজ ॥ এটিও এক ভিন্ন লিখনরীতি ।
এই সমস্ত কর্মকাণ্ড সৌমিত্র করেছে বা করতে পেরেছে তার আদিতে আছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য । একে টানাপোড়েনও বলা যেতে পারে।
সিংহপুরের পাশের গ্রামটির নাম বীরসিংহ।
প্রভাত চৌধুরী
১০০.
আজ ১০০ তম পর্ব। আজ দৈনিক বাংলা-র জন্য বরাদ্দ করলাম। বাংলায় অনুবাদ করলে যা দাঁড়াবে , তা হল : আজ সৌমিত্র রায়।নরসিংহ লেন-কে অনেকে চেনেন সোমেন মিত্র-র জন্য। আমি চিনি সৌমিত্র রায় - এর জন্য।
প্রথমেই জানিয়ে রাখি সো এবং সৌ দুটি সুদূরবর্তী অক্ষরবন্ধ। দুজনের বিচরণক্ষেত্র ভিন্ন।
সৌমিত্র রায় -এর বাবা চাকরি সূত্রে কলকাতায় থাকতেন।আর সৌমিত্র এসেছিল পড়াশুনো করতে। ইংরেজি নিয়ে পড়ত।
৪৯ পটলডাঙা স্ট্রিটে যখন কবিতাপাক্ষিক দপ্তর উঠে এল , তখন প্রতিদিন আমি যেতাম।শনিবারটা ছিল কবিতাপাঠের দিন। নবীন কবিরা তাদের নতুন লেখা কবিতা নিয়ে চলে আসছ। সৌমিত্র যে কবিতা লেখে সেটা প্রথমে প্রকাশ করেনি। একদিন কয়েকটি কবিতা পড়তে দিয়ে বলেছিল , ওর এক বন্ধুর লেখা। কেমন হয়েছে বলুন। সৌমিত্র-র জানা ছিল না আমার ব্যোমকেশ মুখস্থ। কবিতাগুলো পড়ার পর বলেছিলাম, এগুলো তোমার লেখা। বন্ধুর নামে চালাতে চাইছ কেন !
সৌমিত্র আমার সঙ্গে তর্কে যায়নি। এখনো যায় না।
সৌমিত্র-র দেশের বাড়ি সিংহপুর। একটা মাঠ পেরোলেই বীরসিংহ । সৌমিত্র-র কল্যাণে আমার তীর্থদর্শন হয়েছে।অর্থাৎ বীরসিংহ যাওয়া হয়েছে। গিয়েছিলাম আল পথে , হাঁটাপথে। মাঠ পেরিয়ে ।তখন জমিতে ফসল ছিল না। আলু তোলা হয়ে গেছে।
এত কথা বলার উদ্দেশ্য হল, সৌমিত্র রায় -এর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যটা জেনে রাখা খুবই জরুরি। সাহিত্যের সঙ্গে গোঁয়ারতুমি-র যতটা নিবিড় সম্পর্ক ,গোঁসাইজিদের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা ততটা গভীর নয়। এ থেকে যা বোঝার বুঝে নিন।
আমরা যে বর্ণমালা ব্যবহার করি তার আদিতে মদনমোহন তর্কালংকার মশায় যেমন আছেন , বিদ্যাসাগরও সমপরিমাণে আছেন। আর তথ্য- প্রযুক্তিকে বাংলাকবিতায় যুক্ত করা প্রসঙ্গে সৌমিত্রর ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। এখন যাঁদের ফেসবুক ধ্যানজ্ঞান , তাঁরা জেনে রাখুন সৌমিত্র রায়ই প্রথম ব্যক্তি যে এই প্রযুক্তিকে কবিতার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছিল। এবং এক্ষেত্রে তার ' গোঁ ' -টিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হলেই বিষয়টি জলের মতো তরল হয়ে যাবে। এখন কোনদিকে প্রবাহিত হবে , সেটা বিচার করবে ইতিহাস।
এতটা লেখা এগিয়ে গেল এখনো কবিতা এল না , এনিয়ে কেউ প্রশ্ন করলে তার উত্তর হল , এই রচনাটি কোনো কবিতার ক্লাশনোট নয় , বরং এটি আত্মজীবনী-র অংশ রূপেই বিবেচিত হবে। কাজেই প্রশ্নটিকে উড়িয়ে দিলাম ফুঁ দিয়ে। বরং সৌমিত্র-র কবিতা লেখার প্রক্রিয়া এবং প্রকল্প-কে সমর্থন জানিয়ে ওকে একটা ভালো বাঁধানো ডায়রি দিয়েছিলাম। শর্ত ছিল : এই ডায়রিতে প্রতিদিন কবিতা লিখতে হবে। সৌমিত্র সেই শর্ত পূরণ করেছিল।
এবার সৌমিত্র কিছু কবিতা পাঠ করা যাক। বা কবিতার অংশ পাঠ হোক :
১॥ দু-চোখে অলস প্রজাপতি বা ফুল , কোথাও কোনো ব্যাঙ নেই যে ডেকে উঠলে বুঝবো বর্ষা আসতে পারে ,
২॥ পারো তো প্রজাপতির সুতোয় সেলাই করে দিও শাড়িটা ,
৩॥ঝিল্লি আর ব্যাঙের হলুদ কণ্ঠস্বর মাড়িয়ে সাদা কার্পেটে আঁকা হয়ে যায় রঙিন হারমোনিয়াম ,
৪॥ গ্রামে ফিরে দাওয়ায় চুপচাপ বসে থাকলে ব্রেনের হার্ডডিস্কে যেসব ইনফরমেশন ফাইল হয়
৫॥ কয়েকটা আকুল নামধাতু উড়ছিল আকাশে/ আমি স্বপ্ন পেতেছিলাম সবুজ ঘাসের উপর
আমি যে পাঁচটি বাক্য বা বাক্যাংশ উদ্ধৃত করলাম তাতে তথ্যপ্রযুক্তি সময়ের চিহ্নগুলি স্পষ্ট করে চেনা যাচ্ছে। এসব লেখা কিন্তু ২০০০-২০০১ এই সময়কালের লেখা। তখন সৌমিত্র- সমসাময়িক কবিরা অনেকেই রাঙা মামা দ্যায় হামা লিখে চলেছে।
সৌমিত্র হ্যাম রেডিও-র সঙ্গে যুক্ত প্রায় কিশোরকাল থেকেই। এইসব প্রযুক্তির সঙ্গে সৌমিত্র পরিচয়ই সৌমিত্রকে তথ্যপ্রযুক্তি যুগের সান্নিধ্যে নিয়ে এসেছিল। একটা ধারাবাহিক প্রসেস আছে সমগ্র প্রকল্পটির মধ্যে। এর একটা গভীর ভিত আছে।
সৌমিত্র রায় সম্পর্কে যে-কথাগুলি অবশ্যই বলা উচিত সেগুলি হল :
১॥ চ্যাটসাহিত্য ॥চ্যাটমোডে লিখিত রচনা।
২॥ i কবিতা ॥ এটিও চ্যাটমোডের ভাবনার ব্রাউজ।
৩॥ e কবিতা ॥ইলেকট্রনিক্স পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে কোনো কবিতা লিখে অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ভাবনায় সমৃদ্ধ কবিতাই e কবিতা।
৪॥ শব্দব্রাউজ ॥ এটিও এক ভিন্ন লিখনরীতি ।
এই সমস্ত কর্মকাণ্ড সৌমিত্র করেছে বা করতে পেরেছে তার আদিতে আছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য । একে টানাপোড়েনও বলা যেতে পারে।
সিংহপুরের পাশের গ্রামটির নাম বীরসিংহ।
খুব সুন্দর । 👍👍👍
উত্তরমুছুনপ্রভাতদার প্রতিটি লেখাই পড়ছি।উপভোগ করছি।
উত্তরমুছুন