সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
৬৫.
আজ মানসকুমার চিনি- র কথা। এভাবেও বলা যায় কবি মানসকুমার -কে আমি কতটা চিনি , সে বিষয়ে জানাতে চাই। একজন মানুষ অপর একজন মানুষ- কে ঠিক কতটা চেনেন বা কতটা চেনা সম্ভব সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই । তবু আমি মানস-কে চেনাবার চেষ্টা করছি।
মানসকুমার চিনি এবং কবিতাপাক্ষিক পাশাপাশি লেখার মতো দুটি বিশেষ্য। অর্থাৎ মানস কবিতাপাক্ষিকের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিল। প্রথম ১৩ টি সংখ্যার মধ্যে ৩ টি সংখ্যায় তার কবিতাপাক্ষিক-এ প্রকাশিত হয়েছিল।সংখ্যাগুলি :
২ বা দ্বিতীয় সংখ্যায় ১ টি কবিতা। শ্রম ও লবণ।
৭ বা সপ্তম সংখ্যায় ১ টি।লোহিতকথা।
তখন পর্যন্ত একজন কবির একটি কবিতাই ছাপা হত।
কবিতাপাক্ষিক ১৩ থেকে শুরু হয় ' এই পক্ষের কবি ' বা কবিদের গুচ্ছ কবিতা প্রকাশ। আর সেই ১৩ তম সংখ্যাতেই এই পক্ষের কবি ছিল : বিদ্যুৎ পরামানিক এবং মানসকুমার চিনি।
এই সংখ্যায় মানস-এর মোট পাঁচটি কবিতা ছাপা হয়েছিল। ওই সংখ্যার পঞ্চম বা শেষের কবিতাটির নাম : জন্মনিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞাপন।
দালালের প্রস্তাবে সার্ক সম্মেলনে
বেবিফুডের গায়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের
বিজ্ঞাপন সাঁটা হল।
একটা কথা চালু ছিল , আধুনিকদের শব্দকোষে : সুদূর প্রসারী। মানস আধুনিক পৃথিবী পেরিয়ে এসে লেখা শুরু করেছে। কাজেই তার দ্যাখাটা একেবারেই অন্যরকম। মানস জেনে গিয়েছিল ' অপর ' নামক একটি শব্দ।খুব কাছের বস্তু , কাজেরও --- বেবিফুড।
আর তার কন্টেনারে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞাপনটি চোখে পড়েছিল মানসের। শুধু চোখে পড়া নয় , তাকে কবিতায় সঠিক প্রয়োগও কবিতানির্মাণের অন্যতম একটি কর্মসূচি।
[07/07, 11:14 am] Kobi Prabhat Chowdhury: মানসকুমার চিনি ' চিঠি লেখার কোচিং ক্লাস ' শিরোনামে একটি সিরিজ লিখেছিল। প্রথমটি প্রকাশিত হয়েছিল কবিতাপাক্ষিক ৮১ সংখ্যায়। ওই কবিতাটিতে মোট ৭ টি সাব- হেডিং ছিল। হেডিংগুলি জেনে নেওয়া যাক :
একা ॥ চিঠির বোঝা ॥ চারপাশে ॥ সুসংবাদ ॥ ছাতাররোদ ॥ গর্ত ॥ সূত্র : ডাকবুথ ।
এই কবিতাগুলি থেকে কয়েকটি বাক্য :
তার কথা জানাজানি হলে একদিন মনে হয় সব রং করা ।
উড়ে আসা টাটকা চিঠি জামার বোতাম খুলে দেয়।
ছোলা খেয়ে উড়ে আসে রঙিন খাম ।
এইসব রং তো বাংলাকবিতায় আগে দ্যাখা যায়নি। মানস যে ভাষায় কথা তা একেবারেই মানসের নিজের ভাষা।
কপা ৯৯- এ চিঠি লেখার কোচিং ক্লাস ২ প্রকাশিত হল। সেটি ৫ পর্বের। সেগুলি থেকে একটি উদাহরণ :
' তবু আজ তাপমাত্রা ধরা পড়তেই চিঠির ভেতর তৈরি হয় একটা যাদুঘর অথবা তেমন ডাকঘর ছিল না কোনোদিন ।'
কপা ১০০ -তে ৩ নম্বর কোচিং থেকে জানতে পারলাম --- ' মেয়েদের চুলের কিছু অংশ আজ দেখানো হবে প্রথম শো তে ভারী ফল লিখে ফেলছে দ্রুত সব ছক।' এ সবই ছক ভাঙা কবিতা। আধুনিকতার পুরোনো ছাঁচ ভেঙে যারা সে সময় কবিতাপাক্ষিক তথা বাংলাকবিতাকে সমৃদ্ধ করেছিল তাদের মধ্য অন্যতম একজন মানসকুমার চিনি।
মানস- এর কাব্যগ্রন্থগুলির নাম জেনে রাখুন :
পাখিদের জন্য আয়না ॥ ঘুমরোগের খাদ্যতালিকা ॥
ঢেউ সমগ্র ॥ অক্ষরের জাদুবিদ্যা ॥ রেলব্রিজে সন্ধ্যা
সহ আরো ১৪ টি বই।
মানস যে আত্মজীবনী মূলক গদ্যটি লিখেছে কবিতাপাক্ষিক -এর দুটি শারদীয় সংখ্যায় , তা বিস্ময়কর ভাবে অন্য রকম।সেই গদ্য অলংকার বর্জিত। লেখা খুব কঠিন। কিন্তু সহজ এবং সরলভাবে জীবনকে দেখেছে এবং দেখিয়েছে মানস।
মানস কেবলমাত্র কবি নয় , একজন প্রকৃত লিটল ম্যাগাজিন কর্মীও।
খড়গপুরে রেলে চাকরি করত। থাকত 'কবিতার বাগান ' - এ। এক সময় ওর বাড়ির নাম ছিল কবিতার বাগান। সেই বাগানে আমার যাতায়াত ছিল। সেসব কথা বললাম না। বা বলতে চাইলাম না।
প্রভাত চৌধুরী
৬৫.
আজ মানসকুমার চিনি- র কথা। এভাবেও বলা যায় কবি মানসকুমার -কে আমি কতটা চিনি , সে বিষয়ে জানাতে চাই। একজন মানুষ অপর একজন মানুষ- কে ঠিক কতটা চেনেন বা কতটা চেনা সম্ভব সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই । তবু আমি মানস-কে চেনাবার চেষ্টা করছি।
মানসকুমার চিনি এবং কবিতাপাক্ষিক পাশাপাশি লেখার মতো দুটি বিশেষ্য। অর্থাৎ মানস কবিতাপাক্ষিকের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিল। প্রথম ১৩ টি সংখ্যার মধ্যে ৩ টি সংখ্যায় তার কবিতাপাক্ষিক-এ প্রকাশিত হয়েছিল।সংখ্যাগুলি :
২ বা দ্বিতীয় সংখ্যায় ১ টি কবিতা। শ্রম ও লবণ।
৭ বা সপ্তম সংখ্যায় ১ টি।লোহিতকথা।
তখন পর্যন্ত একজন কবির একটি কবিতাই ছাপা হত।
কবিতাপাক্ষিক ১৩ থেকে শুরু হয় ' এই পক্ষের কবি ' বা কবিদের গুচ্ছ কবিতা প্রকাশ। আর সেই ১৩ তম সংখ্যাতেই এই পক্ষের কবি ছিল : বিদ্যুৎ পরামানিক এবং মানসকুমার চিনি।
এই সংখ্যায় মানস-এর মোট পাঁচটি কবিতা ছাপা হয়েছিল। ওই সংখ্যার পঞ্চম বা শেষের কবিতাটির নাম : জন্মনিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞাপন।
দালালের প্রস্তাবে সার্ক সম্মেলনে
বেবিফুডের গায়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের
বিজ্ঞাপন সাঁটা হল।
একটা কথা চালু ছিল , আধুনিকদের শব্দকোষে : সুদূর প্রসারী। মানস আধুনিক পৃথিবী পেরিয়ে এসে লেখা শুরু করেছে। কাজেই তার দ্যাখাটা একেবারেই অন্যরকম। মানস জেনে গিয়েছিল ' অপর ' নামক একটি শব্দ।খুব কাছের বস্তু , কাজেরও --- বেবিফুড।
আর তার কন্টেনারে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞাপনটি চোখে পড়েছিল মানসের। শুধু চোখে পড়া নয় , তাকে কবিতায় সঠিক প্রয়োগও কবিতানির্মাণের অন্যতম একটি কর্মসূচি।
[07/07, 11:14 am] Kobi Prabhat Chowdhury: মানসকুমার চিনি ' চিঠি লেখার কোচিং ক্লাস ' শিরোনামে একটি সিরিজ লিখেছিল। প্রথমটি প্রকাশিত হয়েছিল কবিতাপাক্ষিক ৮১ সংখ্যায়। ওই কবিতাটিতে মোট ৭ টি সাব- হেডিং ছিল। হেডিংগুলি জেনে নেওয়া যাক :
একা ॥ চিঠির বোঝা ॥ চারপাশে ॥ সুসংবাদ ॥ ছাতাররোদ ॥ গর্ত ॥ সূত্র : ডাকবুথ ।
এই কবিতাগুলি থেকে কয়েকটি বাক্য :
তার কথা জানাজানি হলে একদিন মনে হয় সব রং করা ।
উড়ে আসা টাটকা চিঠি জামার বোতাম খুলে দেয়।
ছোলা খেয়ে উড়ে আসে রঙিন খাম ।
এইসব রং তো বাংলাকবিতায় আগে দ্যাখা যায়নি। মানস যে ভাষায় কথা তা একেবারেই মানসের নিজের ভাষা।
কপা ৯৯- এ চিঠি লেখার কোচিং ক্লাস ২ প্রকাশিত হল। সেটি ৫ পর্বের। সেগুলি থেকে একটি উদাহরণ :
' তবু আজ তাপমাত্রা ধরা পড়তেই চিঠির ভেতর তৈরি হয় একটা যাদুঘর অথবা তেমন ডাকঘর ছিল না কোনোদিন ।'
কপা ১০০ -তে ৩ নম্বর কোচিং থেকে জানতে পারলাম --- ' মেয়েদের চুলের কিছু অংশ আজ দেখানো হবে প্রথম শো তে ভারী ফল লিখে ফেলছে দ্রুত সব ছক।' এ সবই ছক ভাঙা কবিতা। আধুনিকতার পুরোনো ছাঁচ ভেঙে যারা সে সময় কবিতাপাক্ষিক তথা বাংলাকবিতাকে সমৃদ্ধ করেছিল তাদের মধ্য অন্যতম একজন মানসকুমার চিনি।
মানস- এর কাব্যগ্রন্থগুলির নাম জেনে রাখুন :
পাখিদের জন্য আয়না ॥ ঘুমরোগের খাদ্যতালিকা ॥
ঢেউ সমগ্র ॥ অক্ষরের জাদুবিদ্যা ॥ রেলব্রিজে সন্ধ্যা
সহ আরো ১৪ টি বই।
মানস যে আত্মজীবনী মূলক গদ্যটি লিখেছে কবিতাপাক্ষিক -এর দুটি শারদীয় সংখ্যায় , তা বিস্ময়কর ভাবে অন্য রকম।সেই গদ্য অলংকার বর্জিত। লেখা খুব কঠিন। কিন্তু সহজ এবং সরলভাবে জীবনকে দেখেছে এবং দেখিয়েছে মানস।
মানস কেবলমাত্র কবি নয় , একজন প্রকৃত লিটল ম্যাগাজিন কর্মীও।
খড়গপুরে রেলে চাকরি করত। থাকত 'কবিতার বাগান ' - এ। এক সময় ওর বাড়ির নাম ছিল কবিতার বাগান। সেই বাগানে আমার যাতায়াত ছিল। সেসব কথা বললাম না। বা বলতে চাইলাম না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন