পূরবী~ ১৩
অভিজিৎ চৌধুরী
এমন অনুর্বর হয়নি কখনও তাঁর সৃজনভূমি। গান লেখা যেন শেষ হয়ে এলো।দিনু যতোদিন ছিল সংগীত ভবন মুখরিত থাকত।নাটমঞ্চেও সে ছিল রাজা।গায়ক আগেই গেছিল,এখন যেন গীতিকারও বিদায় নিলো।স্বরলিপি তিনি কখনও লিখতে পারতেন না।শুরুতে লিখতেন জ্যোতিদাদা,ইন্দিরা আর অনেকে।তারপর দিনু এসে একাই সামলে নিলো স্বরলিপির ঝক্কি।স্মৃতিশক্তিও ছিল অসাধারণ। কিছু একবার শুনলে ভুলতো না।
প্রিয়জনের চলে যাওয়াতেও গান কখনও তাঁকে ছেড়ে যায়ইনি। কন্যা মাধুরীলতা দীর্ঘ রোগভোগের পর মারা গেলো।মন বড় পীড়িত।অন্ধকারে চুপচাপ বসে আছেন।তারায় আকাশ ছেয়ে রয়েছে।দিনুর ঘর থেকে ছেলেদের গান শেখার শব্দ পান তিনি।দ্বারিক গৃহে থাকত দিনু।এখন সে ঘর শূন্য দেখে দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে অজান্তেই।দেহলিতে গিয়ে থাকলে দিনুর সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হতো।
বাবার বেলা অফিসে যেতে হতো।লৌকিক ক্রিয়া আসল বেদনাকে ঢেকে দেয়।
কান্না আসে অবদমিত স্মৃতি থেকে।সে যেন রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে চাই,এতো বড় আত্মখণ্ডন!
ছিল আর ছিল না এই মস্তো ফাঁকের মাঝখানে জীবন তার আপন বেগে চলেছে।যেন মানুষের যাওয়া আসা দিনরাত্রির খেলা।কতো রাতে তীর্থ দেখেছে মৃত মানুষেরা প্রিয়তমরা তার চারপাশে এসে বসেছে।সেই হাসি, সেই কলহাস্য।
কামুর আউটসাইডারে এক নিরপেক্ষ শোকহীনতায় আচ্ছন্ন ছিল নায়ক।তার মধ্যে বেদনা ছিল নিশ্চয় কিন্তু যেন আলাদা আরোপিত কিছু নয়।তাই হয়তো মাধুরীলতার মৃত্যুতেও শান্তিনিকেতনের শারদোৎসব বন্ধ করেননি।যদিও সেবার জমলো না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন