গোপন মিনার: বর্ষার ভাবনা
রুদ্র কিংশুক
পর্ব ২
আজ সমুদ্রগড় ফেরার সময় গাড়িচালক মঙ্গল কিস্কুকে গাড়ি থামাতে বললাম। গুরুজোয়ানি নদীর ওপর ব্রিজে। পাশেই সুবিস্তীর্ণ ভগবতীতলার মাঠ। লোকে বলে পাথার মাঠ। সমুদ্র সমান বিস্তৃতির কথা ভেবে অতীতকালের কোনো কল্পনাপ্রবন মানুষ হয়তো করেছিল এমন নামকরণ। গৃহে প্রত্যাবর্তনের পথে সমুদ্রগড়ের বিভিন্ন জায়গায় আমার গাড়ি থেকে নেমে পড়ার অভ্যাসের কথা মঙ্গল জানে। তার চোখে সর্বদা এক টুকরো কৌতুক ভাসমান। আমিতো আমার শৈশব-কৈশোরের ছিন্ন চিহ্নকল্পগুলোকে জোড়া দিতে দিতে একটা মালা গাঁথার চেষ্টা করি।
শৈশবে অনেকবার এসেছি এই ক্ষীণতোয়া নদীটির কাছে। এখনো আমি তার ভেতর দুই কাঁধে সর্পঝোলানো আশ্চর্য কিশোরীটিকেই দেখি। এই ভগবতীতলার মাঠ আর তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা কত খন্ড- অখন্ড কাহিনী আমার বুকের ভেতর পাট করে ন্যাপথলিন দিয়ে রাখা আছে।
একবার ভগবতীতলার মাঠে এসেছিলাম ধানজমির ভেতর থেকে লম্বা লম্বা শীষ- মুকুরিত ঘাস সংগ্রহ করতে। আমার একটা আদরের মোষ-ছানা ছিল। তাকে খাওয়াবো বলে। ঘাসের বোঝা মাথায় করে যখন বাড়ি ফিরলাম, আমার সারা শরীর ঘাস নির্গত জল আর মাটির গন্ধে ভরে উঠেছে। আমি হয়ে উঠেছি যেন সেই প্রাচীনকালের কোন রাখাল বালক। তার ভেতর পুঁথির গজগজানি নেই। আদুল গা। কেবল মাটির সহজ গান। বাড়ি ফিরে দেখি, বাবার কঠিন প্রহার অপেক্ষা করছে। এই তো ভিজে পিঠের ওপর কাঁচাকঞ্চির দাগগুলো আবার স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠছে।অই ভগবতীতলার মাঠের আকাশের মাথায় ঘনায়মান মেঘপুঞ্জের মধ্যে সেই মহিষ-শাবকের উল্লসিত আহ্বান।
আমার গা থেকে এখন খসে পড়তে চাইছে জ্ঞানের অহংকার। মিথ্যা মনে হচ্ছে কবি-শিক্ষক- পন্ডিতের ছদ্মবেশ। কৃষিক্ষেতর ছলছল গানে বুকের ভেতর স্মৃতির ঊর্মিমালা। লোভ-মোহ-তঞ্চকতার কীট দংশিত এই আমি, হে বসুন্ধরা, তোমারই সন্তান। জঠর উন্মুক্ত করো গো জননী। তোমার সেই অনাদি অন্ধকারের কারন সমুদ্রে আমি আর একবার হেঁটমুণ্ডু উর্ধ্বপদ হই।
রুদ্র কিংশুক
পর্ব ২
আজ সমুদ্রগড় ফেরার সময় গাড়িচালক মঙ্গল কিস্কুকে গাড়ি থামাতে বললাম। গুরুজোয়ানি নদীর ওপর ব্রিজে। পাশেই সুবিস্তীর্ণ ভগবতীতলার মাঠ। লোকে বলে পাথার মাঠ। সমুদ্র সমান বিস্তৃতির কথা ভেবে অতীতকালের কোনো কল্পনাপ্রবন মানুষ হয়তো করেছিল এমন নামকরণ। গৃহে প্রত্যাবর্তনের পথে সমুদ্রগড়ের বিভিন্ন জায়গায় আমার গাড়ি থেকে নেমে পড়ার অভ্যাসের কথা মঙ্গল জানে। তার চোখে সর্বদা এক টুকরো কৌতুক ভাসমান। আমিতো আমার শৈশব-কৈশোরের ছিন্ন চিহ্নকল্পগুলোকে জোড়া দিতে দিতে একটা মালা গাঁথার চেষ্টা করি।
শৈশবে অনেকবার এসেছি এই ক্ষীণতোয়া নদীটির কাছে। এখনো আমি তার ভেতর দুই কাঁধে সর্পঝোলানো আশ্চর্য কিশোরীটিকেই দেখি। এই ভগবতীতলার মাঠ আর তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা কত খন্ড- অখন্ড কাহিনী আমার বুকের ভেতর পাট করে ন্যাপথলিন দিয়ে রাখা আছে।
একবার ভগবতীতলার মাঠে এসেছিলাম ধানজমির ভেতর থেকে লম্বা লম্বা শীষ- মুকুরিত ঘাস সংগ্রহ করতে। আমার একটা আদরের মোষ-ছানা ছিল। তাকে খাওয়াবো বলে। ঘাসের বোঝা মাথায় করে যখন বাড়ি ফিরলাম, আমার সারা শরীর ঘাস নির্গত জল আর মাটির গন্ধে ভরে উঠেছে। আমি হয়ে উঠেছি যেন সেই প্রাচীনকালের কোন রাখাল বালক। তার ভেতর পুঁথির গজগজানি নেই। আদুল গা। কেবল মাটির সহজ গান। বাড়ি ফিরে দেখি, বাবার কঠিন প্রহার অপেক্ষা করছে। এই তো ভিজে পিঠের ওপর কাঁচাকঞ্চির দাগগুলো আবার স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠছে।অই ভগবতীতলার মাঠের আকাশের মাথায় ঘনায়মান মেঘপুঞ্জের মধ্যে সেই মহিষ-শাবকের উল্লসিত আহ্বান।
আমার গা থেকে এখন খসে পড়তে চাইছে জ্ঞানের অহংকার। মিথ্যা মনে হচ্ছে কবি-শিক্ষক- পন্ডিতের ছদ্মবেশ। কৃষিক্ষেতর ছলছল গানে বুকের ভেতর স্মৃতির ঊর্মিমালা। লোভ-মোহ-তঞ্চকতার কীট দংশিত এই আমি, হে বসুন্ধরা, তোমারই সন্তান। জঠর উন্মুক্ত করো গো জননী। তোমার সেই অনাদি অন্ধকারের কারন সমুদ্রে আমি আর একবার হেঁটমুণ্ডু উর্ধ্বপদ হই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন