নস্টালজিয়া~ ৮
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
আমার ফিরে দেখার আনন্দের স্মৃতির কুলুঙ্গিতে একটি মধুর সঞ্চয় বড়নগরে মাসির বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া। ভাগীরথী নদীর পশ্চিম তীরের ছায়া সুনিবিড় স্নিগ্ধ এই গ্রামটি ছিল একসময়ে নাটোরের রানি ভবানীর জমিদারির অন্তর্গত। বড়নগর জায়গাটি রানির খুব প্রিয় ছিল বলে তিনি জীবনের শেষ ভাগ এখানেই কাটিয়েছিলেন। শুনেছি সেকালে বড়নগর ছিল মুর্শিদাবাদের বারাণসী। ঐ রাজবাড়ির ছোটছেলে (প্রমিতি মেসোমশাই) সঙ্গে আমার মায়ের খুড়তুতো বোন মনামাসির বিয়ে হওয়ার সুবাদে আমাদের সেখানে যাতায়াত ছিল। মেশোমশাইও প্রায়ই আসতেন আমাদের বাড়িতে। খুব শান্ত শিষ্ট অমায়িক ব্যবহার ছিল এই সুপুরুষ স্নেহময় মানুষটির। মা খুব যত্ন করত প্রমিতি মেসোমশাইকে। আমার মা বাড়িতে আত্মীয় স্বজন এলে খুব খুশি হত এবং ভালো ভালো পদ রান্না করে খাওয়াতে ভালবাসত। আমার মায়ের সঙ্গে তার খুড়তুতো, পিসতুতো ভাইবোনদের এতটাই আন্তরিকতা ছিল যে কাউকেই আমার দূরের বলে মনে হয় না আজও। যদিও তখন এই রাজবাড়ির ঐশ্বর্য তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল তবু একটা আভিজাত্য ছিল মেসোমশাই এর মধ্যে। বড়নগরে যেতে আমার ভালো লাগার আর একটা কারণ ছিল আমরা গঙ্গা নদীতে নৌকা করে যেতাম। অনেকটা পথ নৌকায় যেতে আমার অপূর্ব অনুভূতি হতো। আমরা খুব সকালে সবাই মিলে রওনা হতাম। সারাদিন সেদিন অফুরান আনন্দের মুক্তি। অনেক সময় আমরা জিয়াগঞ্জ বা আজিমগঞ্জ দিয়েও গেছি। তবে যে পথেই যাই নৌকা যাত্রা থাকতই। গ্রাম্য পরিবেশে একটা বিরাট অট্টালিকা দেখে প্রথমদিন সত্যিই একটু অবাক হয়েছিলাম, তবে সেই রাজবাড়ির তখন ভগ্নদশা প্রায়। মাসির দুটি ছেলেমেয়ে, তারা আমার ছোট । মাসি -মেসোমশাই খুব আদর যত্ন করতো আমাদের। মাসির মেয়ে গোপা আমাকে খুব ভালোবাসত। ওখানে পৌঁছে কিছু জলখাবার খেলেই চলে যেতাম বাড়ি সংলগ্ন মস্ত বাগানে। সেখানে আমি প্রথম জোড়বাংলা মন্দিরে টেরাকোটার অপূর্ব চিত্র শৈলী দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। এই জোড়বাংলা মন্দিরটি গঙ্গেশ্বর শিবের। প্রথমবার মেসোমশাই ঘুরে ঘুরে সব দেখিয়েছিল। আমার এখনও মনে আছে টেরাকোটার কাজে ঐ মন্দিরগাত্রে রামায়ণের কাহিনি, কৃষ্ণলীলার দৃশ্য, সমকালীন সমাজ চিত্র কী নিপুণ দক্ষতায় অপূর্ব নির্মাণ করা হয়েছিল। আমি ঐ সুন্দর পরিবেশের জন্য বড়নগরে মাসির বাড়ি যেতে খুব ভালোবাসতাম।
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
আমার ফিরে দেখার আনন্দের স্মৃতির কুলুঙ্গিতে একটি মধুর সঞ্চয় বড়নগরে মাসির বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া। ভাগীরথী নদীর পশ্চিম তীরের ছায়া সুনিবিড় স্নিগ্ধ এই গ্রামটি ছিল একসময়ে নাটোরের রানি ভবানীর জমিদারির অন্তর্গত। বড়নগর জায়গাটি রানির খুব প্রিয় ছিল বলে তিনি জীবনের শেষ ভাগ এখানেই কাটিয়েছিলেন। শুনেছি সেকালে বড়নগর ছিল মুর্শিদাবাদের বারাণসী। ঐ রাজবাড়ির ছোটছেলে (প্রমিতি মেসোমশাই) সঙ্গে আমার মায়ের খুড়তুতো বোন মনামাসির বিয়ে হওয়ার সুবাদে আমাদের সেখানে যাতায়াত ছিল। মেশোমশাইও প্রায়ই আসতেন আমাদের বাড়িতে। খুব শান্ত শিষ্ট অমায়িক ব্যবহার ছিল এই সুপুরুষ স্নেহময় মানুষটির। মা খুব যত্ন করত প্রমিতি মেসোমশাইকে। আমার মা বাড়িতে আত্মীয় স্বজন এলে খুব খুশি হত এবং ভালো ভালো পদ রান্না করে খাওয়াতে ভালবাসত। আমার মায়ের সঙ্গে তার খুড়তুতো, পিসতুতো ভাইবোনদের এতটাই আন্তরিকতা ছিল যে কাউকেই আমার দূরের বলে মনে হয় না আজও। যদিও তখন এই রাজবাড়ির ঐশ্বর্য তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল তবু একটা আভিজাত্য ছিল মেসোমশাই এর মধ্যে। বড়নগরে যেতে আমার ভালো লাগার আর একটা কারণ ছিল আমরা গঙ্গা নদীতে নৌকা করে যেতাম। অনেকটা পথ নৌকায় যেতে আমার অপূর্ব অনুভূতি হতো। আমরা খুব সকালে সবাই মিলে রওনা হতাম। সারাদিন সেদিন অফুরান আনন্দের মুক্তি। অনেক সময় আমরা জিয়াগঞ্জ বা আজিমগঞ্জ দিয়েও গেছি। তবে যে পথেই যাই নৌকা যাত্রা থাকতই। গ্রাম্য পরিবেশে একটা বিরাট অট্টালিকা দেখে প্রথমদিন সত্যিই একটু অবাক হয়েছিলাম, তবে সেই রাজবাড়ির তখন ভগ্নদশা প্রায়। মাসির দুটি ছেলেমেয়ে, তারা আমার ছোট । মাসি -মেসোমশাই খুব আদর যত্ন করতো আমাদের। মাসির মেয়ে গোপা আমাকে খুব ভালোবাসত। ওখানে পৌঁছে কিছু জলখাবার খেলেই চলে যেতাম বাড়ি সংলগ্ন মস্ত বাগানে। সেখানে আমি প্রথম জোড়বাংলা মন্দিরে টেরাকোটার অপূর্ব চিত্র শৈলী দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। এই জোড়বাংলা মন্দিরটি গঙ্গেশ্বর শিবের। প্রথমবার মেসোমশাই ঘুরে ঘুরে সব দেখিয়েছিল। আমার এখনও মনে আছে টেরাকোটার কাজে ঐ মন্দিরগাত্রে রামায়ণের কাহিনি, কৃষ্ণলীলার দৃশ্য, সমকালীন সমাজ চিত্র কী নিপুণ দক্ষতায় অপূর্ব নির্মাণ করা হয়েছিল। আমি ঐ সুন্দর পরিবেশের জন্য বড়নগরে মাসির বাড়ি যেতে খুব ভালোবাসতাম।
বড়োনগরের কথা আগে শুনিনি। তবু স্মৃতিচারণায় এই গ্রামের কথা জেনে ভালো লাগল।
উত্তরমুছুন