সবাই মিলে সিনেমা হলে ( ১০ )
কান্তিরঞ্জন দে
৷৷৷৷৷
সিনেমা কি স্বাধীন ?
সিনেমা কি একটি স্বাধীন- স্বতন্ত্র শিল্পমাধ্যম ? এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ এ দেশে আজও আছে । রকমসকম দেখে তাই মনে হয়। মূল প্রশ্নে যাবার আগে এ প্রসঙ্গে দু- চারটে কথা বলে।নিই ।
যেহেতু ভারতবর্ষে সিনেমার বাড়বাড়ন্ত সাহিত্যের হাত ধরে , তাই এ প্রশ্নটা সিরিয়াস সিনেমাপ্রেমীদের মনে আজও ওঠে। অবশ্য , সিনেমা আদৌ শিল্প মাধ্যম কিনা , সে বিতর্কও সিনেমার জন্মের বহুবছর পর্যন্ত টিঁকে ছিল। এখন আর দেশে-বিদেশে এ নিয়ে কেউ সন্দেহ করেন না। কিন্তু সিনেমার স্বাধীন সত্তা নিয়ে সংশয়ের খোঁচাটা রয়েই গেছে।
১৯২৯ সালের সেপ্টেম্বরে রবীন্দ্রনাথ এক চিঠিতে মুরারী ভাদুড়ীকে ( নাট্যাচার্য শিশির ভাদুড়ীর ছোটভাই ) অনুযোগ জানিয়েছিলেন যে, ------- " ছায়াচিত্র এখনো পর্যন্ত সাহিত্যের চাটুবৃত্তি করে চলেছে ।"
অনুসরণ নয় । পাঠক " চাটুবৃত্তি " শব্দটি খেয়াল করবেন। কারণ, এটা তো সত্যি যে , গত শতাব্দীর ২০ দশক থেকে ৫০-৬০- ৭০ দশক পর্যন্ত বাংলা সিনেমা কাঙালের মতো বাংলা সাহিত্যের পিছু পিছু হেঁটেছে ।
পথের পাঁচালী-র মধ্য দিয়ে সিনেমা এ দেশে সাহিত্যের হাত ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছিল। অনভ্যস্ত পণ্ডিতেরাও তখন পথের পাঁচালী সিনেমার সাহিত্যিক বিচ্যুতি নিয়ে অনর্থক চ্যাঁচামেচি করেছিলেন । সত্যজিৎ রায়ই আমাদের দেশে " অকৃত্রিম" সিনেমার প্রবর্তক ।
সত্যজিৎ বারবার সাহিত্যকে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন ঠিকই । কিন্তু সে শুধুই উপাদান-উপকরণ মাত্র ।। "বইয়ের " চিত্র রূপায়ণ কখনোই নয় ।
তা সত্ত্বেও অবশ্য অন্যান্য পরিচালকদের পর্দায় " বই " বানানো থেমে থাকে নি । ১৯৮০ সালে উত্তমকুমারের মৃত্যু পর্যন্ত সে ধারা সদর্পে চলেছিল । উত্তম-সুচিত্রার টান ছাড়াও জনপ্রিয় গল্প-উপন্যাসটি সিনেমায় দেখতে যাবার দর্শক তখনও পর্যন্ত নেহাত কম ছিল না । বর্তমানে সে উন্নত প্রজাতির দর্শকশ্রেণীও লুপ্তপ্রায় ।
৭০ দশক থেকে সুখেন দাস এবং ৮০-র দশক থেকে অঞ্জন চৌধুরী , সাহিত্যকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের বানানো গল্পে পর্দায় পরপর হিট " বই " বানিয়েছেন । তাতে ব্যবসা বেড়েছে কিন্তু বাংলা সিনেমা ক্রমশ গোল্লায় গেছে ।
বর্তমানে বাংলা সিনেমা এক মিশ্র প্রজাতির বস্তু । কিছু সাহিত্য । কিছু দক্ষিণী রি-মেক । আর কিছু গপ্পো প্রযোজকদের উদ্ভট কল্পনাপ্রসূত । সাহিত্যের সুরুচির গর্বটুকুও বাঙালির সিনেমা হারিয়ে বসে আছে ।
ডঃ সুকুমার সেনের মতো পণ্ডিতদের অনেকেই বহুদিন পর্যন্ত সিনেমাকে শিল্পমাধ্যম হিসেবে স্বীকার করতে রাজি ছিলেন না । কারণ ? সিনেমার মধ্যে চিত্রকলা-সংগীত-শব্দ-সাহিত্য-স্থাপত্য-নৃত্য , প্রাক-সিনেমার সব ক'টি শিল্পই মিলেমিশে আছে । এটাই যে তার অভিনবত্ব ও কৌলিন্য----সেটা এই পণ্ডিতেরা উপলব্ধিই করতে পারেন নি ।
আজও আমাদের দেশে সিনেমা স্বতন্ত্র-স্বাধীন শিল্প মাধ্যম কিনা, সেই ধোঁয়াশা রয়েই গেছে ।
সিনেমাকে যে চেহারায় আমরা এ দেশে দেখি , সেটি প্রাচীন প্রচলিত ভারতীয় বিনোদনের এক বিকৃত পাঁচমেশালি রূপ মাত্র ।
তাকে আর যাই হোক, স্বাধীন কোনভাবেই বলা চলে না । কেন ? তার নানা কারণ আছে ।
বারান্তরে সেগুলো বলা যাবে 'খন ।
কান্তিরঞ্জন দে
৷৷৷৷৷
সিনেমা কি স্বাধীন ?
সিনেমা কি একটি স্বাধীন- স্বতন্ত্র শিল্পমাধ্যম ? এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ এ দেশে আজও আছে । রকমসকম দেখে তাই মনে হয়। মূল প্রশ্নে যাবার আগে এ প্রসঙ্গে দু- চারটে কথা বলে।নিই ।
যেহেতু ভারতবর্ষে সিনেমার বাড়বাড়ন্ত সাহিত্যের হাত ধরে , তাই এ প্রশ্নটা সিরিয়াস সিনেমাপ্রেমীদের মনে আজও ওঠে। অবশ্য , সিনেমা আদৌ শিল্প মাধ্যম কিনা , সে বিতর্কও সিনেমার জন্মের বহুবছর পর্যন্ত টিঁকে ছিল। এখন আর দেশে-বিদেশে এ নিয়ে কেউ সন্দেহ করেন না। কিন্তু সিনেমার স্বাধীন সত্তা নিয়ে সংশয়ের খোঁচাটা রয়েই গেছে।
১৯২৯ সালের সেপ্টেম্বরে রবীন্দ্রনাথ এক চিঠিতে মুরারী ভাদুড়ীকে ( নাট্যাচার্য শিশির ভাদুড়ীর ছোটভাই ) অনুযোগ জানিয়েছিলেন যে, ------- " ছায়াচিত্র এখনো পর্যন্ত সাহিত্যের চাটুবৃত্তি করে চলেছে ।"
অনুসরণ নয় । পাঠক " চাটুবৃত্তি " শব্দটি খেয়াল করবেন। কারণ, এটা তো সত্যি যে , গত শতাব্দীর ২০ দশক থেকে ৫০-৬০- ৭০ দশক পর্যন্ত বাংলা সিনেমা কাঙালের মতো বাংলা সাহিত্যের পিছু পিছু হেঁটেছে ।
পথের পাঁচালী-র মধ্য দিয়ে সিনেমা এ দেশে সাহিত্যের হাত ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছিল। অনভ্যস্ত পণ্ডিতেরাও তখন পথের পাঁচালী সিনেমার সাহিত্যিক বিচ্যুতি নিয়ে অনর্থক চ্যাঁচামেচি করেছিলেন । সত্যজিৎ রায়ই আমাদের দেশে " অকৃত্রিম" সিনেমার প্রবর্তক ।
সত্যজিৎ বারবার সাহিত্যকে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন ঠিকই । কিন্তু সে শুধুই উপাদান-উপকরণ মাত্র ।। "বইয়ের " চিত্র রূপায়ণ কখনোই নয় ।
তা সত্ত্বেও অবশ্য অন্যান্য পরিচালকদের পর্দায় " বই " বানানো থেমে থাকে নি । ১৯৮০ সালে উত্তমকুমারের মৃত্যু পর্যন্ত সে ধারা সদর্পে চলেছিল । উত্তম-সুচিত্রার টান ছাড়াও জনপ্রিয় গল্প-উপন্যাসটি সিনেমায় দেখতে যাবার দর্শক তখনও পর্যন্ত নেহাত কম ছিল না । বর্তমানে সে উন্নত প্রজাতির দর্শকশ্রেণীও লুপ্তপ্রায় ।
৭০ দশক থেকে সুখেন দাস এবং ৮০-র দশক থেকে অঞ্জন চৌধুরী , সাহিত্যকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের বানানো গল্পে পর্দায় পরপর হিট " বই " বানিয়েছেন । তাতে ব্যবসা বেড়েছে কিন্তু বাংলা সিনেমা ক্রমশ গোল্লায় গেছে ।
বর্তমানে বাংলা সিনেমা এক মিশ্র প্রজাতির বস্তু । কিছু সাহিত্য । কিছু দক্ষিণী রি-মেক । আর কিছু গপ্পো প্রযোজকদের উদ্ভট কল্পনাপ্রসূত । সাহিত্যের সুরুচির গর্বটুকুও বাঙালির সিনেমা হারিয়ে বসে আছে ।
ডঃ সুকুমার সেনের মতো পণ্ডিতদের অনেকেই বহুদিন পর্যন্ত সিনেমাকে শিল্পমাধ্যম হিসেবে স্বীকার করতে রাজি ছিলেন না । কারণ ? সিনেমার মধ্যে চিত্রকলা-সংগীত-শব্দ-সাহিত্য-স্থাপত্য-নৃত্য , প্রাক-সিনেমার সব ক'টি শিল্পই মিলেমিশে আছে । এটাই যে তার অভিনবত্ব ও কৌলিন্য----সেটা এই পণ্ডিতেরা উপলব্ধিই করতে পারেন নি ।
আজও আমাদের দেশে সিনেমা স্বতন্ত্র-স্বাধীন শিল্প মাধ্যম কিনা, সেই ধোঁয়াশা রয়েই গেছে ।
সিনেমাকে যে চেহারায় আমরা এ দেশে দেখি , সেটি প্রাচীন প্রচলিত ভারতীয় বিনোদনের এক বিকৃত পাঁচমেশালি রূপ মাত্র ।
তাকে আর যাই হোক, স্বাধীন কোনভাবেই বলা চলে না । কেন ? তার নানা কারণ আছে ।
বারান্তরে সেগুলো বলা যাবে 'খন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন