সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
৮৭.
প্রত্যেক লেখারই একটা ছক থাকে। লেখক যথাসাধ্য চেষ্টা করেন সেই ছক-টিকে বজায় রাখতে। ধারাবাহিক -এ এই বিষয়টি বেশি করে গুরুত্ব পেয়ে থাকে। কিন্তু আমি তো ছক-এর বাইরের লেখক। ছক ভাঙা-টাই আমার প্রধান কাজ। আমি চিরদিন লেখার নিজস্ব গতিময়তাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। নিজেকে নয়। নিজের লেখাকে। আমার এই কথা আপনার বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। এটাই স্বাভাবিক। নিজেকে এবং নিজের লেখাকে প্রাধান্য দেবার মধ্যে পার্থক্যটা ঠিক কোথায় ! তাহলে কি আমি যা লিখি সবটাই আমার নিজের কথা নয় ! এই উৎকণ্ঠাটিকে সামনে রেখে কিছু চিন্তা করা যাক।
সেই চিন্তা থেকে সামনে চলে এল ১৯৯৮ -এর শারদীয় সংখ্যার প্রচ্ছদটি। যেখানে বড়ো বড়ো টাইপে মুদ্রিত হয়েছিল :
আমাদের ছাতার নীচে , না ৫০ জন নয় , কমপক্ষে ৫০০ জন কবি নির্ভাবনায় আশ্রয় নিতে পারেন, আমরা সকলকেই ঝড়বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে পারব ,আর একটা কথা , আমাদের ছাতাটি বেশ অনেকগুলি রঙের কাপড় দিয়ে তৈরি। কাজেই রং সম্পর্কে খুঁতখুতানিরও কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। যদিও আমাদের নিজস্ব একটি রং
এখানেই শেষ হয়েছিল। লেখা হোক বা হোক আমাদের যে নিজস্ব একটা রং ছিল এটা বলার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এবং সেই রঙের তীব্রতা মনে রাখার মতো। আরো মনে রাখার কথা কবিতাপাক্ষিক প্রকাশনার গ্রন্থতালিকার কথা। একবার দেখে নেওয়া যাক , কাদের বই আমাদের ছাতার নীচে প্রকাশিত হয়েছিল :
অরুণ মিত্র অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত আলোক সরকার
ভূমেন্দ্র গুহ কবিরুল ইসলাম কালীকৃষ্ণ গুহ মঞ্জুষ দাশগুপ্ত প্রভাত চৌধুরী রবীন্দু বিশ্বাস সুজিত সরকার দীপ সাউ গোপাল দাশ অমিতাভ মৈত্র প্রশান্ত গুহমজুমদার সুধীর দত্ত নাসের হোসেন সুব্রত চেল কৌশিক চট্টোপাধ্যায় যশোধরা রায়চৌধুরী সুমিতেশ সরকার সুবীর সরকার।
এই লিস্টিটাই প্রমাণ করে দিচ্ছে আমাদের ছাতার আয়তন তথা ছাতায় ব্যবহৃত কাপড়ের রং-তামাশা।
' রং তামাশা ' শব্দটি অপমান সূচক মনে হলে রং মশাল পড়বেন। তাতে লেখার মেজাজের রকমফের হবে না। আমার কাছে ' তামাশা' একটি পবিত্র শব্দ।
এবং এই কথাটাও গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করতে চাই : যাঁরা সেই সময়ে আমাদের ছাতা রং জেনেবুঝে আমাদের ছাতার নীচে আশ্রয় নিয়েছিলেন , তাঁদের সকলের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।
১৯৯৯ -এর এপ্রিলে প্রকাশনার লিস্টে যুক্ত হয়েছিল কয়েকটি নাম। সেগুলি যুক্ত করে নিচ্ছি :
প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত রাজলক্ষ্মী দেবী জহর সেন মজুমদার তীর্থঙ্কর মৈত্র মুরারি সিংহ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় অংশুমান কর অর্ণব সাহা রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। আগের লিস্ট থেকে দু-একটি নাম বাদ পড়েছিল। তার উল্লেখ করলাম না।গুরুত্বহীন মনে হওয়ায়।
জুন ১৯৯৯ - এ গ্রন্থতালিকায় যুক্ত হয়েছিল :
সৈয়দ কওসর জামাল রজতশুভ্র গুপ্ত ধীমান চক্রবর্তী রামকিশোর ভট্টাচার্য প্রদীপ হালদার এবং শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম।
পত্রিকার পাশাপাশি প্রকাশনাও একটা নির্দিষ্ট জায়গা করে নিয়েছিল এটা এই লেখাটির পাঠক অনুমান করতে পারছেন আশা করি।
আবার পত্রিকায় ফিরে যাচ্ছি। তুলে আনছি এমন এক জনের কবিতা , যিনি এখন নিজে অনুপস্থিত কিন্তু তাঁর কবিতা মারাত্মকভাবে উপস্থিত আমার কাছে।
রামকিশোর ভট্টাচার্য-র কাছে যেতে হল কানাই ঘোষ -এর খোঁজে। বাঁশবেড়িয়ায় থাকতেন।সাহিত্যসেতু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ঘটকবাগানে বাড়ি করেছিলেন। আমি গিয়েছিলাম সে-বাড়িতে।
এখন কানাই ঘোষ যা লিখেছিলেন , তার কিছু অংশ :
১॥ খাদ্য ও পানীয় বিষয়ে আপনি যা বললেন সেখানে মৌমাছিদের কোনো কথা নেই
২ ॥ সম্পাদকমশাই যাই বলুন আপনি হ্রদের কথা একবারও ভাববেন না
৩॥ প্রবেশপথে নৈঃশব্দ ধাক্কা খেতে থাকে আর শীতঋতুর চিহ্ন/ কাকে যে অনুসরণ করে !
৪॥ আমি তোমাকে যে কবিতার টুকরো পাঠিয়েছি সেখানে পুনশ্চ শব্দটি ছিল না রন্ধনশালার উপর আমার গবেষণাপত্রটি পাঠাবার সময় এবার পুনশ্চ শব্দটিকে ব্যবহার করলুম।
৫॥ তুলসীপাতার সঙ্গে লাউপাতা কিংবা/ পলতাপাতার সঙ্গে কুলেখাঁড়াপাতার সম্পর্ক নিয়ে অবশ্যই ---/ অবশ্যই গবেষণা হওয়া দরকার।
আরো বেশি দরকার কবি কানাই ঘোষের কবিতা নিয়ে গবেষণা হবার। মনে রাখবেন এই মাপের কবি একটা ভাষাতে খুব বেশিজন থাকে না।
আমরা গর্বিত , কবি কানাই ঘোষের কবিতার বই 'বৃষ্টিদের কথোপকথন ' কবিতাপাক্ষিক থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রভাত চৌধুরী
৮৭.
প্রত্যেক লেখারই একটা ছক থাকে। লেখক যথাসাধ্য চেষ্টা করেন সেই ছক-টিকে বজায় রাখতে। ধারাবাহিক -এ এই বিষয়টি বেশি করে গুরুত্ব পেয়ে থাকে। কিন্তু আমি তো ছক-এর বাইরের লেখক। ছক ভাঙা-টাই আমার প্রধান কাজ। আমি চিরদিন লেখার নিজস্ব গতিময়তাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। নিজেকে নয়। নিজের লেখাকে। আমার এই কথা আপনার বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। এটাই স্বাভাবিক। নিজেকে এবং নিজের লেখাকে প্রাধান্য দেবার মধ্যে পার্থক্যটা ঠিক কোথায় ! তাহলে কি আমি যা লিখি সবটাই আমার নিজের কথা নয় ! এই উৎকণ্ঠাটিকে সামনে রেখে কিছু চিন্তা করা যাক।
সেই চিন্তা থেকে সামনে চলে এল ১৯৯৮ -এর শারদীয় সংখ্যার প্রচ্ছদটি। যেখানে বড়ো বড়ো টাইপে মুদ্রিত হয়েছিল :
আমাদের ছাতার নীচে , না ৫০ জন নয় , কমপক্ষে ৫০০ জন কবি নির্ভাবনায় আশ্রয় নিতে পারেন, আমরা সকলকেই ঝড়বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে পারব ,আর একটা কথা , আমাদের ছাতাটি বেশ অনেকগুলি রঙের কাপড় দিয়ে তৈরি। কাজেই রং সম্পর্কে খুঁতখুতানিরও কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। যদিও আমাদের নিজস্ব একটি রং
এখানেই শেষ হয়েছিল। লেখা হোক বা হোক আমাদের যে নিজস্ব একটা রং ছিল এটা বলার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এবং সেই রঙের তীব্রতা মনে রাখার মতো। আরো মনে রাখার কথা কবিতাপাক্ষিক প্রকাশনার গ্রন্থতালিকার কথা। একবার দেখে নেওয়া যাক , কাদের বই আমাদের ছাতার নীচে প্রকাশিত হয়েছিল :
অরুণ মিত্র অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত আলোক সরকার
ভূমেন্দ্র গুহ কবিরুল ইসলাম কালীকৃষ্ণ গুহ মঞ্জুষ দাশগুপ্ত প্রভাত চৌধুরী রবীন্দু বিশ্বাস সুজিত সরকার দীপ সাউ গোপাল দাশ অমিতাভ মৈত্র প্রশান্ত গুহমজুমদার সুধীর দত্ত নাসের হোসেন সুব্রত চেল কৌশিক চট্টোপাধ্যায় যশোধরা রায়চৌধুরী সুমিতেশ সরকার সুবীর সরকার।
এই লিস্টিটাই প্রমাণ করে দিচ্ছে আমাদের ছাতার আয়তন তথা ছাতায় ব্যবহৃত কাপড়ের রং-তামাশা।
' রং তামাশা ' শব্দটি অপমান সূচক মনে হলে রং মশাল পড়বেন। তাতে লেখার মেজাজের রকমফের হবে না। আমার কাছে ' তামাশা' একটি পবিত্র শব্দ।
এবং এই কথাটাও গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করতে চাই : যাঁরা সেই সময়ে আমাদের ছাতা রং জেনেবুঝে আমাদের ছাতার নীচে আশ্রয় নিয়েছিলেন , তাঁদের সকলের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।
১৯৯৯ -এর এপ্রিলে প্রকাশনার লিস্টে যুক্ত হয়েছিল কয়েকটি নাম। সেগুলি যুক্ত করে নিচ্ছি :
প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত রাজলক্ষ্মী দেবী জহর সেন মজুমদার তীর্থঙ্কর মৈত্র মুরারি সিংহ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় অংশুমান কর অর্ণব সাহা রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। আগের লিস্ট থেকে দু-একটি নাম বাদ পড়েছিল। তার উল্লেখ করলাম না।গুরুত্বহীন মনে হওয়ায়।
জুন ১৯৯৯ - এ গ্রন্থতালিকায় যুক্ত হয়েছিল :
সৈয়দ কওসর জামাল রজতশুভ্র গুপ্ত ধীমান চক্রবর্তী রামকিশোর ভট্টাচার্য প্রদীপ হালদার এবং শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম।
পত্রিকার পাশাপাশি প্রকাশনাও একটা নির্দিষ্ট জায়গা করে নিয়েছিল এটা এই লেখাটির পাঠক অনুমান করতে পারছেন আশা করি।
আবার পত্রিকায় ফিরে যাচ্ছি। তুলে আনছি এমন এক জনের কবিতা , যিনি এখন নিজে অনুপস্থিত কিন্তু তাঁর কবিতা মারাত্মকভাবে উপস্থিত আমার কাছে।
রামকিশোর ভট্টাচার্য-র কাছে যেতে হল কানাই ঘোষ -এর খোঁজে। বাঁশবেড়িয়ায় থাকতেন।সাহিত্যসেতু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ঘটকবাগানে বাড়ি করেছিলেন। আমি গিয়েছিলাম সে-বাড়িতে।
এখন কানাই ঘোষ যা লিখেছিলেন , তার কিছু অংশ :
১॥ খাদ্য ও পানীয় বিষয়ে আপনি যা বললেন সেখানে মৌমাছিদের কোনো কথা নেই
২ ॥ সম্পাদকমশাই যাই বলুন আপনি হ্রদের কথা একবারও ভাববেন না
৩॥ প্রবেশপথে নৈঃশব্দ ধাক্কা খেতে থাকে আর শীতঋতুর চিহ্ন/ কাকে যে অনুসরণ করে !
৪॥ আমি তোমাকে যে কবিতার টুকরো পাঠিয়েছি সেখানে পুনশ্চ শব্দটি ছিল না রন্ধনশালার উপর আমার গবেষণাপত্রটি পাঠাবার সময় এবার পুনশ্চ শব্দটিকে ব্যবহার করলুম।
৫॥ তুলসীপাতার সঙ্গে লাউপাতা কিংবা/ পলতাপাতার সঙ্গে কুলেখাঁড়াপাতার সম্পর্ক নিয়ে অবশ্যই ---/ অবশ্যই গবেষণা হওয়া দরকার।
আরো বেশি দরকার কবি কানাই ঘোষের কবিতা নিয়ে গবেষণা হবার। মনে রাখবেন এই মাপের কবি একটা ভাষাতে খুব বেশিজন থাকে না।
আমরা গর্বিত , কবি কানাই ঘোষের কবিতার বই 'বৃষ্টিদের কথোপকথন ' কবিতাপাক্ষিক থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন