সৌমিত্র রায় -এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
৮৮.
দুর্গাপুর , এই ইস্পাত নগরীর সঙ্গে রথীন বন্দ্যোপাধ্যায় -এর নামটিকে যুক্ত করার কোনো যুক্তি তৈরি করতে পারলাম না। বরং যুক্ত করতে হবে একটি দৃষ্টিভঙ্গীকে। আধুনিক-পরবর্তী যে চিন্তা এবং চেতনায় আমরা অনেকেই আপ্লুত ছিলাম , আমি মনে করি সেই অনেকের মধ্যে রথীনও একজন।সে সময় দুর্গাপুর বলতে আমরা বুঝতাম রজতশুভ্র গুপ্ত নিমাই বন্দ্যোপাধ্যায় প্রদীপ চক্রবর্তী পিনাকীরঞ্জন সামন্ত ব্রজকুমার সরকার অনিকেত পাত্র এবং অবশ্যই রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়।
এবার রথীন-এর কবিতায় প্রবেশ করছি। দেখুন আপনার অভিজ্ঞতার কোনো স্থানিক পরিবর্তন হয় কিনা। পড়ুন এবং পড়তে থাকুন :
১॥ সেফটিপিন বিষয়ে কিছু লিখতে গেলে প্রথমেই জেনে নিতে হবে ঘরের হিউমিডিটি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য।
২॥ প্রসঙ্গ : সান্ধ্যভ্রমণে যারা সাদা পাঞ্জাবি পরেন
তাদের আচরণবিধি রথীন যেভাবে চিহ্নিত করেছে তা বাংলাকবিতার সম্পদ :
তাদের পকেটে খুচরো পয়সা থাকে এবং ভ্রমণকালে তারা তাদের বাঁহাত কব্জি পর্যন্ত পকেটে গোপন রাখেন।
দাঁতের যথার্থ ব্যবহার জেনে গেছে বলে তারা স্বভাবতই লাজুক ( এবং কামুক ) হয়।
ফায়ারব্রিগেডের লালঘন্টির শব্দে তাদের যৌনতাবোধ তীব্র হয়।
এইসব সংক্রামক কথাবার্তা লিখেছিল রথীন। আমরা সেই রথীনকেই মনে রাখি। মনে রাখতে বাধ্য হই।
রথীন-এর একটি অনবদ্য কবিতা :
Push ও Pull.
সেই কবিতাটি থেকে কিছু অংশ :
এক। 'Push ' শব্দটির পিছনে একটি অন্দরমহল থাকে
দুই। 'Push ' - এর পৃথিবীতে পরিপূরক কোণগুলি শুধুমাত্র সমকোণ নয়।
তিন। ' Push ' -এর 'S ' এবং ' H ' এর জায়গায় দুখানি ' L ' বসে তৈরি হয়েছে 'Pull 'এবং 'L' দুটি এসেছে যথাক্রমে 'LANDSCAPE ' ও 'LIBERTY' এই দুটি শব্দ থেকে।
চার। 'PUSH ' ও 'PULL' এর মাঝখানে একটি কপাট থাকে বলেই শব্দদুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব অসীমও হতে পারে।
এইসব Message বাংলাকবিতায় আগে ছিল না।আমরা এই পোস্টমডার্ন কালখণ্ডের কবিদের সমবেত প্রচেষ্টায় এই পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। এখন এদিক-ওদিক থেকে কেউ কেউ বাংলাকবিতাকে পাল্টেছেন বলে দাবি করছেন দেখছি।তাঁরা কেউ ক্যালেন্ডার-নির্মাতা নন, এটা নতুন করে বলার কিছু নেই।
আমি তখন বাঁকুড়ার দেশের বাড়ি যাওয়া পথে ট্রেন থেকে নামতাম দুর্গাপুর। দুর্গাপুরে একটা আড্ডা হত।সেই আড্ডায় উপস্থিত থাকত রথীন। আমরা তখন কবিতার সীমাবদ্ধ পরিসরকে বড়ো করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। আমি লিখছিলাম আমার নোটবই - এর কবিতাগুলি।অর্থাৎ Notes on Physiology , Notes on Mathematics , Notes on Geography , Notes on Animals , Notes on Birds , Notes on Insectsগুলি লিখে ফেলেছি , সেসময় রথীন-কে বলেছিলাম : তুমি তো হাসপাতালে চাকরি কর। হাসপাতালকে কবিতায় ব্যবহার কর। রথীন কথা রেখেছিল। আমাকে পূর্ণ করে দিয়েছিল। বাংলাকবিতা সমৃদ্ধ হয়েছিল রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ' চার পরিচ্ছদ হাসপাতাল ' কবিতাগুচ্ছতে। এক পরিচ্ছদগুলির সাব-হেডিংগুলি দেখে নেওয়া যাক :
প্রথম পরিচ্ছদ : হাসপাতালের যে কোনো কোণ থেকেই শুরু হতে পারে নিখুঁত কবিতা
দ্বিতীয় পরিচ্ছদ :হাসপাতালমুখী সব রাস্তাই মিতভাষী হয়
তৃতীয় পরিচ্ছদ:অফসেটে যতবারই হাসপাতালকে লাইন টু লাইন কম্পোজ করতে যাই ততবারই রান-অন হয়ে যায়
চতুর্থ পরিচ্ছদ : ব্যবহৃত ডিসপোজেবল সিরিঞ্জে ভরে উঠছে হাসপাতালের মর্গ
আমি পূর্ণ হয়েছিলাম। বাংলাকবিতা সমৃদ্ধ হয়েছিল। নতুন নতুন কবিরা যুক্ত করেছে নতুন নতুন পরিসর।একে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না।এমনকি যিনি ইতিহাস নির্মাণ করেছেন তিনিও পারবেন না।
এখন কেউ কেউ দাবি করছে তারাও নাকি বাঁকবদলের দাবিদার।খোঁজ নিলে জানতে পারবেন ১৯৯৫-৯৬ সালে তারা বাঁকে করে জল নিয়ে তারকেশ্বরে যেতেন। প্রাক আধুনিকরাও উত্তর আধুনিক হতে চাইছে। তাদের কোথায় রাখবেন তা স্থির করবেন পাঠকসাধারণ।
প্রভাত চৌধুরী
৮৮.
দুর্গাপুর , এই ইস্পাত নগরীর সঙ্গে রথীন বন্দ্যোপাধ্যায় -এর নামটিকে যুক্ত করার কোনো যুক্তি তৈরি করতে পারলাম না। বরং যুক্ত করতে হবে একটি দৃষ্টিভঙ্গীকে। আধুনিক-পরবর্তী যে চিন্তা এবং চেতনায় আমরা অনেকেই আপ্লুত ছিলাম , আমি মনে করি সেই অনেকের মধ্যে রথীনও একজন।সে সময় দুর্গাপুর বলতে আমরা বুঝতাম রজতশুভ্র গুপ্ত নিমাই বন্দ্যোপাধ্যায় প্রদীপ চক্রবর্তী পিনাকীরঞ্জন সামন্ত ব্রজকুমার সরকার অনিকেত পাত্র এবং অবশ্যই রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়।
এবার রথীন-এর কবিতায় প্রবেশ করছি। দেখুন আপনার অভিজ্ঞতার কোনো স্থানিক পরিবর্তন হয় কিনা। পড়ুন এবং পড়তে থাকুন :
১॥ সেফটিপিন বিষয়ে কিছু লিখতে গেলে প্রথমেই জেনে নিতে হবে ঘরের হিউমিডিটি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য।
২॥ প্রসঙ্গ : সান্ধ্যভ্রমণে যারা সাদা পাঞ্জাবি পরেন
তাদের আচরণবিধি রথীন যেভাবে চিহ্নিত করেছে তা বাংলাকবিতার সম্পদ :
তাদের পকেটে খুচরো পয়সা থাকে এবং ভ্রমণকালে তারা তাদের বাঁহাত কব্জি পর্যন্ত পকেটে গোপন রাখেন।
দাঁতের যথার্থ ব্যবহার জেনে গেছে বলে তারা স্বভাবতই লাজুক ( এবং কামুক ) হয়।
ফায়ারব্রিগেডের লালঘন্টির শব্দে তাদের যৌনতাবোধ তীব্র হয়।
এইসব সংক্রামক কথাবার্তা লিখেছিল রথীন। আমরা সেই রথীনকেই মনে রাখি। মনে রাখতে বাধ্য হই।
রথীন-এর একটি অনবদ্য কবিতা :
Push ও Pull.
সেই কবিতাটি থেকে কিছু অংশ :
এক। 'Push ' শব্দটির পিছনে একটি অন্দরমহল থাকে
দুই। 'Push ' - এর পৃথিবীতে পরিপূরক কোণগুলি শুধুমাত্র সমকোণ নয়।
তিন। ' Push ' -এর 'S ' এবং ' H ' এর জায়গায় দুখানি ' L ' বসে তৈরি হয়েছে 'Pull 'এবং 'L' দুটি এসেছে যথাক্রমে 'LANDSCAPE ' ও 'LIBERTY' এই দুটি শব্দ থেকে।
চার। 'PUSH ' ও 'PULL' এর মাঝখানে একটি কপাট থাকে বলেই শব্দদুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব অসীমও হতে পারে।
এইসব Message বাংলাকবিতায় আগে ছিল না।আমরা এই পোস্টমডার্ন কালখণ্ডের কবিদের সমবেত প্রচেষ্টায় এই পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। এখন এদিক-ওদিক থেকে কেউ কেউ বাংলাকবিতাকে পাল্টেছেন বলে দাবি করছেন দেখছি।তাঁরা কেউ ক্যালেন্ডার-নির্মাতা নন, এটা নতুন করে বলার কিছু নেই।
আমি তখন বাঁকুড়ার দেশের বাড়ি যাওয়া পথে ট্রেন থেকে নামতাম দুর্গাপুর। দুর্গাপুরে একটা আড্ডা হত।সেই আড্ডায় উপস্থিত থাকত রথীন। আমরা তখন কবিতার সীমাবদ্ধ পরিসরকে বড়ো করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। আমি লিখছিলাম আমার নোটবই - এর কবিতাগুলি।অর্থাৎ Notes on Physiology , Notes on Mathematics , Notes on Geography , Notes on Animals , Notes on Birds , Notes on Insectsগুলি লিখে ফেলেছি , সেসময় রথীন-কে বলেছিলাম : তুমি তো হাসপাতালে চাকরি কর। হাসপাতালকে কবিতায় ব্যবহার কর। রথীন কথা রেখেছিল। আমাকে পূর্ণ করে দিয়েছিল। বাংলাকবিতা সমৃদ্ধ হয়েছিল রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ' চার পরিচ্ছদ হাসপাতাল ' কবিতাগুচ্ছতে। এক পরিচ্ছদগুলির সাব-হেডিংগুলি দেখে নেওয়া যাক :
প্রথম পরিচ্ছদ : হাসপাতালের যে কোনো কোণ থেকেই শুরু হতে পারে নিখুঁত কবিতা
দ্বিতীয় পরিচ্ছদ :হাসপাতালমুখী সব রাস্তাই মিতভাষী হয়
তৃতীয় পরিচ্ছদ:অফসেটে যতবারই হাসপাতালকে লাইন টু লাইন কম্পোজ করতে যাই ততবারই রান-অন হয়ে যায়
চতুর্থ পরিচ্ছদ : ব্যবহৃত ডিসপোজেবল সিরিঞ্জে ভরে উঠছে হাসপাতালের মর্গ
আমি পূর্ণ হয়েছিলাম। বাংলাকবিতা সমৃদ্ধ হয়েছিল। নতুন নতুন কবিরা যুক্ত করেছে নতুন নতুন পরিসর।একে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না।এমনকি যিনি ইতিহাস নির্মাণ করেছেন তিনিও পারবেন না।
এখন কেউ কেউ দাবি করছে তারাও নাকি বাঁকবদলের দাবিদার।খোঁজ নিলে জানতে পারবেন ১৯৯৫-৯৬ সালে তারা বাঁকে করে জল নিয়ে তারকেশ্বরে যেতেন। প্রাক আধুনিকরাও উত্তর আধুনিক হতে চাইছে। তাদের কোথায় রাখবেন তা স্থির করবেন পাঠকসাধারণ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন