সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
৭৭.
প্রদীপ কর , এই নামটি উচ্চারিত হলেই আমি যে-কটি দৃশ্য দেখতে পাই, সেগুলি নিম্নরূপ :
১ ॥ বিষ্ণুপুর , মন্দিরময় বিষ্ণুপুর ।
২ ॥ সমাকৃতি নামক একটি সমান্তরাল পত্রিকার রুচিবোধ ।
৩ ॥ সমস্ত রকম ঔদ্ধত্য থেকে বহুদূরে বসবাসকারী একজন তরুণ।
৪ ॥ প্রকাশনার ব্যাপারে খুবই সিলেকটিভ। বাজারি ব্যাপারকে সযত্নে এড়িয়ে চলার মনোভাব।
৫ ॥ আত্মসম্মানবোধ।
এই পাঁচটি গুণ প্রদীপ করের সহজাত। কখনোই এর জন্য সময় নষ্ট করতে হয়নি। আরোপিত সৌন্দর্য -কে চিরদিন পরিহার করতে চেয়েছে।
এখন দ্যাখা যাক প্রদীপ করের কবিতা :
1994 - এ প্রদীপের বয়স কত ছিল বলতে পারব না।
কপা ২৮ -এ ওর প্রথম কবিতা ছাপা হয়েছিল। গুচ্ছ কবিতা।
দুই পর্বের এপিটাফ , গোলাপ ও কাঁটার গল্প এবং স্রোতের কবিতাগুচ্ছ । প্রায় প্রতিটিই ছন্দে লেখা। তবু আমাকে আকর্ষণ করেছিল। কেন ? দেখুন :
১ ॥ মেঘ ও জলের দিনরাত ছন্দপতন হয়।
২ ॥ সবশেষে মেঘবৃষ্টি জন্মানোর আগেই লিখে ফেলব ছই নৌকোর রাজ্য বিস্তার ।
৩ ॥ মৃতের দেহের উপর আমাদের রণাঙ্গণ।
৪ ॥ মৃত্যুপথে নামতে থাকে ছায়া
ছায়ার শরীর সমস্ত দিনরাত
মৃত্যু আমার আদিগন্ত মায়া
মায়া আমার সমুদ্রপ্রপাত।
এবার কপা ৪৫ -এর কবিতাটি :
কবিতাটির নাম : তাপ। আমি এই কবিতাটি থেকে মাত্র দুটি বাক্য দেখাতে চাইছি :
১॥ একবিন্দু কাঠের উপর ঝরে পড়বে পালকের উষ্ণ
নিশ্বাস।
২ ॥ মেয়েটির হাতছানি সরিয়ে দেয় কুয়াশার উষ্ণ
পালক।
মাননীয় পাঠক একটু মনোযোগ দিয়ে দেখুন আমার দুটি উদ্ধৃতি। কবিতাটির নাম : তাপ।
বলার অপেক্ষা রাখে না , তাপের সঙ্গে উষ্ণ শব্দটির ঘনিষ্ঠতার কথা।
' উষ্ণ ' এই বিশেষণটিকে প্রদীপ স্ব-ইচ্ছায় দু-বার ব্যবহার করেছিল তখন। নিশ্বাস এবং পালক , দুটির বিশেষণ ছিল ' উষ্ণ '।
পাঠক লক্ষ রাখলেই আমি তৃপ্ত হব। আমি কবিতাপাক্ষিকের প্রথম পর্বের চিহ্নগুলি তুলে ধরতে চাইছি। এর বেশি কোনো লক্ষ নেই ,
1996- এ একটা গদ্য লিখেছিলাম।
' স্বপ্নলোকের চাবি '।
সেটা কীভাবে শুরু করেছিলাম , পড়ে দেখুন :
ধরে নিতে পারি প্রত্যেক কবির একটি সুদৃশ্য চাবির রিং আছে। আমি নিশ্চিত সেই রিঙের মধ্যে একটি চাবি অবশ্যই স্বপ্নলোকের।
ওই নিবন্ধটিতে আমি মান্যবর শঙ্খ ঘোষ , বিনয় মজুমদার এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার কথাও বলেছিলাম।
স্বপ্নকেন্দ্রিক ওই আলোচনাটির ভেতর রবীন্দ্রনাথও এসে গিয়েছিলেন।
আমার বিশ্বাস প্রদীপ করের কাছেও এককপি স্বপ্নলোকের চাবি ছিল। আর সেই চাবি ব্যবহার করে ও স্বপ্নলোকে আসাযাওয়া করত।
ওই স্বপ্নলোকে উড়ে আসত দ্বীপের পরিরা। কিংবা দ্যাখা দিতেন কুয়াশার বর্মপরা দেবী।
অর্থাৎ যাকে আমি স্বপ্নলোক বলছি , আপনি তাকে কল্পলোক নামেও চিহ্নিত করতে পারেন। তাতে ভাগফলের কোনো পরিবর্তন হবে না।ভাগশেষের কিছুটা পরিবর্তন হতেও পারে। এটুকু জানাবার ছিল।আরো জানাবার ছিল সেসময় কৌশিক বাজারী এবং সুব্রত পণ্ডিত , এই দুই নবীন কবিও কবিতাপাক্ষিক-কে সমৃদ্ধ করেছিলেন। সেসব সমৃদ্ধকথা নিয়েই এই লেখা।
আজ ফেসবুক থেকে জানলাম সাম্যব্রত জোয়ারদার করোনা-য় আক্রান্ত। সাম্য ছিল কবিতাপাক্ষিক ব্যাচের কৃতী কবি। আগামীকাল সাম্যব্রতকথা।
প্রভাত চৌধুরী
৭৭.
প্রদীপ কর , এই নামটি উচ্চারিত হলেই আমি যে-কটি দৃশ্য দেখতে পাই, সেগুলি নিম্নরূপ :
১ ॥ বিষ্ণুপুর , মন্দিরময় বিষ্ণুপুর ।
২ ॥ সমাকৃতি নামক একটি সমান্তরাল পত্রিকার রুচিবোধ ।
৩ ॥ সমস্ত রকম ঔদ্ধত্য থেকে বহুদূরে বসবাসকারী একজন তরুণ।
৪ ॥ প্রকাশনার ব্যাপারে খুবই সিলেকটিভ। বাজারি ব্যাপারকে সযত্নে এড়িয়ে চলার মনোভাব।
৫ ॥ আত্মসম্মানবোধ।
এই পাঁচটি গুণ প্রদীপ করের সহজাত। কখনোই এর জন্য সময় নষ্ট করতে হয়নি। আরোপিত সৌন্দর্য -কে চিরদিন পরিহার করতে চেয়েছে।
এখন দ্যাখা যাক প্রদীপ করের কবিতা :
1994 - এ প্রদীপের বয়স কত ছিল বলতে পারব না।
কপা ২৮ -এ ওর প্রথম কবিতা ছাপা হয়েছিল। গুচ্ছ কবিতা।
দুই পর্বের এপিটাফ , গোলাপ ও কাঁটার গল্প এবং স্রোতের কবিতাগুচ্ছ । প্রায় প্রতিটিই ছন্দে লেখা। তবু আমাকে আকর্ষণ করেছিল। কেন ? দেখুন :
১ ॥ মেঘ ও জলের দিনরাত ছন্দপতন হয়।
২ ॥ সবশেষে মেঘবৃষ্টি জন্মানোর আগেই লিখে ফেলব ছই নৌকোর রাজ্য বিস্তার ।
৩ ॥ মৃতের দেহের উপর আমাদের রণাঙ্গণ।
৪ ॥ মৃত্যুপথে নামতে থাকে ছায়া
ছায়ার শরীর সমস্ত দিনরাত
মৃত্যু আমার আদিগন্ত মায়া
মায়া আমার সমুদ্রপ্রপাত।
এবার কপা ৪৫ -এর কবিতাটি :
কবিতাটির নাম : তাপ। আমি এই কবিতাটি থেকে মাত্র দুটি বাক্য দেখাতে চাইছি :
১॥ একবিন্দু কাঠের উপর ঝরে পড়বে পালকের উষ্ণ
নিশ্বাস।
২ ॥ মেয়েটির হাতছানি সরিয়ে দেয় কুয়াশার উষ্ণ
পালক।
মাননীয় পাঠক একটু মনোযোগ দিয়ে দেখুন আমার দুটি উদ্ধৃতি। কবিতাটির নাম : তাপ।
বলার অপেক্ষা রাখে না , তাপের সঙ্গে উষ্ণ শব্দটির ঘনিষ্ঠতার কথা।
' উষ্ণ ' এই বিশেষণটিকে প্রদীপ স্ব-ইচ্ছায় দু-বার ব্যবহার করেছিল তখন। নিশ্বাস এবং পালক , দুটির বিশেষণ ছিল ' উষ্ণ '।
পাঠক লক্ষ রাখলেই আমি তৃপ্ত হব। আমি কবিতাপাক্ষিকের প্রথম পর্বের চিহ্নগুলি তুলে ধরতে চাইছি। এর বেশি কোনো লক্ষ নেই ,
1996- এ একটা গদ্য লিখেছিলাম।
' স্বপ্নলোকের চাবি '।
সেটা কীভাবে শুরু করেছিলাম , পড়ে দেখুন :
ধরে নিতে পারি প্রত্যেক কবির একটি সুদৃশ্য চাবির রিং আছে। আমি নিশ্চিত সেই রিঙের মধ্যে একটি চাবি অবশ্যই স্বপ্নলোকের।
ওই নিবন্ধটিতে আমি মান্যবর শঙ্খ ঘোষ , বিনয় মজুমদার এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার কথাও বলেছিলাম।
স্বপ্নকেন্দ্রিক ওই আলোচনাটির ভেতর রবীন্দ্রনাথও এসে গিয়েছিলেন।
আমার বিশ্বাস প্রদীপ করের কাছেও এককপি স্বপ্নলোকের চাবি ছিল। আর সেই চাবি ব্যবহার করে ও স্বপ্নলোকে আসাযাওয়া করত।
ওই স্বপ্নলোকে উড়ে আসত দ্বীপের পরিরা। কিংবা দ্যাখা দিতেন কুয়াশার বর্মপরা দেবী।
অর্থাৎ যাকে আমি স্বপ্নলোক বলছি , আপনি তাকে কল্পলোক নামেও চিহ্নিত করতে পারেন। তাতে ভাগফলের কোনো পরিবর্তন হবে না।ভাগশেষের কিছুটা পরিবর্তন হতেও পারে। এটুকু জানাবার ছিল।আরো জানাবার ছিল সেসময় কৌশিক বাজারী এবং সুব্রত পণ্ডিত , এই দুই নবীন কবিও কবিতাপাক্ষিক-কে সমৃদ্ধ করেছিলেন। সেসব সমৃদ্ধকথা নিয়েই এই লেখা।
আজ ফেসবুক থেকে জানলাম সাম্যব্রত জোয়ারদার করোনা-য় আক্রান্ত। সাম্য ছিল কবিতাপাক্ষিক ব্যাচের কৃতী কবি। আগামীকাল সাম্যব্রতকথা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন