পূরবী~ ১৮
অভিজিৎ চৌধুরী
ইন্দিরা রাণু মৈত্রেয়ী কেউ যেন বড় হয়নি তাঁর কাছে।সময় থমকে গেছে।সেই কিশোরী কণ্ঠস্বর এখনও যে ভাস্বর।
অঙ্গীরার ছবিটা দেখে অবাক হয়ে গেল তীর্থ। কতো বছর পর দেখল সে।এতো বড় হয়ে গেছে।দুধ খেয়ে পেটটা সামান্য ভরে গেলই তাকাত তীর্থের দিকে।এবা সে পিসুর সঙ্গে নিরুদ্দেশে যাবে।অটোতে উঠল সামান্য ঝাঁকুনিতে ঘুমিয়ে পড়ত শিশু।গলাটা জড়িয়ে ধরে রাখত শিশু।বাইরের পৃথিবীতে তীর্থই তো তার পরম বন্ধু।
বউমা প্রতিমাও যেন তাঁর হারিয়ে যাওয়া কন্যা।কখনও কখনও মনে হয় তিনি যেন বড় হতে চাননি কখনও।ডাকঘরের অমলের মতোন তিনি জানলা দিয়ে আশ্বিনের রোদ৷ দেখছেন।অপেক্ষা করছেন রাজার চিঠির।
লন্ডনে সতের বছর বয়সে বউঠানের স্নেহাশ্রয়ে সেই যে তাঁর ইংরেজি উচ্চারণ নিয়ে সরস রসিকতা জীবন জুড়ে রয়ে গেল।
পশ্চিম জানেনি তাঁকে।তিনি সেখানে এশিয়ান সেইন্ট।বিষাদটা রয়ে গেল।তারপরই ভেবেছেন,নিজেকেই বা জানা হল কোথায়!
একবার কলকাতা বইমেলায় সামান্য একটা বই বেরিয়েছে সেবার তীর্থের।অঙ্গীরা তখন ক্লাস সেভেনে।বইমেলায় তন্ন করে খুঁজেছিল পিসুর বই।তোর পিসু কে- রে।ছোট্ট শিশু বলত- ভূতুম।
জ্যোতিদাদা সেদিন এলেন।বললেন,রবি,তুমি তো এখন বিশ্বখ্যাত।প্রণাম করলেন।চোখ দুটো জলে ভরে উঠেছিল তাঁর।সস্নেহে আলিঙ্গন করলেন তখন।বললেন,আব্দুল মাঝি এই কিছুদিন আগে মারা গেলেন।তুমি বলতে,আব্দুল মাঝির ছুঁচোলো দাড়ি।
বারবার মনে হয় এ কেমন আত্মখণ্ডন।কি দরকার ছিল খ্যাতির।
রবীন্দ্রনাথ বললেন,আপনি একটা ছবি এঁকেছিলেন।
শুধু যদি যাঁরা ছিলেন দিনের আলোর মতোন ভাস্বর,অমলের কাছে আবার যদি ফিরতো তারা।
দইওয়ালার সেই সুর জানা হল না যে।
তবুও অধ্যাপিকা শাশ্বতী ক্লাসশেষে ছাতিম গাছের তলায় বসে দেখে পূরবী।গানের সুর প্রদোষকালের রাগের সঙ্গে মিশে যায় আর সে বলে, অমল,আমি যে তোমার সুধা।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন