রিক্সাওয়ালা
প্রশান্ত দে
ঝড়ে চারিদিক বিপর্যস্ত।রাত হলেই এলাকা জুড়ে নেমে আসছে অন্ধকার।রাস্তার ধারে ছায়া প্রদায়ী মহীরুহ সমুলে উৎপাটিত হয়েছে।তাও আবার রাস্তার উপর।কোথাও বৈদ্যুতিক খুঁটির কোমর ভেঙেছে আরার কোথাও ধ্বজা।রাস্তার উপর বা পাশে ইলেকট্রিক তার কুন্ডলীপাঁকিয়ে পড়ে আছে।রাস্তার ধার বা মাঝ বরাবর ভয়ে ভয়ে সবাই রাস্তা পারাপার করছে।একদিন দু-দিন করতে করতে আজ সাতদিন হয়ে গেল লাইট জ্বলে নাই ,পাখা ঘুরে নাই ,মোবাইলে চার্জ নাই ।এমনকি চার্জ নাই টটোর ব্যাটারিতে।অলিগলিতে কোনো টোটো দেখা যাচ্ছে নাই।তেমন দেখা যাচ্ছে নাই বড়ো রাস্তাতেও ।বাজার হাট রেলস্টেশন বাসস্টপ যেতে হচ্ছে পায়ে হেঁটেই।এতে মানুষের চোখে মুখে দিনে দিনে চিন্তার ছাপ বাড়ছে।
সবার মুখেই একটাই কথা ,"আজ সাতদিন হয়ে গেল কবে যে স্বাভাবিক হবে!আর এখন রিক্সাওয়ালা গুলোও নাই যে দশটাকার রাস্তা কুড়িটাকাতেও যাব।'
টটো ধরার আশা নিয়ে শাঁখারিপাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে অনাদি শাঁখারি।পরিস্থিতি বুঝে আগে ভাগেই বেরিয়ে পড়েছে।টোটো পেলে টটো, না হলে পায়ে হেঁটেই স্টেশনে যাবে।রাস্তায় এসে দাঁড়াতেই একটা টোটো আসছে দেখে তাঁর আনন্দে মনটা একটু দোলা দিয়ে উঠল।
টটোটা কাছে আসতেই বলল,"এই টটো ,স্টেশন যাবে?
--হুম
এখন টটোগুলো ধাকে সা ভাড়া হাঁকাচ্ছে।কারন জিজ্ঞাসা করলে বলছে,"দূরে গিয়ে ব্যাটারি চার্জ করে আনতে হচ্ছে।এতে একদিন এমনিই চলে যাচ্ছে।আমাদের কষ্টটা বুঝুন।"
আগের দিন চেপে ঠকতে হয়েছে তাই চাপার আগেই জিজ্ঞাসা করল,"কত?"
-পঞ্চাশ
-না ।যাও।
হেঁটেই যাবে মতলব এঁটে ফেলল।হাঁটতে যেই শুরু করেছে পথে সুভা মানে সুভাষ কাইতির সঙ্গে দেখা।মাথায় চেনা সেই গামছার পাঁগড়ী।গায়ে পুরানো রিক্সাচালানো গেঞ্জি।তবে সেই খোঁচা খোঁচা গোঁফ -দাঁড়ি নাই।মুখ পরিষ্কার।
দেখেই অনাদি বলল,"কি রে সুভা এখন তো রিক্সটা নিয়ে বেরোতে পারতিস।তা না করে মাথাটা নিচু করে হেঁটে পালাচ্ছিস।"
সুভাষ কিছু বলবেনা ভেবেছিল।কিন্তু এমন উপযাচক হয়ে বলাতে থমকে দাঁড়াল।এবং বলল,"সব শেষ হয়ে গেছে কাকা।"
--কি সব শেষ হয়ে গেছে?
--এই আমার।রিক্সটা নিয়ে দিনের পর দিন ঘর থেকে বেরিয়েছি।কোনো দিন রোজগার হয়েছে আবার কোনোদিন হয় নাই।"
---আজ তো নিয়ে আসতে পারতিস?
---আর কার জন্য করবো কাকা !সন্ধা হলে ঘরে ফিরে----"
সুভাষ বলতে পারছে নাই যে তাঁর ছেলেটা আর নাই।চোখ মুছুতে মুছতে মাথা থেকে গামছাটা খুলে গেল।
মাথাটা দেখেই অনাদি শাঁখারি বলল",কি হয়েছে? মাথা ন্যাড়া কেন?
সুভাষ নিজের মনকে নিঙড়াতে নিঙড়াতে বলল,"বিনা রোজগারে ঘর গেছি ।বুঝার ফুরসৎ পাইনি যে ছেলেঠাকে রোগে ধরেছে।দিন পনের আগে আমাদের সঙ্গে আড়ি করে চলে গেছে।"
"-কাঁদিস না শুভা ।কাঁদিস না।মনকে সংযত কর।রিক্সটা নিয়ে আবার আয়।কাজে থাক।"
--সেটাও নেই কাকা।অভাব অভাব।সেটাকে কাটাইয়ের দরে বিক্রি করে ছেলের শেষ কাজটা করেছি---"
অনাদি শাঁখারি চৌমাথায় কোমর ভাঙা বৈদ্যতিক খুঁটিটার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল---
আর তখনই একটা টটো সুভাষের রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার স্থানটাতে দাঁড়িয়ে হাঁক দিয়েই যাচ্ছে,"স্টেশন ---স্টেশন---"
প্রশান্ত দে
ঝড়ে চারিদিক বিপর্যস্ত।রাত হলেই এলাকা জুড়ে নেমে আসছে অন্ধকার।রাস্তার ধারে ছায়া প্রদায়ী মহীরুহ সমুলে উৎপাটিত হয়েছে।তাও আবার রাস্তার উপর।কোথাও বৈদ্যুতিক খুঁটির কোমর ভেঙেছে আরার কোথাও ধ্বজা।রাস্তার উপর বা পাশে ইলেকট্রিক তার কুন্ডলীপাঁকিয়ে পড়ে আছে।রাস্তার ধার বা মাঝ বরাবর ভয়ে ভয়ে সবাই রাস্তা পারাপার করছে।একদিন দু-দিন করতে করতে আজ সাতদিন হয়ে গেল লাইট জ্বলে নাই ,পাখা ঘুরে নাই ,মোবাইলে চার্জ নাই ।এমনকি চার্জ নাই টটোর ব্যাটারিতে।অলিগলিতে কোনো টোটো দেখা যাচ্ছে নাই।তেমন দেখা যাচ্ছে নাই বড়ো রাস্তাতেও ।বাজার হাট রেলস্টেশন বাসস্টপ যেতে হচ্ছে পায়ে হেঁটেই।এতে মানুষের চোখে মুখে দিনে দিনে চিন্তার ছাপ বাড়ছে।
সবার মুখেই একটাই কথা ,"আজ সাতদিন হয়ে গেল কবে যে স্বাভাবিক হবে!আর এখন রিক্সাওয়ালা গুলোও নাই যে দশটাকার রাস্তা কুড়িটাকাতেও যাব।'
টটো ধরার আশা নিয়ে শাঁখারিপাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে অনাদি শাঁখারি।পরিস্থিতি বুঝে আগে ভাগেই বেরিয়ে পড়েছে।টোটো পেলে টটো, না হলে পায়ে হেঁটেই স্টেশনে যাবে।রাস্তায় এসে দাঁড়াতেই একটা টোটো আসছে দেখে তাঁর আনন্দে মনটা একটু দোলা দিয়ে উঠল।
টটোটা কাছে আসতেই বলল,"এই টটো ,স্টেশন যাবে?
--হুম
এখন টটোগুলো ধাকে সা ভাড়া হাঁকাচ্ছে।কারন জিজ্ঞাসা করলে বলছে,"দূরে গিয়ে ব্যাটারি চার্জ করে আনতে হচ্ছে।এতে একদিন এমনিই চলে যাচ্ছে।আমাদের কষ্টটা বুঝুন।"
আগের দিন চেপে ঠকতে হয়েছে তাই চাপার আগেই জিজ্ঞাসা করল,"কত?"
-পঞ্চাশ
-না ।যাও।
হেঁটেই যাবে মতলব এঁটে ফেলল।হাঁটতে যেই শুরু করেছে পথে সুভা মানে সুভাষ কাইতির সঙ্গে দেখা।মাথায় চেনা সেই গামছার পাঁগড়ী।গায়ে পুরানো রিক্সাচালানো গেঞ্জি।তবে সেই খোঁচা খোঁচা গোঁফ -দাঁড়ি নাই।মুখ পরিষ্কার।
দেখেই অনাদি বলল,"কি রে সুভা এখন তো রিক্সটা নিয়ে বেরোতে পারতিস।তা না করে মাথাটা নিচু করে হেঁটে পালাচ্ছিস।"
সুভাষ কিছু বলবেনা ভেবেছিল।কিন্তু এমন উপযাচক হয়ে বলাতে থমকে দাঁড়াল।এবং বলল,"সব শেষ হয়ে গেছে কাকা।"
--কি সব শেষ হয়ে গেছে?
--এই আমার।রিক্সটা নিয়ে দিনের পর দিন ঘর থেকে বেরিয়েছি।কোনো দিন রোজগার হয়েছে আবার কোনোদিন হয় নাই।"
---আজ তো নিয়ে আসতে পারতিস?
---আর কার জন্য করবো কাকা !সন্ধা হলে ঘরে ফিরে----"
সুভাষ বলতে পারছে নাই যে তাঁর ছেলেটা আর নাই।চোখ মুছুতে মুছতে মাথা থেকে গামছাটা খুলে গেল।
মাথাটা দেখেই অনাদি শাঁখারি বলল",কি হয়েছে? মাথা ন্যাড়া কেন?
সুভাষ নিজের মনকে নিঙড়াতে নিঙড়াতে বলল,"বিনা রোজগারে ঘর গেছি ।বুঝার ফুরসৎ পাইনি যে ছেলেঠাকে রোগে ধরেছে।দিন পনের আগে আমাদের সঙ্গে আড়ি করে চলে গেছে।"
"-কাঁদিস না শুভা ।কাঁদিস না।মনকে সংযত কর।রিক্সটা নিয়ে আবার আয়।কাজে থাক।"
--সেটাও নেই কাকা।অভাব অভাব।সেটাকে কাটাইয়ের দরে বিক্রি করে ছেলের শেষ কাজটা করেছি---"
অনাদি শাঁখারি চৌমাথায় কোমর ভাঙা বৈদ্যতিক খুঁটিটার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল---
আর তখনই একটা টটো সুভাষের রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার স্থানটাতে দাঁড়িয়ে হাঁক দিয়েই যাচ্ছে,"স্টেশন ---স্টেশন---"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন