সবাই মিলে সিনেমাহলে~ ৩
কান্তিরঞ্জন দে
সিনেমাকে বই বলবেন না , প্লীজ। কারণ , দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস ।
আপনি কি আপেলকে কমলালেবু বলেন ? বলেন না তো ? তাহলে , সিনেমাকেও বই বলবেন না ------ প্লীজ ।
সিনেমা আর গল্প - উপন্যাসের বই ---- দুটোই শিল্প । কিন্তু , দুটো সম্পূর্ণ আলাদা শিল্প মাধ্যম । দুয়েরই গল্প বলার রীতি - নীতি , কায়দা - কানুন , গঠনপদ্ধতি এবং প্রয়োগকৌশল সম্পূর্ণ আলাদা ।
বই গল্প বলে , শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে । আর , সিনেমা গল্প বলে ছবির পর ছবি সাজিয়ে ।
শিক্ষিত বাঙালি এটা যে বোঝেন না তা নয় । তবুও , স্বভাব যায় না ম'লে । কলেজ - ইউনিভার্সিটি-র ডিগ্রিধারি , ডিগ্রিহীন নির্বিশেষে বাঙালি সিনেমাকে বই বলবেই ।
অনেকেই এটা বুঝতে চান না যে , সিনেমাকে " বই " বলা অশিক্ষারই পরিচয় ।
বাঙালির এই দোষের পেছনে অবশ্য তার দীর্ঘ ও সুগভীর সাহিত্য ঐতিহ্যই দায়ী ।
সিনেমার আদিযুগ থেকে বাংলা সিনেমা বাংলা সাহিত্যের কাছে বারেবারে হাত পেতে দান স্বীকার করেছে বলেই , আপামর সাহিত্য পাঠক বাঙালির সিনেমা চেতনায় আজও " বই " ঢুকে বসে আছে ।
ভারতে সিনেমা আসে ১৮৯৬ সালে । তার ১৫ -১৬ বছরের মধ্যেই এ দেশে পুরোপুরি কাহিনীচিত্র বানানো শুরু ।
একেবারে গোড়ার দিকে সিনেমা ব্যবসায়ীরা ফিল্মে মঞ্চ নাটকের রেকর্ডিং করে তাঁবু খাটিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে দর্শকদের সেগুলো দেখিয়ে বেড়াতেন । কিন্তু এভাবে তো বেশিদিন চলতে পারে না । তাই গল্প বলা সিনেমার আবির্ভাব । আর , গল্প বলা সিনেমা বানাতে গেলে তখনকার যুগের জনপ্রিয় গল্প -ঔপন্যাসিকদের সৃষ্টির ওপর ভরসা করা ছাড়া আর উপায় কি ?
১৯৫৫ সালে " আদ্যোপান্ত সিনেমা " পথের পাঁচালী -র আগে পর্যন্ত সিনেমার প্রথম সেই ৪০-৪৫ বছরে নির্বাক এবং সবাক যুগ মিলিয়ে বাংলা ভাষায় বঙ্কিমচন্দ্র , রবীন্দ্রনাথ , এবং শরৎচন্দ্রের গল্প - উপন্যাস থেকে সিনেমা তৈরি হয়েছে যথাক্রমে , ২৫ , ১৪ এবং ৩৫ বার । অন্যান্য সাহিত্যিকদের কথা তো ছেড়েই দিলাম ।
জনপ্রিয় বইটি যাঁহাতক চিত্রায়িত হল , ------- বাঙালি দর্শকের মনে হল ------ যাই তো , বইটা পর্দায় কেমন দাঁড়াল , দেখে আসি একবার ।
এবার বুঝলেন তো ? বাঙালি সিনেমাকে পিকচার , মুভি , সিনেমা , ফিল্ম না বলে
" বই " বলে কেন ?
আপনি আবার এ ভুলটি করে বসবেন না যেন । প্লীজ , আল্লার কিরা , ভগবানের দোহাই !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন