সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
৭৫.
৭৫ , এই সংখ্যাটির বঙ্গীকরণ করেছিল কবি বিভাবসু।গতবছর।লিখেছিল : ৭৫ = শুভ্রক। আর এই শুভ্রক প্লাটিনামজাত।
এই কিস্তিটিকে বিশেষ মর্যাদা দিতে চাইছি আমি। এজন্য ধরতে হবে সকালের ব্লাক ডায়মন্ড নামক ট্রেনটি। গন্তব্য দুর্গাপুর।
দুর্গাপুর হল আমার জন্য নির্মিত একটা বিশেষ বন্দর।কলকাতার জাহাজকে এখানে এসে থামতে হয়। আর আমরা বাঁকুড়ার কুলিকামিনরা ট্রেন থেকে নেমে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। না , আমার কোনো ব্যস্ততা ছিল না । কোনোদিন। এখনো নেই। আমি ওই বন্দর এলাকাতেই পেয়ে যেতাম আমার আত্মজনদের। রজতশুভ্র গুপ্ত , নিমাই বন্দ্যোপাধ্যায় , পিনাকীরঞ্জন সামন্ত , রথীন বন্দ্যোপাধ্যায় , ব্রজকুমার সরকার প্রমূখ তরুণ কবিকূলকে।আমার আত্মজনদের। আজ আমি বলব রজতশুভ্র-র কথা।
এই রজতশুভ্র-র কথা আগে এই নিবন্ধে উল্লেখ করেছিলাম অগ্নিদগ্ধ বইমেলা প্রসঙ্গে।
প্রথমেই একটা অজানা বা অপ্রকাশিত কথা জানিয়ে রাখি ।সেটা হল : রজতশুভ্রকে আমার সামনে নিয়ে এসেছিলেন কবিরুল ইসলাম , আমাদের আত্মজন।
অর্থাৎ পরিচয়ের সূত্র ছিলেন কবিরুল।
এবং আরো একটা কথা ' শিশুতীর্থ '- কে সাক্ষ্য রেখে বলতে পারি : কবিতাপাক্ষিক এই প্রতিষ্ঠানটিকে মনপ্রাণ যে ক-জন আপন করে নিয়েছিল তাদের মধ্যে রজতশুভ্র-র অবস্থান প্রথম সারিতে। এবং আরো স্পষ্টভাবে ঘোষণা করতে পারি পোস্টমডার্ন বাংলা কবিতাকে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে রজতশুভ্র - র অবদান আমাদের কারো থেকেই কম নয়।
এবার কবি রজতশুভ্র গুপ্ত-র কবিতার কাছে যাওয়া যাক। কবিতাপাক্ষিক ৫২ -তে প্রকাশিত হয় রজতশুভ্র -র ' হে বিরহী হায় ' কবিতাটি প্রকাশিত হয়। পড়া দেখুন দুটি লাইন :
' পথের বাঁকে সেই জামগাছ , এক চিলতে
ফাঁক দিয়ে ভর রাতে চাঁদ দেখা যায়। '
এই কবিই তার দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে কীভাবে , সেটিই দেখাতে চাইছি এই পর্বে।
কবি রজতশুভ্র গুপ্ত - র দ্বিতীয় ইনিংসের কিছু কিছু অংশ আমি উদ্ধৃত করছি , আমার পছন্দ মতো। আগ্রহী পাঠকদের আমি পুরো কবিতাটি ফোটো তুলে পাঠিয়ে দেব , কথা দিলাম।
১ ॥ ক্রমশ যোগাযোগ স্পষ্ট হচ্ছে। দুটি বর্ণের মধ্যে
আর কোনো ফাঁক নেই।
২ ॥ আমি ভাবতেও পারিনি তোমার রঙের ওপর
মিশে যেতে পারে কোন স্বল্প উচ্চতার ভয়
৩ ॥ তুমি অস্পষ্ট হলেই বনের ভেতর পেসেন্স খেলতে
শুরু করা
৪ ॥ প্রতিটি উনুনের ভেতর অন্তত একটি আন্তরিক
গর্ত থাকে
৫ ॥ এখন বেশ বালি দিয়ে বালি দিয়ে একটা বিশাল
ঘর বানাব আর সেই ঘরের ভেতর ঢুকে পড়বে
একটা আস্ত মরুভূমি
৬ ॥ আমার নীল জ্যাকেট থেকে ছড়িয়ে পড়ে কিছু
অন্তরঙ্গ লণ্ঠনের আলো
'জ্যাকেট বিষয়ক ' প্রথম শুরু হয়েছিল এভাবে। আর শেষ হয়েছিল কীভাবে দেখুন :
৬ ক ॥ যে কোনো আলট্রাশক্তি শব্দ / ডিটারজেন্টে
একবার ডোবালেই জ্যাকেটটি বৃষ্টির পর
মেঘমুক্ত / আকাশ হয়ে যাবে
৭ ॥ অতি সাবধানে শান্ত সে তুলে নিচ্ছে এক /
নির্বাসনের পোশাক
৮ ॥ অথচ তুমি জানতে প্রতিটি দ্রাঘিমারেখার দৈর্ঘ্য
সমান তবুও সমান্তরাল নয়
৯ ॥ একেকটা দিন বাতিল পিয়ানোর পেছনে লুকোতে
ভালো লাগে
১০ ॥ শব্দকোষ ছেড়ে / কবি এগিয়ে যাচ্ছেন
আলোকিত ব্যালকনিতে এবং রাত্রির / অসংখ্য
অ্যালবামচিহ্ন থেকে অনুভব করছেন
প্রজাপতির কম্পন
১১ ॥ আসলে কীভাবে দাঁড়িয়ে আছি কোন
অক্ষরেখা ধরে এগিয়ে গেলে বিষুবরেখার নীচে
সমান্তরাল একটা দাগ টানা যায়
১২ ॥ নীল অন্ধকার থেকে যখন সবুজ আলোতে
এলাম লক্ষ করলাম প্রশস্ত রাস্তা জুড়ে তুমি
দাঁড়িয়ে আছ
১৩ ॥ সুতরাং গন্ধ এবং রং -এর সাথে কম্পন মিশিয়ে
তুমি তৈরি করছ আরেক আকাশ মাটি
হাওয়ার অনুভব
১৪ ॥ সারারাত বকলসের পেছনে আত্মগোপন করে
কোনো ইচ্ছাই আর সাদা থাকে না
১৫ ॥ প্রতিটি ঘুমের ট্যাবলেটের মধ্যে লুকিয়ে থাকে
অপমানের চিহ্ন
এই পনেরোটি কবিতার কিছু অংশ তুলে দিলাম পাঠকদের উৎসাহের কাছে। অনুরোধ কবি রজতশুভ্র গুপ্ত-র কবিতা পড়ুন। পড়লেই চিহ্নিতকরণ করতে পারবেন এই পোস্টমডার্ন কালখণ্ডের একজন প্রধান কবিকে।
ইতিহাস এবং প্রস্তরলিপিগুলিকে মুছে দেবার ক্ষমতা কারো নেই । ছাপা অক্ষরমালাও বেঁচে থাকবে। তখন আপশোশ করতে হবে , রজতশুভ্র-কে সময়মতো স্বীকৃতি না দেবার জন্য।
প্রভাত চৌধুরী
৭৫.
৭৫ , এই সংখ্যাটির বঙ্গীকরণ করেছিল কবি বিভাবসু।গতবছর।লিখেছিল : ৭৫ = শুভ্রক। আর এই শুভ্রক প্লাটিনামজাত।
এই কিস্তিটিকে বিশেষ মর্যাদা দিতে চাইছি আমি। এজন্য ধরতে হবে সকালের ব্লাক ডায়মন্ড নামক ট্রেনটি। গন্তব্য দুর্গাপুর।
দুর্গাপুর হল আমার জন্য নির্মিত একটা বিশেষ বন্দর।কলকাতার জাহাজকে এখানে এসে থামতে হয়। আর আমরা বাঁকুড়ার কুলিকামিনরা ট্রেন থেকে নেমে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। না , আমার কোনো ব্যস্ততা ছিল না । কোনোদিন। এখনো নেই। আমি ওই বন্দর এলাকাতেই পেয়ে যেতাম আমার আত্মজনদের। রজতশুভ্র গুপ্ত , নিমাই বন্দ্যোপাধ্যায় , পিনাকীরঞ্জন সামন্ত , রথীন বন্দ্যোপাধ্যায় , ব্রজকুমার সরকার প্রমূখ তরুণ কবিকূলকে।আমার আত্মজনদের। আজ আমি বলব রজতশুভ্র-র কথা।
এই রজতশুভ্র-র কথা আগে এই নিবন্ধে উল্লেখ করেছিলাম অগ্নিদগ্ধ বইমেলা প্রসঙ্গে।
প্রথমেই একটা অজানা বা অপ্রকাশিত কথা জানিয়ে রাখি ।সেটা হল : রজতশুভ্রকে আমার সামনে নিয়ে এসেছিলেন কবিরুল ইসলাম , আমাদের আত্মজন।
অর্থাৎ পরিচয়ের সূত্র ছিলেন কবিরুল।
এবং আরো একটা কথা ' শিশুতীর্থ '- কে সাক্ষ্য রেখে বলতে পারি : কবিতাপাক্ষিক এই প্রতিষ্ঠানটিকে মনপ্রাণ যে ক-জন আপন করে নিয়েছিল তাদের মধ্যে রজতশুভ্র-র অবস্থান প্রথম সারিতে। এবং আরো স্পষ্টভাবে ঘোষণা করতে পারি পোস্টমডার্ন বাংলা কবিতাকে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে রজতশুভ্র - র অবদান আমাদের কারো থেকেই কম নয়।
এবার কবি রজতশুভ্র গুপ্ত-র কবিতার কাছে যাওয়া যাক। কবিতাপাক্ষিক ৫২ -তে প্রকাশিত হয় রজতশুভ্র -র ' হে বিরহী হায় ' কবিতাটি প্রকাশিত হয়। পড়া দেখুন দুটি লাইন :
' পথের বাঁকে সেই জামগাছ , এক চিলতে
ফাঁক দিয়ে ভর রাতে চাঁদ দেখা যায়। '
এই কবিই তার দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে কীভাবে , সেটিই দেখাতে চাইছি এই পর্বে।
কবি রজতশুভ্র গুপ্ত - র দ্বিতীয় ইনিংসের কিছু কিছু অংশ আমি উদ্ধৃত করছি , আমার পছন্দ মতো। আগ্রহী পাঠকদের আমি পুরো কবিতাটি ফোটো তুলে পাঠিয়ে দেব , কথা দিলাম।
১ ॥ ক্রমশ যোগাযোগ স্পষ্ট হচ্ছে। দুটি বর্ণের মধ্যে
আর কোনো ফাঁক নেই।
২ ॥ আমি ভাবতেও পারিনি তোমার রঙের ওপর
মিশে যেতে পারে কোন স্বল্প উচ্চতার ভয়
৩ ॥ তুমি অস্পষ্ট হলেই বনের ভেতর পেসেন্স খেলতে
শুরু করা
৪ ॥ প্রতিটি উনুনের ভেতর অন্তত একটি আন্তরিক
গর্ত থাকে
৫ ॥ এখন বেশ বালি দিয়ে বালি দিয়ে একটা বিশাল
ঘর বানাব আর সেই ঘরের ভেতর ঢুকে পড়বে
একটা আস্ত মরুভূমি
৬ ॥ আমার নীল জ্যাকেট থেকে ছড়িয়ে পড়ে কিছু
অন্তরঙ্গ লণ্ঠনের আলো
'জ্যাকেট বিষয়ক ' প্রথম শুরু হয়েছিল এভাবে। আর শেষ হয়েছিল কীভাবে দেখুন :
৬ ক ॥ যে কোনো আলট্রাশক্তি শব্দ / ডিটারজেন্টে
একবার ডোবালেই জ্যাকেটটি বৃষ্টির পর
মেঘমুক্ত / আকাশ হয়ে যাবে
৭ ॥ অতি সাবধানে শান্ত সে তুলে নিচ্ছে এক /
নির্বাসনের পোশাক
৮ ॥ অথচ তুমি জানতে প্রতিটি দ্রাঘিমারেখার দৈর্ঘ্য
সমান তবুও সমান্তরাল নয়
৯ ॥ একেকটা দিন বাতিল পিয়ানোর পেছনে লুকোতে
ভালো লাগে
১০ ॥ শব্দকোষ ছেড়ে / কবি এগিয়ে যাচ্ছেন
আলোকিত ব্যালকনিতে এবং রাত্রির / অসংখ্য
অ্যালবামচিহ্ন থেকে অনুভব করছেন
প্রজাপতির কম্পন
১১ ॥ আসলে কীভাবে দাঁড়িয়ে আছি কোন
অক্ষরেখা ধরে এগিয়ে গেলে বিষুবরেখার নীচে
সমান্তরাল একটা দাগ টানা যায়
১২ ॥ নীল অন্ধকার থেকে যখন সবুজ আলোতে
এলাম লক্ষ করলাম প্রশস্ত রাস্তা জুড়ে তুমি
দাঁড়িয়ে আছ
১৩ ॥ সুতরাং গন্ধ এবং রং -এর সাথে কম্পন মিশিয়ে
তুমি তৈরি করছ আরেক আকাশ মাটি
হাওয়ার অনুভব
১৪ ॥ সারারাত বকলসের পেছনে আত্মগোপন করে
কোনো ইচ্ছাই আর সাদা থাকে না
১৫ ॥ প্রতিটি ঘুমের ট্যাবলেটের মধ্যে লুকিয়ে থাকে
অপমানের চিহ্ন
এই পনেরোটি কবিতার কিছু অংশ তুলে দিলাম পাঠকদের উৎসাহের কাছে। অনুরোধ কবি রজতশুভ্র গুপ্ত-র কবিতা পড়ুন। পড়লেই চিহ্নিতকরণ করতে পারবেন এই পোস্টমডার্ন কালখণ্ডের একজন প্রধান কবিকে।
ইতিহাস এবং প্রস্তরলিপিগুলিকে মুছে দেবার ক্ষমতা কারো নেই । ছাপা অক্ষরমালাও বেঁচে থাকবে। তখন আপশোশ করতে হবে , রজতশুভ্র-কে সময়মতো স্বীকৃতি না দেবার জন্য।
অনন্য স্বীকারোক্ত। শ্রদ্ধা প্রাণের কবিকে।
উত্তরমুছুন