সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
৭৯.
কবিতাপাক্ষিক যে প্রান্তিকতায় বিশ্বাসী , তার প্রমাণ স্বরূপ হাজির করছি চঞ্চল দুবে এবং বিদ্যুৎ পরামানিক এই দুই কবিজনকে। এরা দুজনেই তখন খুবই নবীন ছিল।১৯৯৩। তখন মূলত এই দুই নবীনকে ভরসা করেই প্রথম বর্ষপূর্তি উৎসব করা হয়েছিল আদ্রাতে। কলকাতা থেকে দূরের এক শহরে। রানাঘাট কিংবা মধ্যমগ্রামে নয়। প্রান্তিক এই রেলশহরে।এসব কথা আগে একবার লিখেছি। পরেও লিখব। যতদিন বাঁচব , ততদিন লিখব। আদ্রা-র কথা।চঞ্চল-বিদ্যুৎ-দের কথা।
এবার ওই দুজনের কবিতার কথা লিখব। প্রথমে চঞ্চলের কথা। কপা ৪ - এ প্রকাশিত হয়েছিল ' শান্তিবীজ ' বা জল।
' জলের গভীর থেকে উঠে আসে জলকণাগুলি ' 'এখানে কোথাও গ্রাম্যতা প্রকাশ পায়নি। মফস্ সলি গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে না।
কবিতাপাক্ষিক ১৭ - তে চঞ্চল দুবে এই পক্ষের তিন কবির মধ্যে একজন। বাকে দুজন নাসের হোসেন এবং রোশনারা মিশ্র। এবং রোশনারা-র স্কুলমিথ।
চঞ্চলের মোট ৬ টি কবিতা ছিল। এই সুযোগে পড়া হয়ে গেল কবিতাগুলি।
কী উদ্ধার করলাম দেখুন :
১ ॥ আমরা সাধারণ লোক , সাত- সাতের /
বুঝি না ঝঞ্ঝাট ;
২ ॥ কোনো নান্দনিক ডাক আসেনি আমার কাছে
তবু আমি পাহাড়ে যাবোই ,
৩ ॥ কে আমার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেবে / বল ?
৪ ॥ নক্ষত্র বিহীন রাতে অন্ধকারে
ছায়াগুলি কেঁপে কেঁপে ওঠে ,
1994- এর জানুয়ারিতে প্রকাশিত কবিতাগুলি এখনো পড়া যাচ্ছে। এটাই বড়ো প্রাপ্তি।
কপা ১৩ মানে হ্যান্ড কম্পোজ। অক্ষর সাজানো থাকত গ্যালিতে। রোলারে কালি লাগিয়ে প্রুফ তুলতে হত। ঈষৎ ভেজা নিউজপ্রিন্ট। তখনকার যা সিস্টেম চালু ছিল । আমাদের কাজ হত প্রিন্টিং সেন্টারে। মালিক কাশীবাবু। কাশীনাথ পাল। ঠিকানা : ১৮ বি,
ভুবন ধর লেন। আমাদের এখন কার পাড়ায়। অর্থাৎ কালীঘাট থেকে রোজ আসতে হত। বা রাইটার্স থেকে। একটা কথা জানিয়ে রাখতে চাই আরো একবার কবিতা পাক্ষিক যেমন ভরসা রাখত তার কবিদের , ঠিক ততটাই ভরসা রাখত প্রেস- বাইন্ডার সকলের ওপর।
কবিতাপাক্ষিকের অগ্রগতির জন্য যেমন নাসেরের অবদান ঠিক তেমনি কাশীবাবুর অবদান। এইসব কিন্তু ইতিহাসের অংশ ।
এখন বিদ্যুৎ পরামানিকের কবিতা , কপা ১৩। এই পক্ষের কবি। একসঙ্গে আটটি কবিতা। পত্রিকাটির সদর দপ্তর হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট। আর কবির নিবাস :নন্দুপাড়া , রঘুনাথপুর , পুরুলিয়া। এটাও আমাদের কৃতিত্ব। আমি এরকমটা মনে করি। আপনি আপনার মতো একটা ব্যাখ্যা করে নিতে পারেন। তাতে আমার কিছুই যাবে আসবে না। আমাদের হাতেই আছে লাগাম এবং চাবুক। বাংলাকবিতাকে নতুন দিশা দেখাতে এসেছিলাম আমরা।
এখন বিদ্যুৎ-এর আটটি কবিতার কথা ।
১॥ এবার জেগে ওঠ মৃত নদী গানের গভীরে।
২॥ আমাদের পিঁড়িতে বসেছে খরা।
৩॥ একটা জন্মেই জমে গেল কত অন্ধগান ,
৪॥ তোমার বৃত্ত ঘিরে দাঁড়ায় মহিষ আঁধার
৫॥ কোমল আঙুলগুলিও ডুবে আছে অন্ধের গিটারে
৬॥ অমল বিকেল তাকে ঝাউগাছটির কাছে
নিয়ে যেতে পারেনি কখনো ;
৭॥ তবু মাঝে মাঝে ঘুড়ির গায়ে ফুটে উঠলে রামধনু
৮॥ স্থায়ী অসুখের ভেতর তবুও সাজাই বর্ণমালা।
কপা ৩৪ - এ বিদ্যুৎ পরামানিকের গুচ্ছ কবিতা। একত্রে সাতটি।
এখানে বিদ্যুৎ অনেকটাই চকচকে। স্মার্ট।
আমি অল্প কিছু নমুনা পেশ করছি।
১॥ নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে গেলে কতবার ভেবেছি
লবণ বিদ্রোহের কথা।
২॥ জলের সমস্ত গভীরতা তুমি বাতাসকে জানালে
আমার বিশ্বাস কবিতাপাক্ষিক সঙ্গ বিদ্যুৎ পরামানিককে ক্রমাগত সমৃদ্ধ করে চলেছিল। আমরা খুব কাছ থেকে , কিছুটা দূর থেকেও তা লক্ষ করে যাচ্ছিলাম।
প্রভাত চৌধুরী
৭৯.
কবিতাপাক্ষিক যে প্রান্তিকতায় বিশ্বাসী , তার প্রমাণ স্বরূপ হাজির করছি চঞ্চল দুবে এবং বিদ্যুৎ পরামানিক এই দুই কবিজনকে। এরা দুজনেই তখন খুবই নবীন ছিল।১৯৯৩। তখন মূলত এই দুই নবীনকে ভরসা করেই প্রথম বর্ষপূর্তি উৎসব করা হয়েছিল আদ্রাতে। কলকাতা থেকে দূরের এক শহরে। রানাঘাট কিংবা মধ্যমগ্রামে নয়। প্রান্তিক এই রেলশহরে।এসব কথা আগে একবার লিখেছি। পরেও লিখব। যতদিন বাঁচব , ততদিন লিখব। আদ্রা-র কথা।চঞ্চল-বিদ্যুৎ-দের কথা।
এবার ওই দুজনের কবিতার কথা লিখব। প্রথমে চঞ্চলের কথা। কপা ৪ - এ প্রকাশিত হয়েছিল ' শান্তিবীজ ' বা জল।
' জলের গভীর থেকে উঠে আসে জলকণাগুলি ' 'এখানে কোথাও গ্রাম্যতা প্রকাশ পায়নি। মফস্ সলি গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে না।
কবিতাপাক্ষিক ১৭ - তে চঞ্চল দুবে এই পক্ষের তিন কবির মধ্যে একজন। বাকে দুজন নাসের হোসেন এবং রোশনারা মিশ্র। এবং রোশনারা-র স্কুলমিথ।
চঞ্চলের মোট ৬ টি কবিতা ছিল। এই সুযোগে পড়া হয়ে গেল কবিতাগুলি।
কী উদ্ধার করলাম দেখুন :
১ ॥ আমরা সাধারণ লোক , সাত- সাতের /
বুঝি না ঝঞ্ঝাট ;
২ ॥ কোনো নান্দনিক ডাক আসেনি আমার কাছে
তবু আমি পাহাড়ে যাবোই ,
৩ ॥ কে আমার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেবে / বল ?
৪ ॥ নক্ষত্র বিহীন রাতে অন্ধকারে
ছায়াগুলি কেঁপে কেঁপে ওঠে ,
1994- এর জানুয়ারিতে প্রকাশিত কবিতাগুলি এখনো পড়া যাচ্ছে। এটাই বড়ো প্রাপ্তি।
কপা ১৩ মানে হ্যান্ড কম্পোজ। অক্ষর সাজানো থাকত গ্যালিতে। রোলারে কালি লাগিয়ে প্রুফ তুলতে হত। ঈষৎ ভেজা নিউজপ্রিন্ট। তখনকার যা সিস্টেম চালু ছিল । আমাদের কাজ হত প্রিন্টিং সেন্টারে। মালিক কাশীবাবু। কাশীনাথ পাল। ঠিকানা : ১৮ বি,
ভুবন ধর লেন। আমাদের এখন কার পাড়ায়। অর্থাৎ কালীঘাট থেকে রোজ আসতে হত। বা রাইটার্স থেকে। একটা কথা জানিয়ে রাখতে চাই আরো একবার কবিতা পাক্ষিক যেমন ভরসা রাখত তার কবিদের , ঠিক ততটাই ভরসা রাখত প্রেস- বাইন্ডার সকলের ওপর।
কবিতাপাক্ষিকের অগ্রগতির জন্য যেমন নাসেরের অবদান ঠিক তেমনি কাশীবাবুর অবদান। এইসব কিন্তু ইতিহাসের অংশ ।
এখন বিদ্যুৎ পরামানিকের কবিতা , কপা ১৩। এই পক্ষের কবি। একসঙ্গে আটটি কবিতা। পত্রিকাটির সদর দপ্তর হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট। আর কবির নিবাস :নন্দুপাড়া , রঘুনাথপুর , পুরুলিয়া। এটাও আমাদের কৃতিত্ব। আমি এরকমটা মনে করি। আপনি আপনার মতো একটা ব্যাখ্যা করে নিতে পারেন। তাতে আমার কিছুই যাবে আসবে না। আমাদের হাতেই আছে লাগাম এবং চাবুক। বাংলাকবিতাকে নতুন দিশা দেখাতে এসেছিলাম আমরা।
এখন বিদ্যুৎ-এর আটটি কবিতার কথা ।
১॥ এবার জেগে ওঠ মৃত নদী গানের গভীরে।
২॥ আমাদের পিঁড়িতে বসেছে খরা।
৩॥ একটা জন্মেই জমে গেল কত অন্ধগান ,
৪॥ তোমার বৃত্ত ঘিরে দাঁড়ায় মহিষ আঁধার
৫॥ কোমল আঙুলগুলিও ডুবে আছে অন্ধের গিটারে
৬॥ অমল বিকেল তাকে ঝাউগাছটির কাছে
নিয়ে যেতে পারেনি কখনো ;
৭॥ তবু মাঝে মাঝে ঘুড়ির গায়ে ফুটে উঠলে রামধনু
৮॥ স্থায়ী অসুখের ভেতর তবুও সাজাই বর্ণমালা।
কপা ৩৪ - এ বিদ্যুৎ পরামানিকের গুচ্ছ কবিতা। একত্রে সাতটি।
এখানে বিদ্যুৎ অনেকটাই চকচকে। স্মার্ট।
আমি অল্প কিছু নমুনা পেশ করছি।
১॥ নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে গেলে কতবার ভেবেছি
লবণ বিদ্রোহের কথা।
২॥ জলের সমস্ত গভীরতা তুমি বাতাসকে জানালে
আমার বিশ্বাস কবিতাপাক্ষিক সঙ্গ বিদ্যুৎ পরামানিককে ক্রমাগত সমৃদ্ধ করে চলেছিল। আমরা খুব কাছ থেকে , কিছুটা দূর থেকেও তা লক্ষ করে যাচ্ছিলাম।
অনেক কিছু জানতে পারলাম
উত্তরমুছুনঅনেক কিছু জানতে পারলাম
উত্তরমুছুন