সবাই মিলে সিনেমা হলে~ ৪
কান্তিরঞ্জন দে
আপনি কোন্ দলে ?
বাঙালি সিনেমা হলে কেন যায় ? কেন আবার ? সিনেমা দেখতে । কিন্তু কোন সিনেমা?
কেউ যায় , সুন্দর নায়ক-নায়িকা দেখতে । কেউ যায় ঝিংকা - চাকা নাচা গানার টানে । আবার কেউ যায় ঢিসুম ঢিসুম মারপিট আর দুর্ধর্ষ অ্যাকশন দেখে পয়সা উশুল করতে ।
অন্য আরেক অংশের দর্শক অবশ্য যান , গভীর সংবেদনশীল গল্পের টানে । বাস্তবনির্ভর দক্ষ পরিচালনা এবং বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় দেখতে । তারা অবশ্য সংখ্যালঘু ।
হ্যাঁ , আজ এই ২০২০ সালেও দর্শক হিসেবে তারা সংখ্যায় নেহাৎই কম । কথাটা মর্মান্তিক হলেও সত্যি ।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, আজও এ দেশের বহু মানুষের কাছে সিনেমা শুধুই ফুর্তির বিষয় । জন্মলগ্নে সিনেমা ছিল একটা বিস্ময় আর কৌতূহলের ব্যাপার । আরও বেশি বেশি লোককে সিনেমাহলে টেনে আনবার জন্যে ক্রমশ নতুন নতুন কায়দা কানুনের জন্ম হতে লাগল । যন্ত্রপাতি , গল্পের , এবং গল্প বলার নতুন নতুন ক্রিয়া কৌশল ।
গল্পে এল আবেগ । কান্নাকাটি , প্রেম - -ভালোবাসা , এবং নাচগান এবং মারামারি ।
বাংলা সিনেমার বাজেট বরাবরই কম। তাই এখানে সাংসারিক - সামাজিক বিষয়ের ওপর বেশি বেশি জোর দেওয়া বাড়ল । দর্শক যদি প্রেম - রোম্যান্স আর হাসি কান্নায় মজে পয়সা উশুল মনে করে খুশি মনে বাড়ি ফিরতে পারে , তাহলে প্রযোজকেরও পয়সা উশুল হয় ।
বাংলা সিনেমা সেই ছক ভেঙে আজও যে খুব বেশি বেরোতে পেরেছে , এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না । তার মূল কারণ ----- অশিক্ষা ।
আজ থেকে ৪৬- ৪৭ বছর আগে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন , যতদিন না সার্বিকভাবে শিক্ষার প্রসার ঘটছে , ততদিন এ দেশে চলচ্চিত্র সাক্ষরতাও খুব বেশি বাড়বার আশা করা যায় না ।
পশ্চিমবঙ্গে ইদানীং স্কুলকলেজের শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েছে , কোনও সন্দেহ নেই । কিন্তু সিনেমা যে শুধু অযৌক্তিক নাচাগানা , ভাঁড়ামো , মারপিট , কান্নাকাটি এবং ফুর্তি এবং দু-ঘন্টার আমোদের বিষয় নয় , এমন চলচ্চিত্র - সাক্ষর মানুষ আর ক'জন ??
সিনেমা শুধুই টাইমপাশ , আমোদ ।
অথবা সিনেমা , গভীর ভাবনা , গভীরভাবে প্রকাশের একটি শিল্পিত মাধ্যম।
আপনি কোন দলে ?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন