সৌমিত্র রায় -এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
১১৮
.একভাষায় এক কবি ছিলেন।তাঁর একটি পত্রিকাও ছিল। সেই পত্রিকার জন্য লেখা সংগ্রহ করতে তিনি পৌঁছে যেতেন বিভিন্ন জনপদে। দেশের প্রতিটি কোণ থেকে তুলে আনতেন নতুন নতুন কবিদের। খুঁজে খুঁজে ।তাঁর খোঁজই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে কোচবিহারের নতুনপাড়া থেকে কাকদ্বীপের নক্ষত্রের রাত বাড়িটিতে। বালিচক থেকে সোনারপুর।এমনকী একটি জনপদের এক এক প্রান্তে। কখনো স্কুলডাঙায়, তো কখনো বা প্রফেসর কলোনিতে , আবার কখনো কেন্দুয়াডিহির সাহানাপল্লিতে। এই খোঁজই বাংলা কবিতাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
আজ তিনি যাচ্ছেন কেন্দুয়াডিহির সাহানাপল্লিতে। ওখানে নবীন কবি স্বরূপ চন্দ -র সঙ্গে দেখা করার কথা তাঁর।
১৯৯৩- এর বড়োদিনের ছুটির সময়। সঙ্গে কে ছিল ? মনে পড়ছে না। কেবলমাত্র যাত্রাপথটি মনে আছে। তখন বাঁকুড়া বলতে আমার ছান্দার বেলিয়াতোড় বেলবনি আর সোনামুখী বাসুদেবপুরেরই সীমাবদ্ধ। তবে বাঁকুড়া শহরে গেছি। রাজকল্যাণ -কে অনুসরণ করে।
স্বরূপ চন্দ-র কবিতাপাক্ষিকে প্রথম কবিতাটি ছাপা হয় কবিতাপাক্ষিক ১৬ -তে।২৫ ডিসেম্বর ১৯৯৩। কবিতাটির নাম : মুক্তি । কবিতাটি পড়া যাক।
' মানুষ বাতাস নির্ভর। যে করেই হোক / পাখিরা জেনেছে সে কথা। /তাই আজ সমস্ত পাখি ডানা মুড়ে / মানুষের বিপক্ষে । /যদি সব খাঁচার দরজা খোলা হয় /তাহলে আবার ;/ পৃথিবীতে ডানার বাতাস পৌঁছুবে '
কবিতাপাক্ষিক ১৬ - র পর কবিতাপাক্ষিক ২০ । স্বরূপের দ্বিতীয় কবিতা : আমার ভ্রমণ ।
' সকালবেলার ট্রেন চলে যাচ্ছে পুরুলিয়ার দিকে '...
' ইচ্ছে হয় ঘুরে আছি ।পুরী অথবা গোপালপুর '.....
বনজঙ্গলে ঘেরা কোন নদীর তীরে ...চড়ুইভাতি ' ....
দু-দশ দিন কেটে গেল পুরনো তারিখ নতুন হয়ে এলো আবার। '
কপা ১৬ ,২০ -র পর ৩৭ ।কবিতার নাম :
একটা বছর।
এবার স্বরূপ চন্দ -কে চিনুন এবং মনে রাখুন :
' একটা বছর ভাতের সঙ্গে মেখে খেয়েছি / আর একটা বছরকে রুমালের মতন ভাঁজ করে/ পকেটে রেখেছি। '
এরপর স্বরূপ ঘোষণা করছে :
' বাইশ বছর থেকে দু'টো বছর খসে গেল '। এভাবেই আরো কিছু বছর খসে গেল।
' আমি এখন ষোলো উত্তীর্ণ এগারো ক্লাসের ছাত্র / মাস্টারজি আপনার কাঁটা ও কম্পাস বুননে / কোথাও ভুল রয়ে গেছে। / তাই আমার মুখের ভূগোলে টোল পড়ে না '।
একটা বছরকে নতুন করে চিনিয়ে দিল স্বরূপ।
কপা ৩৭ -এর পর কপা ৪৮।
এখানে স্বরূপ - এর আমার প্রেম । দ্বিতীয় পর্যায় -এর ১ এবং ২।
আমি ওই দুটি কবিতা থেকে কয়েক লাইন উদ্ধৃত করছি :
১॥ স্মৃতি হাতড়ে তুলে আনি ঝিনুক।
২॥ মনখারাপের দিন তুমি পরোনি সান্ত্বনা রঙের শাড়ি।
৩॥ টনটন করছে নাবালক স্মৃতি।
৪॥ আমি সেই নৌকা বিহারের ব্যর্থ নাবিক।
৫॥ অন্ধকূপ থেকে তুলে আনছি ভালোবাসার লাশ ।
এবার কপা ১০০ ।স্বরূপ চন্দ - শীত। ওই কবিতাটি থেকে কর্নিক দিয়ে তুলে নিচ্ছি কিছু শব্দমালা।
আঁশটে রঙের ঘুম / শিশিরে সিক্ত হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ /
রবীন্দ্রনাথ বাঁকুড়ায় নেমে গামছা কিনছেন আমার সঙ্গে /
ব্যক্তিগত সংযোজন :গত কুড়ি বছর আমার সঙ্গে স্বরূপ চন্দের দ্যাখা হয়নি। ওর সাম্প্রতিক লেখালেখির সঙ্গেও আমার যোগাযোগ নেই। তবু এক সময়ের সঙ্গী কীভাবে ভুলে যেতে হয় , সেই পাঠ নেওয়া হয়নি বলেই এই লেখাটির অবতারণা।
প্রভাত চৌধুরী
১১৮
.একভাষায় এক কবি ছিলেন।তাঁর একটি পত্রিকাও ছিল। সেই পত্রিকার জন্য লেখা সংগ্রহ করতে তিনি পৌঁছে যেতেন বিভিন্ন জনপদে। দেশের প্রতিটি কোণ থেকে তুলে আনতেন নতুন নতুন কবিদের। খুঁজে খুঁজে ।তাঁর খোঁজই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে কোচবিহারের নতুনপাড়া থেকে কাকদ্বীপের নক্ষত্রের রাত বাড়িটিতে। বালিচক থেকে সোনারপুর।এমনকী একটি জনপদের এক এক প্রান্তে। কখনো স্কুলডাঙায়, তো কখনো বা প্রফেসর কলোনিতে , আবার কখনো কেন্দুয়াডিহির সাহানাপল্লিতে। এই খোঁজই বাংলা কবিতাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
আজ তিনি যাচ্ছেন কেন্দুয়াডিহির সাহানাপল্লিতে। ওখানে নবীন কবি স্বরূপ চন্দ -র সঙ্গে দেখা করার কথা তাঁর।
১৯৯৩- এর বড়োদিনের ছুটির সময়। সঙ্গে কে ছিল ? মনে পড়ছে না। কেবলমাত্র যাত্রাপথটি মনে আছে। তখন বাঁকুড়া বলতে আমার ছান্দার বেলিয়াতোড় বেলবনি আর সোনামুখী বাসুদেবপুরেরই সীমাবদ্ধ। তবে বাঁকুড়া শহরে গেছি। রাজকল্যাণ -কে অনুসরণ করে।
স্বরূপ চন্দ-র কবিতাপাক্ষিকে প্রথম কবিতাটি ছাপা হয় কবিতাপাক্ষিক ১৬ -তে।২৫ ডিসেম্বর ১৯৯৩। কবিতাটির নাম : মুক্তি । কবিতাটি পড়া যাক।
' মানুষ বাতাস নির্ভর। যে করেই হোক / পাখিরা জেনেছে সে কথা। /তাই আজ সমস্ত পাখি ডানা মুড়ে / মানুষের বিপক্ষে । /যদি সব খাঁচার দরজা খোলা হয় /তাহলে আবার ;/ পৃথিবীতে ডানার বাতাস পৌঁছুবে '
কবিতাপাক্ষিক ১৬ - র পর কবিতাপাক্ষিক ২০ । স্বরূপের দ্বিতীয় কবিতা : আমার ভ্রমণ ।
' সকালবেলার ট্রেন চলে যাচ্ছে পুরুলিয়ার দিকে '...
' ইচ্ছে হয় ঘুরে আছি ।পুরী অথবা গোপালপুর '.....
বনজঙ্গলে ঘেরা কোন নদীর তীরে ...চড়ুইভাতি ' ....
দু-দশ দিন কেটে গেল পুরনো তারিখ নতুন হয়ে এলো আবার। '
কপা ১৬ ,২০ -র পর ৩৭ ।কবিতার নাম :
একটা বছর।
এবার স্বরূপ চন্দ -কে চিনুন এবং মনে রাখুন :
' একটা বছর ভাতের সঙ্গে মেখে খেয়েছি / আর একটা বছরকে রুমালের মতন ভাঁজ করে/ পকেটে রেখেছি। '
এরপর স্বরূপ ঘোষণা করছে :
' বাইশ বছর থেকে দু'টো বছর খসে গেল '। এভাবেই আরো কিছু বছর খসে গেল।
' আমি এখন ষোলো উত্তীর্ণ এগারো ক্লাসের ছাত্র / মাস্টারজি আপনার কাঁটা ও কম্পাস বুননে / কোথাও ভুল রয়ে গেছে। / তাই আমার মুখের ভূগোলে টোল পড়ে না '।
একটা বছরকে নতুন করে চিনিয়ে দিল স্বরূপ।
কপা ৩৭ -এর পর কপা ৪৮।
এখানে স্বরূপ - এর আমার প্রেম । দ্বিতীয় পর্যায় -এর ১ এবং ২।
আমি ওই দুটি কবিতা থেকে কয়েক লাইন উদ্ধৃত করছি :
১॥ স্মৃতি হাতড়ে তুলে আনি ঝিনুক।
২॥ মনখারাপের দিন তুমি পরোনি সান্ত্বনা রঙের শাড়ি।
৩॥ টনটন করছে নাবালক স্মৃতি।
৪॥ আমি সেই নৌকা বিহারের ব্যর্থ নাবিক।
৫॥ অন্ধকূপ থেকে তুলে আনছি ভালোবাসার লাশ ।
এবার কপা ১০০ ।স্বরূপ চন্দ - শীত। ওই কবিতাটি থেকে কর্নিক দিয়ে তুলে নিচ্ছি কিছু শব্দমালা।
আঁশটে রঙের ঘুম / শিশিরে সিক্ত হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ /
রবীন্দ্রনাথ বাঁকুড়ায় নেমে গামছা কিনছেন আমার সঙ্গে /
ব্যক্তিগত সংযোজন :গত কুড়ি বছর আমার সঙ্গে স্বরূপ চন্দের দ্যাখা হয়নি। ওর সাম্প্রতিক লেখালেখির সঙ্গেও আমার যোগাযোগ নেই। তবু এক সময়ের সঙ্গী কীভাবে ভুলে যেতে হয় , সেই পাঠ নেওয়া হয়নি বলেই এই লেখাটির অবতারণা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন