সবাই মিলে সিনেমাহলে~ ৫
কান্তিরঞ্জন দে
সিনেমা নগরী কলকাতা
মফস্বলে থাকতে ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে যে হলে সিনেমা দেখতে যেতাম , তার ছিল দরমা-র দেওয়াল আর টিনের চালা । নাম ----চলচ্চিত্রম । কয়েকবছর পর চলচ্চিত্রম পাকা বাড়ি হল । বিশাল বিল্ডিং । সামনে পাঁচিল ঘেরা অনেকটা ফাঁকা জায়গা ।
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের স্কুলজীবনে ছ' বছর সিনেমা দেখেছি ক্যাম্পাসের কেন্দ্রে অবস্থিত সেন্ট্রাল অডিটোরিয়ামে । পোশাকি নাম ---- স্বামী বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী ভবন । সেই অডিটোরিয়ামে বসার এবং সিনেমা দেখার ব্যবস্থা কলকাতার প্রথম শ্রেণীর যে কোনও হলকেও হার মানাবে ।
সত্তর দশকের শেষাশেষি আমরা যখন কলেজে ঢুকলাম , তখন কলকাতায় সিনেমা দেখার প্রাণকেন্দ্র ছিল , নিসন্দেহে এসপ্ল্যানেড চত্বর । সুন্দরী কলকাতার হৃদয়স্থল ।
বড় রাস্তার দিকে মুখ করে মেট্রো । বাঁ দিকে একে একে প্যারাডাইস , ওরিয়েন্ট , অপেরা , জ্যোতি ।
মেট্রো-র আশেপাশে রিগ্যাল , এলিট ( ম্যাডান থিয়েটার / প্যালেস অফ ভ্যারাইটি ) , রক্সি , সোসাইটি , এবং মিনার্ভা ( নাম বদলে চ্যাপলিন ) ।
মধ্যে আলোর মালার মতো আগে পিছে লাইটহাউস , নিউ এম্পায়ার , গ্লোব , যমুনা ।
ডাইনে বড় রাস্তার ওপর--- টাইগার । এই হলগুলোর অনেকগুলোতেই সংলগ্ন বার ছিল ।
মেট্রোসহ আশেপাশের অনেক হলেই সারাবছর হিন্দি সিনেমা চলত । কিন্তু এসপ্ল্যানেড চত্বরের অধিকাংশ হলই ছিল ইংরিজি ও ইউরোপীয় সিনেমার চারণভূমি । আমাদের যৌবনের সিনেমা শিক্ষার ধাত্রীভূমি ।
আর পূবে ছিল লোটাস ,হিন্দ , ম্যাজেস্টিক , জগত ( শেয়ালদা ) , সন্তোষ টকিজ এবং আলোছায়া ( বেলেঘাটা ) ।
উত্তর কলকাতার হাতিবাগানে রূপবাণী সিনেমাহলটি উদ্বোধন হয় , ১৯৩২ সালের ১৯ ডিসেম্বর । হলটির নামকরণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং । এসপ্ল্যানেড চত্বরের হলগুলির মতো উত্তর কলকাতারও সবক'টি হলই ছিল , বিশ - তিরিশের দশকে সেই ব্রিটিশ আমলে তৈরি । শুরুতে এদের অনেকেরই সাহেবি নাম ছিল । পরে বাঙালি নামে রূপান্তর হয় । যেমন , উত্তরা সিনেমাহলের নাম আগে ছিল ক্রাউন থিয়েটার ।
উত্তর কলকাতার প্রধান হলগুলির নাম ------- টকি শো হাউস , দর্পণা , মিত্রা ( এককালের চিত্রা ) , শ্রী ( কর্ণওয়ালিশ থিয়েটার ) , রাধা , বিধুশ্রী , পূর্ণশ্রী , লিবার্টি , প্রভাত , মুনলাইট ( ইম্পিরিয়াল থিয়েটার ) , নাজ ( চিৎপুরে ) , রূপম ( বউবাজার স্ট্রিটে ) , জহর ।
শেয়ালদা অঞ্চলকে ঘিরে অনেকগুলো বাঙালি সিনেমা হল ছিল । যেমন --- অরুণা , পূরবী , ছবিঘর এবং প্রাচী । এদের প্রায় প্রতিটিতেই নিয়মিত বাংলা সিনেমা দেখানো হত । প্রাচীতে তো এই কয়েকবছর আগে পর্যন্তও শুধুমাত্র বাংলা সিনেমাই রিলিজ করত । মালিক জিতেন্দ্রনাথ বসু সম্প্রতি মারা যাবার পর সেই ট্র্যাডিশন ধ্বংস হয়ে যায় ।
তুলনামূলক ভাবে নবীন অঞ্চল দক্ষিণ কলকাতায় ছিল পূর্ণ ( প্যারিস সিনেমা পরে রসা থিয়েটার ) , ইন্দিরা , বসুশ্রী , বিজলী , ভারতী এবং উজ্জ্বলা । আরও দক্ষিণে কালিকা , প্রদীপ , নবীনা , মালঞ্চ , মধুবন , বান্টি ।
কলকাতার দক্ষিণতম প্রান্তে যেমন ছিল , মহুয়া ( গড়িয়া ) , তেমনি উত্তরতম প্রান্তে ছিল অনন্যা , জয়শ্রী ( বরানগর ) , জয়া ( লেকটাউন ) ও মৃণালিনী ( দমদম ) ।
পশ্চিমপ্রান্তে বেহালার দিকে ছিল অজন্তা ( বেহালা ) ও শৈলশ্রী ( মেটিয়াবুরুজ ) ।
দুর্ভাগ্যের কথা , উল্লিখিত সমস্ত হলের মধ্যে নব্বই শতাংশেরও বেশি হল বহুবছর আগে চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে । কেন ?
সিনেমা দেখানোর রকমসকমও আজ অনেক বদলে গেছে ।
কিরকম ? সে কথা বলব পরের বার ।
কান্তিরঞ্জন দে
সিনেমা নগরী কলকাতা
মফস্বলে থাকতে ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে যে হলে সিনেমা দেখতে যেতাম , তার ছিল দরমা-র দেওয়াল আর টিনের চালা । নাম ----চলচ্চিত্রম । কয়েকবছর পর চলচ্চিত্রম পাকা বাড়ি হল । বিশাল বিল্ডিং । সামনে পাঁচিল ঘেরা অনেকটা ফাঁকা জায়গা ।
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের স্কুলজীবনে ছ' বছর সিনেমা দেখেছি ক্যাম্পাসের কেন্দ্রে অবস্থিত সেন্ট্রাল অডিটোরিয়ামে । পোশাকি নাম ---- স্বামী বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী ভবন । সেই অডিটোরিয়ামে বসার এবং সিনেমা দেখার ব্যবস্থা কলকাতার প্রথম শ্রেণীর যে কোনও হলকেও হার মানাবে ।
সত্তর দশকের শেষাশেষি আমরা যখন কলেজে ঢুকলাম , তখন কলকাতায় সিনেমা দেখার প্রাণকেন্দ্র ছিল , নিসন্দেহে এসপ্ল্যানেড চত্বর । সুন্দরী কলকাতার হৃদয়স্থল ।
বড় রাস্তার দিকে মুখ করে মেট্রো । বাঁ দিকে একে একে প্যারাডাইস , ওরিয়েন্ট , অপেরা , জ্যোতি ।
মেট্রো-র আশেপাশে রিগ্যাল , এলিট ( ম্যাডান থিয়েটার / প্যালেস অফ ভ্যারাইটি ) , রক্সি , সোসাইটি , এবং মিনার্ভা ( নাম বদলে চ্যাপলিন ) ।
মধ্যে আলোর মালার মতো আগে পিছে লাইটহাউস , নিউ এম্পায়ার , গ্লোব , যমুনা ।
ডাইনে বড় রাস্তার ওপর--- টাইগার । এই হলগুলোর অনেকগুলোতেই সংলগ্ন বার ছিল ।
মেট্রোসহ আশেপাশের অনেক হলেই সারাবছর হিন্দি সিনেমা চলত । কিন্তু এসপ্ল্যানেড চত্বরের অধিকাংশ হলই ছিল ইংরিজি ও ইউরোপীয় সিনেমার চারণভূমি । আমাদের যৌবনের সিনেমা শিক্ষার ধাত্রীভূমি ।
আর পূবে ছিল লোটাস ,হিন্দ , ম্যাজেস্টিক , জগত ( শেয়ালদা ) , সন্তোষ টকিজ এবং আলোছায়া ( বেলেঘাটা ) ।
উত্তর কলকাতার হাতিবাগানে রূপবাণী সিনেমাহলটি উদ্বোধন হয় , ১৯৩২ সালের ১৯ ডিসেম্বর । হলটির নামকরণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং । এসপ্ল্যানেড চত্বরের হলগুলির মতো উত্তর কলকাতারও সবক'টি হলই ছিল , বিশ - তিরিশের দশকে সেই ব্রিটিশ আমলে তৈরি । শুরুতে এদের অনেকেরই সাহেবি নাম ছিল । পরে বাঙালি নামে রূপান্তর হয় । যেমন , উত্তরা সিনেমাহলের নাম আগে ছিল ক্রাউন থিয়েটার ।
উত্তর কলকাতার প্রধান হলগুলির নাম ------- টকি শো হাউস , দর্পণা , মিত্রা ( এককালের চিত্রা ) , শ্রী ( কর্ণওয়ালিশ থিয়েটার ) , রাধা , বিধুশ্রী , পূর্ণশ্রী , লিবার্টি , প্রভাত , মুনলাইট ( ইম্পিরিয়াল থিয়েটার ) , নাজ ( চিৎপুরে ) , রূপম ( বউবাজার স্ট্রিটে ) , জহর ।
শেয়ালদা অঞ্চলকে ঘিরে অনেকগুলো বাঙালি সিনেমা হল ছিল । যেমন --- অরুণা , পূরবী , ছবিঘর এবং প্রাচী । এদের প্রায় প্রতিটিতেই নিয়মিত বাংলা সিনেমা দেখানো হত । প্রাচীতে তো এই কয়েকবছর আগে পর্যন্তও শুধুমাত্র বাংলা সিনেমাই রিলিজ করত । মালিক জিতেন্দ্রনাথ বসু সম্প্রতি মারা যাবার পর সেই ট্র্যাডিশন ধ্বংস হয়ে যায় ।
তুলনামূলক ভাবে নবীন অঞ্চল দক্ষিণ কলকাতায় ছিল পূর্ণ ( প্যারিস সিনেমা পরে রসা থিয়েটার ) , ইন্দিরা , বসুশ্রী , বিজলী , ভারতী এবং উজ্জ্বলা । আরও দক্ষিণে কালিকা , প্রদীপ , নবীনা , মালঞ্চ , মধুবন , বান্টি ।
কলকাতার দক্ষিণতম প্রান্তে যেমন ছিল , মহুয়া ( গড়িয়া ) , তেমনি উত্তরতম প্রান্তে ছিল অনন্যা , জয়শ্রী ( বরানগর ) , জয়া ( লেকটাউন ) ও মৃণালিনী ( দমদম ) ।
পশ্চিমপ্রান্তে বেহালার দিকে ছিল অজন্তা ( বেহালা ) ও শৈলশ্রী ( মেটিয়াবুরুজ ) ।
দুর্ভাগ্যের কথা , উল্লিখিত সমস্ত হলের মধ্যে নব্বই শতাংশেরও বেশি হল বহুবছর আগে চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে । কেন ?
সিনেমা দেখানোর রকমসকমও আজ অনেক বদলে গেছে ।
কিরকম ? সে কথা বলব পরের বার ।
দারুণ
উত্তরমুছুন