রম্যরচনা
স্বাধীনতা
কাশীনাথ সাহা
স্বাধীনতা দিবস নাম শুনলেই আমাদের বুকে ডুগডুগির মতো একটা বাজনা বাজতে শুরু করে।বেশ মিঠিমিঠি সুরেলা। আমরা একটা মৌজ অনুভব করি। আর পনেরই আগষ্ট এলে তো কথাই নেই, ওইদিন হড়পা বানের মত হু হু করে স্বাধীনতার আবেগ ঢুকে যায় আমাদের মগজে। সবাই মেতে উঠি স্বাধীনতার শব্দ তরঙ্গে। যাঁর ভাঙা ঘরে ফাঁক ফোকর দিয়ে কোনদিন স্বাধীনতা ঢুকেনি তিনিও স্বাধীনতার গন্ধে মাতোয়ারা । স্কুলে স্কুলে স্বাধীনতার উৎসব, পাড়ায়, ক্লাবে, পাটী অফিসে, চা দোকানে, ফুচকা ষ্টলে জিলে লে জিলে লে স্বাধীনতা জিলে লে...! নেতাদের ধবধবে পাঞ্জাবি, চুড়িদার। কোথাও সবুজ, কোথাও গেরুয়া। না লালেদের এখনও স্বাধীনতা দিবসে গা গরম হয় না। ইয়ে স্বাধীনতা ঝুটা হ্যায়... ওরা এখনো সেখানেই গড়াগড়ি খাচ্ছে। কিন্তু লাল মানে না বলে স্বাধীনতা দিবস তো থেমে থাকবে না। ক্লাবে পাড়ায় জনগণ মন.. দিয়ে শুরু তারপর বেলা বাড়বার সাথে সাথে স্বাধীনতা তেড়েফুঁড়ে বের হতে থাকে। ডি জের জোরালো শব্দ ব্রহ্মে স্বাধীনতা স্বাদহীন হয়ে টগবগিয়ে ছুটতে থাকে। আগে চটুল হিন্দি, বাংলা গান বাজতো। এখন প্রবল জলোচ্ছ্বাসের মত ডুগ ডুগ ডুগ ডুগ ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না। ওইদিন খাসি মুরগীর বাজার রমরমা। স্বাধীনতা দিবসে একটু মাংস হবে না! তা না হলে কিসের স্বাধীনতা! সাথে একটু ঢুকুঢুকু না হলে ফুল মস্তি হয় না। অতএব বন্ধ ক্লাব ঘরে -- তা বলে কি মাল খাবো না যতই মারো কলসির কানা...। পাড়ার স্কুলে মাষ্টার মশায় পতাকা টাঙাতে গিয়ে ভিরমি খায়। কোন রঙ টা উপরে গেরুয়া না সবুজ। গত বছর তো গেরুয়াটাই ছিল মনে হয়, এবছর সংবিধান সংশোধন করে পতাকার রঙ সংশোধন করে দেয়নি তো। হেডস্যর মাথা চুলকায়। সমস্যার সমাধান করে দেয় পিওন হরিহর, বলে স্যর কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীও যা আর কন্যা কুমারী থেকে কাশ্মীরও তাই। যা চালভাজা তাই মুড়ি। যে দিকটা ভাল লাগছে সেই রঙটাই উপরে করে দিন স্যার। কথাটা মনে ধরে হেডস্যরের তিনি সবুজটা উপরে করতে যাচ্ছিলেন অংকের টিচার অতনুবাবু সদ্য সদ্য মোদী ভক্ত হয়েছেন তিনি তেড়ে এলেন। না না এসব চলবে না দেশজুড়ে এখন গেরুয়া ঝড়, গেরুয়াকে নিচে দেওয়া চলবে না, পাশ থেকে দু চারজন শিক্ষক শিক্ষিকা গলা মেলালেন চলবে না চলবে না। হেডস্যর পতাকা তোলা স্থগিত রেখেই বন্দেমাতরম শ্লোগান দিলেন। বামপন্থিরা বন্দেমাতরম না বলে আরও জোরে চেঁচিয়ে উঠল ইনকেলাব, গেরুয়া পন্থীরা আরও জোরে ভারত মাতা কী জয়, জয় শ্রীরাম। তারপর জনগণ মন তেও ঝামেলা একজন যখন তব শুভ নামে জাগে তে চলছে অন্যজন তখন হিমা দাসের মতো স্প্রিন্ট টেনে জয় হে জয় হে তে পৌঁছে গেছে।
এখন ফ্যাশনের যুগ ঠোঁট, খোঁপায়, হাতে তেরঙের হরেক বাহারি অলঙ্কার অহংকারে টগবগ করছে। আমাদের পাড়ার মিঠুদি দোকানীকে জিজ্ঞেস করলো, দাদা তেরঙা লিপস্টিক আছে? দোকানী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দুদিকে মাথা নাড়ে। না দিদিমণি এখনও বাজারে ও জিনিস ল্যান্ড করেনি। তবে চিন শুনতে পেলে সামনের বছর বাজারে চিনা মাল ঠিক নামিয়ে দেবে।
খেলার মাঠেও স্বাধীনতা ফুটবল ম্যাচ। বিবাহিতদের সাথে অবিবাহিতদের। অর্থাৎ আক্ষরিক অর্থে পরাধীন পুরুষদের সাথে স্বাধীন পুরুষদের মহাসংগ্রাম।
কবিরাও তেড়েফুঁড়ে নেমে যায় স্বাধীনতার পিন্ডি চটকে দিতে। সকাল থেকে ফেসবুকে কবিতায় কবিতায় ছয়লাপ। যে যেমন পারে কবিতা নামিয়ে দিচ্ছে। এখানেও অবাধ স্বাধীনতা। নিষেধ করবে কে? আর করলেই বা শুনছেটা কে। প্রবল টর্নেডোর মতো এক একজনের কবিতা শুনলে শক্তপোক্ত মানুষেরও হার্টফেল অনিবার্য।
রাতের দিকে স্বাধীনতা আরও জমে যায়। ক্লাবে ক্লাবে জমজমাট ফাংশন। হইচই মৌজ মস্তি।
বাধা দেবে কে? প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করে পাড়ার নেতা নাহলে পঞ্চায়েত প্রধান। যাঁরা স্বাধীনতার জন্য প্রান দিয়েছিলেন তাঁরা বেঁচেবর্তে থাকলে নিশ্চিত এসব দেখে আর একবার প্রাণ বিসর্জন দিতেন।
স্বাধীনতা
কাশীনাথ সাহা
স্বাধীনতা দিবস নাম শুনলেই আমাদের বুকে ডুগডুগির মতো একটা বাজনা বাজতে শুরু করে।বেশ মিঠিমিঠি সুরেলা। আমরা একটা মৌজ অনুভব করি। আর পনেরই আগষ্ট এলে তো কথাই নেই, ওইদিন হড়পা বানের মত হু হু করে স্বাধীনতার আবেগ ঢুকে যায় আমাদের মগজে। সবাই মেতে উঠি স্বাধীনতার শব্দ তরঙ্গে। যাঁর ভাঙা ঘরে ফাঁক ফোকর দিয়ে কোনদিন স্বাধীনতা ঢুকেনি তিনিও স্বাধীনতার গন্ধে মাতোয়ারা । স্কুলে স্কুলে স্বাধীনতার উৎসব, পাড়ায়, ক্লাবে, পাটী অফিসে, চা দোকানে, ফুচকা ষ্টলে জিলে লে জিলে লে স্বাধীনতা জিলে লে...! নেতাদের ধবধবে পাঞ্জাবি, চুড়িদার। কোথাও সবুজ, কোথাও গেরুয়া। না লালেদের এখনও স্বাধীনতা দিবসে গা গরম হয় না। ইয়ে স্বাধীনতা ঝুটা হ্যায়... ওরা এখনো সেখানেই গড়াগড়ি খাচ্ছে। কিন্তু লাল মানে না বলে স্বাধীনতা দিবস তো থেমে থাকবে না। ক্লাবে পাড়ায় জনগণ মন.. দিয়ে শুরু তারপর বেলা বাড়বার সাথে সাথে স্বাধীনতা তেড়েফুঁড়ে বের হতে থাকে। ডি জের জোরালো শব্দ ব্রহ্মে স্বাধীনতা স্বাদহীন হয়ে টগবগিয়ে ছুটতে থাকে। আগে চটুল হিন্দি, বাংলা গান বাজতো। এখন প্রবল জলোচ্ছ্বাসের মত ডুগ ডুগ ডুগ ডুগ ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না। ওইদিন খাসি মুরগীর বাজার রমরমা। স্বাধীনতা দিবসে একটু মাংস হবে না! তা না হলে কিসের স্বাধীনতা! সাথে একটু ঢুকুঢুকু না হলে ফুল মস্তি হয় না। অতএব বন্ধ ক্লাব ঘরে -- তা বলে কি মাল খাবো না যতই মারো কলসির কানা...। পাড়ার স্কুলে মাষ্টার মশায় পতাকা টাঙাতে গিয়ে ভিরমি খায়। কোন রঙ টা উপরে গেরুয়া না সবুজ। গত বছর তো গেরুয়াটাই ছিল মনে হয়, এবছর সংবিধান সংশোধন করে পতাকার রঙ সংশোধন করে দেয়নি তো। হেডস্যর মাথা চুলকায়। সমস্যার সমাধান করে দেয় পিওন হরিহর, বলে স্যর কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীও যা আর কন্যা কুমারী থেকে কাশ্মীরও তাই। যা চালভাজা তাই মুড়ি। যে দিকটা ভাল লাগছে সেই রঙটাই উপরে করে দিন স্যার। কথাটা মনে ধরে হেডস্যরের তিনি সবুজটা উপরে করতে যাচ্ছিলেন অংকের টিচার অতনুবাবু সদ্য সদ্য মোদী ভক্ত হয়েছেন তিনি তেড়ে এলেন। না না এসব চলবে না দেশজুড়ে এখন গেরুয়া ঝড়, গেরুয়াকে নিচে দেওয়া চলবে না, পাশ থেকে দু চারজন শিক্ষক শিক্ষিকা গলা মেলালেন চলবে না চলবে না। হেডস্যর পতাকা তোলা স্থগিত রেখেই বন্দেমাতরম শ্লোগান দিলেন। বামপন্থিরা বন্দেমাতরম না বলে আরও জোরে চেঁচিয়ে উঠল ইনকেলাব, গেরুয়া পন্থীরা আরও জোরে ভারত মাতা কী জয়, জয় শ্রীরাম। তারপর জনগণ মন তেও ঝামেলা একজন যখন তব শুভ নামে জাগে তে চলছে অন্যজন তখন হিমা দাসের মতো স্প্রিন্ট টেনে জয় হে জয় হে তে পৌঁছে গেছে।
এখন ফ্যাশনের যুগ ঠোঁট, খোঁপায়, হাতে তেরঙের হরেক বাহারি অলঙ্কার অহংকারে টগবগ করছে। আমাদের পাড়ার মিঠুদি দোকানীকে জিজ্ঞেস করলো, দাদা তেরঙা লিপস্টিক আছে? দোকানী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দুদিকে মাথা নাড়ে। না দিদিমণি এখনও বাজারে ও জিনিস ল্যান্ড করেনি। তবে চিন শুনতে পেলে সামনের বছর বাজারে চিনা মাল ঠিক নামিয়ে দেবে।
খেলার মাঠেও স্বাধীনতা ফুটবল ম্যাচ। বিবাহিতদের সাথে অবিবাহিতদের। অর্থাৎ আক্ষরিক অর্থে পরাধীন পুরুষদের সাথে স্বাধীন পুরুষদের মহাসংগ্রাম।
কবিরাও তেড়েফুঁড়ে নেমে যায় স্বাধীনতার পিন্ডি চটকে দিতে। সকাল থেকে ফেসবুকে কবিতায় কবিতায় ছয়লাপ। যে যেমন পারে কবিতা নামিয়ে দিচ্ছে। এখানেও অবাধ স্বাধীনতা। নিষেধ করবে কে? আর করলেই বা শুনছেটা কে। প্রবল টর্নেডোর মতো এক একজনের কবিতা শুনলে শক্তপোক্ত মানুষেরও হার্টফেল অনিবার্য।
রাতের দিকে স্বাধীনতা আরও জমে যায়। ক্লাবে ক্লাবে জমজমাট ফাংশন। হইচই মৌজ মস্তি।
বাধা দেবে কে? প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করে পাড়ার নেতা নাহলে পঞ্চায়েত প্রধান। যাঁরা স্বাধীনতার জন্য প্রান দিয়েছিলেন তাঁরা বেঁচেবর্তে থাকলে নিশ্চিত এসব দেখে আর একবার প্রাণ বিসর্জন দিতেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন