দিবাস্বপ্ন ইন লকডাউন
দেবব্রত রায়
নিশিকান্ত বোধহয়, একটু ঘুমিয়েই পড়েছিল । "বোধহয় "কেন, নিশ্চিত ঘুমিয়েই পড়েছিল নইলে, অমন একটা স্বপ্ন সে দেখলোই বা কী করে! কিন্তু, স্বপ্নটা যে ঠিক কী ছিল সেটাই নিশিকান্ত ঘুম থেকে জেগে উঠে আর মনে করতে পারছেনা ! নিজের মনেই নিশিকান্ত চুকচুক করে একটা শব্দ করে উঠলো । তবে, স্বপ্নটা যে বেশ বিন্দাস ছিল সেটা কিন্তু নিশিকান্ত হলপ করে বলতে পারে। কারণ,ঘুম ভাঙার ঠিক আগের মুহূর্তে নিজের জীভের-ই একটা চুকচুকুনি আওয়াজ নিশিকান্ত-র কানে এসে ঠেকেছিল। ঘুমটা একটু আলগা হতেই, নিশিকান্ত ঠোঁটের কোনে হাত বুলিয়ে যেন একটু লালার ছোঁয়াও পেয়েছিল !
ঘুম থেকে উঠে নিশিকান্ত অনেক্ষন বিছানায় গুম মেরে বসে রইলো। না, কিছুতেই স্বপ্নের বিষয়টা মনে পরছে না ওর। স্বপ্নের ব্যপারটা যাতে না গুল্লিয়ে যায় তাই পেটটা বাথরুমে টম্বুর হয়ে থাকা সত্বেও সে বিছানার থেকে এক ইঞ্চিও নড়লো না। ততক্ষণে ওর গিন্নী মাধবীলতা বন্ধ দরজায় ধপাধপ আওয়াজ করতে শুরু করেছে ! বললো , বলি, এগারোটা বেজে গেল, কখন আর স্নানঘরে যাবে শুনি !
নিশিকান্ত-র মনটা ক্রমেই খারাপ হতে শুরু করলো।নিঘঘাত স্বপ্নটা ভালো ছিল কিন্তু, ঘুমটা ভাঙতেই সব কেমন যেন গোলমাল হয়ে গেল ! কিছুতেই আর স্বপ্নের কথাটা মনে পড়ছেনা ওর ! বাইরের আওয়াজগুলো ক্রমে যতই বাড়ছিল ততই যেন স্বপ্নটা নিশিকান্তর থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল ! অনেক্ষন বিছানায় গুম মেরে বসে বসেই নিশিকান্ত ভাবলো, জীবনে সে এই সময়ে কোনোকালেই ঘরে থাকেনা, ঘুম তো দূরস্ত।অর্থাৎ, দিনের বেলায় স্বপ্ন দেখা তার কস্মিনকালের অভ্যাসেও নেই আর তাছাড়া, দিবাস্বপ্ন কার কবেই বা কী কাজে লেগেছে! কথাটা মনে হতেই নিশিকান্ত উঠে শোবার ঘরের দরজা-জানালাগুলো হাট করে খুলে দিল। কোত্থাও কোনো গাড়ি-ঘোড়া-র বেয়াদব আওয়াজ নেই, মেছোবাজারের অসহ্য চিৎকার-চেচামেচি নেই শুধু , বাইরের বাতাস আর, উজ্জ্বল আলো-র সঙ্গে সঙ্গে ঘরের ভিতরে এসে ঢুকে পড়ছে কতশত নাম জানা, না-জানা পাখির আওয়াজ ! নিশিকান্ত টের পেল একটু একটু করে তার ভেতরের সমস্ত ডিপ্রেশন হাওয়া আর, আলো এসে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন