সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
৮৫.
কৌশিক চক্রবর্তী-কে চিনি 1998 থেকে। কথাটা লেখার পর থামতে হল। চিনতাম , তবে সবটা নয়।সেসময় আমাদের দৈনন্দিন আড্ডায় কবিদের মধ্যে গানের সুযোগ পেত রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায় , যশোধরা রায়চৌধুরী এবং শান্তিময় মুখোপাধ্যায়। কিন্তু কৌশিক গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছে , এমনটা মনে পড়ছে না। কিন্তু এই যোগাযোগহীনতায় জানা গেল কৌশিক চক্রবর্তী বাকিদের সমকক্ষ। বিশেষ করে পুরোনো দিনের গান। কৌশিকের সৌজন্যে ওই গানগুলি আবার শোনার সুযোগ পেলাম। এগুলিই কবিতাকথার মুখবন্ধ। এই মুখবন্ধ থেকে হাঁটা শুরু করা হোক ভবানন্দ রোডের দিকে।
প্রথমেই কৌশিক-কে সাধুবাদ জানাতে চাই , ভবানন্দ রোডে আধুনিকদের একটা সাহিত্যের আড্ডা ছিল । সেই আড্ডাকে ডিঙিয়ে নবীন কিশোর পৌঁছে গিয়েছিল হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের কপা দপ্তরে। বা পৌঁছে যেতে বদ্ধপরিকর ছিল তার লেখার গুণে। ওইসব লেখা ভবানন্দ রোডের আধুনিকরা পড়লে ভিরমি খেতেন কেউ কেউ। কেমন ছিল সে-লেখা :
' আলনার পাশে রেডিওর গায়ে এখন রাত্তিরের মনখারাপের গন্ধ লেগে আছে '
অথবা
' নিষিদ্ধ আপেলে কামড় বসিয়ে ঝুলনের রাতে আমি সশব্দে পেচ্ছাপ করেছিলাম টাটকা কেতকীফুলে '
কৌশিকের কোনো উপায় ছিল না অন্যত্র ঘুরে বেড়ানোর।
এর কিছুদিনের মধ্যেই পেয়ে গেলাম কিছু লাইন :
' তিন মিনিট আগে কিছু ছিল না , তিন মিনিট পরেঔ কিছু নেই বাকি সময়টায় চোখের সামনে একটু পর্দা আর মাথার মধ্যে সাদা ধোঁয়া বাকি সময়টা জলের শব্দ বুকের মধ্যে আর শুকনো ঘাসের গন্ধ '
কবিতাপাক্ষিক ১৫৪ সংখ্যার সূচিটা দেখে নিন :
প্রভাত চৌধুরী-র Notes on Birds : ঘুঘু থেকে শকুন, মোট ২০ টি পক্ষীকথা।
মুরারি সিংহ-র গন্ধসাবানের ৮ ছেলেবেলা
জয়দীপ চক্রবর্তী-র রবীন্দ্রনাথকে নিবেদিত পুষ্পার্ঘ্য
কৌশিক চক্রবর্তী-র জীবন সম্পর্কিত অনুভূতিমালা
মোহম্মদ শাহবুদ্দিন ফিরোজ-এর স্মৃতিদর্পণে বন্ধুজন।
ঠিক এরকম একটি সংখ্যায় কৌশিকের প্রমাণ করার দায়িত্ব ছিল ও নিজেও কবিতাপাক্ষিকের একটি স্তম্ভ।
এখন দ্যাখা যাক কৌশিকের জীবন সম্পর্কিত অনুভূতিমালাকে। আমি দেখছি। আপনিও দেখুন :
১ ॥ এটা একটা মারকাটারি জীবন ,
২ ॥ টি -ব্রেকের পরে ঠিক কত ওভার ব্যাট করবে বয়ঃসন্ধিক্ষণের টিশার্ট আর দর্শক গ্যালারিতে বসে চিটি লিখবে কোন গোলাপি নোটখাতা, তা হয়ত জলশালুকের সিলেবাসভুক্ত নয়।
৩ ॥ আমরাও কোনো ভুলে যাওয়া প্রেমের হলুদ শাড়ি খুলে নিতে নিতে লিখে রাখবো এক বিস্মৃত সুগন্ধী হাতরুমালের কথা।
৪ ॥ বাথরুমে মেঝেতে জমা ভোঁতা সেফটিপিন দেখে আমার সারাটা শরীর উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে।
৫ ॥ কোনো খাঁচার গরাদ দেখলে যেমন ভেতরে লুকিয়ে থাকা সিংহের অন্তরীণ রাত্রির কথা জানা যায় না , তেমনিই মোমবাতির সলতেয় কখনই প্রেমিকপ্রেমিকার শোষকচোখ আঁকা থাকবে না যা থেকে নিকষ অন্ধকারে জোনাকিপোকারা জন্ম নেয়।
৬ ॥ কলমের শীর্ষভাগে জমে থাকা আমাদের সবুজ ইচ্ছেগুলো ক্রমশ ক্লোরোফিলযুক্ত গাছেদের মতো হয়ে যায়।
কৌশিক চক্রবর্তী-র অনুভূতিমালা যে অগ্রাণের অনুভূতিমালা নয় , এটা বলে না রাখলে আমার পাপ হবে। কৌশিকের অনুভূতি কৌশিকের একক।
কপা ১৫৭ -তে আবার কৌশিক ।ওই সংখ্যায় কৌশিক-এর কবিতার শিরোনামগুলি :
১ ॥ একটি নিরুদ্দেশ কবিতা
২ ॥ একটি আপাতভদ্র কবিতা
৩॥ ইলেকশনে দাঁড়াইবার সহজ উপায়
সম্মাননীয় আধুনিক কবিজনেরা আপনাদের কবিতার শিরোনামের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন তো কিছু মিল চোখে পড়ছে কিনা !
' এই লিখলাম " পথ '। আচ্ছা ? পথ কেমন দেখতে হয়?বেশ ধরা যাক দুপাশে কিছু ঝুপড়ি থাকে, '
কিংবা পরের কবিতায় :
' টেবিলপ্রান্তে যে আপাতভদ্র কবিতাটি বসে একদৃষ্টে চেয়ে রয়েছে এদিকে ,'
আবার ইলেকশনে দাঁড়াইবার অনেকগুলি সহজ উপায় বলেছে কৌশিক। তার মধ্যে একটি উপায় :
' প্রত্যেক রোববার গড়ের মাঠে পাঁচ মিনিট হেঁটে পায়রাদের বাদামভাজা খাওয়াতে পারেন।খবরদার ভিকিরিদের খেতে দেবেন না , বড়োজোর উপদেশ দিতে পারেন। '
কৌশিক-এর একটি কবিতা ' ভবানন্দরোড কথা ',আমার খুব পছন্দের কবিতা। ওই দীর্ঘকবিতাটি থেকে জাস্ট কয়েকটি অনুধ্যান তুলে দিচ্ছি :
ব্যর্থ ঝুমঝুমির আওয়াজ ॥ বাদামি রঙের জিজ্ঞাসাচিহ্ন ॥ হলুদ পাঞ্জাবিগুলো অনেকটা মন্টেসরির মোমবাতি বা সার্কাসপালানো সিংহের মতো দেখতে বলেই ... ... ....
কৌশিক চক্রবর্তী-র চাকরিজীবনের কোনো কথাই বলা হল না। সেসবও বেশ বর্ণময়।
প্রভাত চৌধুরী
৮৫.
কৌশিক চক্রবর্তী-কে চিনি 1998 থেকে। কথাটা লেখার পর থামতে হল। চিনতাম , তবে সবটা নয়।সেসময় আমাদের দৈনন্দিন আড্ডায় কবিদের মধ্যে গানের সুযোগ পেত রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায় , যশোধরা রায়চৌধুরী এবং শান্তিময় মুখোপাধ্যায়। কিন্তু কৌশিক গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছে , এমনটা মনে পড়ছে না। কিন্তু এই যোগাযোগহীনতায় জানা গেল কৌশিক চক্রবর্তী বাকিদের সমকক্ষ। বিশেষ করে পুরোনো দিনের গান। কৌশিকের সৌজন্যে ওই গানগুলি আবার শোনার সুযোগ পেলাম। এগুলিই কবিতাকথার মুখবন্ধ। এই মুখবন্ধ থেকে হাঁটা শুরু করা হোক ভবানন্দ রোডের দিকে।
প্রথমেই কৌশিক-কে সাধুবাদ জানাতে চাই , ভবানন্দ রোডে আধুনিকদের একটা সাহিত্যের আড্ডা ছিল । সেই আড্ডাকে ডিঙিয়ে নবীন কিশোর পৌঁছে গিয়েছিল হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের কপা দপ্তরে। বা পৌঁছে যেতে বদ্ধপরিকর ছিল তার লেখার গুণে। ওইসব লেখা ভবানন্দ রোডের আধুনিকরা পড়লে ভিরমি খেতেন কেউ কেউ। কেমন ছিল সে-লেখা :
' আলনার পাশে রেডিওর গায়ে এখন রাত্তিরের মনখারাপের গন্ধ লেগে আছে '
অথবা
' নিষিদ্ধ আপেলে কামড় বসিয়ে ঝুলনের রাতে আমি সশব্দে পেচ্ছাপ করেছিলাম টাটকা কেতকীফুলে '
কৌশিকের কোনো উপায় ছিল না অন্যত্র ঘুরে বেড়ানোর।
এর কিছুদিনের মধ্যেই পেয়ে গেলাম কিছু লাইন :
' তিন মিনিট আগে কিছু ছিল না , তিন মিনিট পরেঔ কিছু নেই বাকি সময়টায় চোখের সামনে একটু পর্দা আর মাথার মধ্যে সাদা ধোঁয়া বাকি সময়টা জলের শব্দ বুকের মধ্যে আর শুকনো ঘাসের গন্ধ '
কবিতাপাক্ষিক ১৫৪ সংখ্যার সূচিটা দেখে নিন :
প্রভাত চৌধুরী-র Notes on Birds : ঘুঘু থেকে শকুন, মোট ২০ টি পক্ষীকথা।
মুরারি সিংহ-র গন্ধসাবানের ৮ ছেলেবেলা
জয়দীপ চক্রবর্তী-র রবীন্দ্রনাথকে নিবেদিত পুষ্পার্ঘ্য
কৌশিক চক্রবর্তী-র জীবন সম্পর্কিত অনুভূতিমালা
মোহম্মদ শাহবুদ্দিন ফিরোজ-এর স্মৃতিদর্পণে বন্ধুজন।
ঠিক এরকম একটি সংখ্যায় কৌশিকের প্রমাণ করার দায়িত্ব ছিল ও নিজেও কবিতাপাক্ষিকের একটি স্তম্ভ।
এখন দ্যাখা যাক কৌশিকের জীবন সম্পর্কিত অনুভূতিমালাকে। আমি দেখছি। আপনিও দেখুন :
১ ॥ এটা একটা মারকাটারি জীবন ,
২ ॥ টি -ব্রেকের পরে ঠিক কত ওভার ব্যাট করবে বয়ঃসন্ধিক্ষণের টিশার্ট আর দর্শক গ্যালারিতে বসে চিটি লিখবে কোন গোলাপি নোটখাতা, তা হয়ত জলশালুকের সিলেবাসভুক্ত নয়।
৩ ॥ আমরাও কোনো ভুলে যাওয়া প্রেমের হলুদ শাড়ি খুলে নিতে নিতে লিখে রাখবো এক বিস্মৃত সুগন্ধী হাতরুমালের কথা।
৪ ॥ বাথরুমে মেঝেতে জমা ভোঁতা সেফটিপিন দেখে আমার সারাটা শরীর উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে।
৫ ॥ কোনো খাঁচার গরাদ দেখলে যেমন ভেতরে লুকিয়ে থাকা সিংহের অন্তরীণ রাত্রির কথা জানা যায় না , তেমনিই মোমবাতির সলতেয় কখনই প্রেমিকপ্রেমিকার শোষকচোখ আঁকা থাকবে না যা থেকে নিকষ অন্ধকারে জোনাকিপোকারা জন্ম নেয়।
৬ ॥ কলমের শীর্ষভাগে জমে থাকা আমাদের সবুজ ইচ্ছেগুলো ক্রমশ ক্লোরোফিলযুক্ত গাছেদের মতো হয়ে যায়।
কৌশিক চক্রবর্তী-র অনুভূতিমালা যে অগ্রাণের অনুভূতিমালা নয় , এটা বলে না রাখলে আমার পাপ হবে। কৌশিকের অনুভূতি কৌশিকের একক।
কপা ১৫৭ -তে আবার কৌশিক ।ওই সংখ্যায় কৌশিক-এর কবিতার শিরোনামগুলি :
১ ॥ একটি নিরুদ্দেশ কবিতা
২ ॥ একটি আপাতভদ্র কবিতা
৩॥ ইলেকশনে দাঁড়াইবার সহজ উপায়
সম্মাননীয় আধুনিক কবিজনেরা আপনাদের কবিতার শিরোনামের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন তো কিছু মিল চোখে পড়ছে কিনা !
' এই লিখলাম " পথ '। আচ্ছা ? পথ কেমন দেখতে হয়?বেশ ধরা যাক দুপাশে কিছু ঝুপড়ি থাকে, '
কিংবা পরের কবিতায় :
' টেবিলপ্রান্তে যে আপাতভদ্র কবিতাটি বসে একদৃষ্টে চেয়ে রয়েছে এদিকে ,'
আবার ইলেকশনে দাঁড়াইবার অনেকগুলি সহজ উপায় বলেছে কৌশিক। তার মধ্যে একটি উপায় :
' প্রত্যেক রোববার গড়ের মাঠে পাঁচ মিনিট হেঁটে পায়রাদের বাদামভাজা খাওয়াতে পারেন।খবরদার ভিকিরিদের খেতে দেবেন না , বড়োজোর উপদেশ দিতে পারেন। '
কৌশিক-এর একটি কবিতা ' ভবানন্দরোড কথা ',আমার খুব পছন্দের কবিতা। ওই দীর্ঘকবিতাটি থেকে জাস্ট কয়েকটি অনুধ্যান তুলে দিচ্ছি :
ব্যর্থ ঝুমঝুমির আওয়াজ ॥ বাদামি রঙের জিজ্ঞাসাচিহ্ন ॥ হলুদ পাঞ্জাবিগুলো অনেকটা মন্টেসরির মোমবাতি বা সার্কাসপালানো সিংহের মতো দেখতে বলেই ... ... ....
কৌশিক চক্রবর্তী-র চাকরিজীবনের কোনো কথাই বলা হল না। সেসবও বেশ বর্ণময়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন