সৌমিত্র রায় -এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
৮১.
বিভাবসু , এই নামটির মধ্যে ' বসু ' কোনো পদবি নয়। এটি একটি সমাসবদ্ধ পদ।
বিভা বসু যাহার = বিভাবসু ।
আর এই বসু কি অষ্টবসুর একজন ।
আমরা এই নামটির মধ্যে এখন নাম প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল : বিভাবসু-র অরিজিন্যাল নাম : উৎপলকুমার মণ্ডল। বিভাবসু নামটি পেননেম। বা লেখার নাম।
আরো একটি ব্যক্তিগত কথা জানিয়ে রাখি , আমি দুবার ওর দেশের বাড়িতে গেছি। গ্রামের নাম : কারোলা। এটা আবার ঠাকুরনগর -এর কাছাকাছি। কাজেই বিনয় মজুমদার-এর প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা অপরিসীম। তবে আমি যে দুবার কারোলা গেছি , দুবারই বিনয়দার সান্নিধ্য পেয়েছি। প্রথমবার সম্ভবত শিপ্রাদের বাড়িতে খেতে গিয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার
' মাতৃভাষা '- র পঞ্চম বর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে। বিনয়দাকে কখনোই একবারের জন্যও মানসিক রোগী মনে হয়নি। আমার মতোই সুস্থ।
আরো একটা কথা বিভাবসুকে আমার ডেরায় নিয়ে এসেছিল তীর্থঙ্কর মৈত্র।
আরো অনেক খুচরো গল্প বাকি থেকে গেল। সেসব ক্রমশ প্রকাশ্য। এবার বিভা-র কবিতায় যাওয়া যাক। কবিতাপাক্ষিক ৭৮ - এ বিভাবসু -র পাঁচটি কবিতা । প্রথমেই পাঁচটি। কী কারণে একত্রে পাঁচটি ছাপা হয়েছিল সেজন্য কবিতাগুলি আরো একবার পড়তে চাইছি ।
১ ॥ হরিণের মাংসের একটা তারতম্যগত অনুধ্যান আছে।
২ ॥ মৌমাছিরা ছত্রিশ বছর ধরে ভুলে আছে প্রজনন- কলা ---
৩ ॥ হারমোনিয়ামের ভাঙা রিডে জেগে উঠল একটা নির্ঘুম কাকের বাসা
৪ ॥ ফ্রিজের মধ্যে জমে ওঠে ঘুম , আর ঘুমের মধ্যে জমে ওঠে কুয়াশা
৫ ॥ কোনো এক পরলোকগত ডাস্টবিন , চোদ্দশ তিন সাল , /সতেরই আষাঢ় , মঙ্গলবার , বেলা তিনটেয় /্য দিয়ে সূর্যকে বোঝাই। এখন নাম প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল : বিভাবসু-র অরিজিন্যাল নাম : উৎপলকুমার মণ্ডল। বিভাবসু নামটি পেননেম। বা লেখার নাম।
আরো একটি ব্যক্তিগত কথা জানিয়ে রাখি , আমি দুবার ওর দেশের বাড়িতে গেছি। গ্রামের নাম : কারোলা। এটা আবার ঠাকুরনগর -এর কাছাকাছি। কাজেই বিনয় মজুমদার-এর প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা অপরিসীম। তবে আমি যে দুবার কারোলা গেছি , দুবারই বিনয়দার সান্নিধ্য পেয়েছি।
আমি যেটুকু সেটুকুই দেখুন। কোনো উদ্ধৃতিচিহ্ন ছাড়াই পড়ুন :
বিকেল শুয়ে আছে আনত এক টিলার উপর শিশুপাঠ্য মেঘের মতো
এক হলুদ ভূষণ্ডীর কাক ব্যর্থ দার্শনিকের মতো আকড়েছিল ওয়াচ- টাওয়ারের শীর্ষদণ্ড
ভীষণ ভীষণতম শীত এসে বসেছিল কাঠের চেয়ার পেতে
' এ হচ্ছে সেলিব্রিটি সার্কাস --- আর তুমি হলে/ পুলস্তু নক্ষত্রের মতো প্রশ্নবোধকের মধ্যে অন্যতম ক্লাউন
সমুদ্রের মধ্যে আনত ঢেউ খুলে বসেছিল নিষিদ্ধ গমগম
এইসব অপঠিত শব্দরাশিই আমাকে আকৃষ্ট করেছিল প্রাথমিকভাবে।
দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আমাদের। বিভাবসু-র উচ্চারণ - ভিত্তিক বানানরীতি আমার না - পছন্দ। তবু কবিতা পাক্ষিকের পৃষ্ঠায় বিভা-র উচ্চারণ ভিত্তিক বানান ছাপা হয়েছে।
এবছর বিভাবসু-র নির্বাচিত কবিতা প্রকাশিত হয়েছে কপা থেকে । এই নির্বাচিত কবিতায় স্থান পেয়েছে :
লম্পটনামা ॥ রিপুপুরাণ ॥ বিবাহবহির্ভূত
এই তিনটি কবিতার বই।
নামগুলি দেখে বা পড়ে মনে হবে : সবটাই লম্পটকথা। তা তো নয়। তাহলে নামকরণে এই অহেতুক যৌন-প্ররোচনা কী কারণে !
যেমন ধরুন লম্পটনামা-র শুরুটা দেখুন :
কোনো এক মৃত্যুমু গ্ধতার অবকাশে তুমিই বলেছিলে , আম হাতের ভেতর লুকিয়ে আছে লাম্পট্যের বীজ।
আমি কোনো লাম্পট্য খুঁজে পাইনি।
অনুসন্ধান জারি থাকুক।
এরপর 'রিপুপুরাণ ' -এর কথা। বিভাবসু প্রতিটি রিপুকে আলাদা করে চেনার চেষ্টা করেছে। চেনাবার চেষ্টা করেছে।
কবিতাটি শেষ হয়েছে :
' আমার পাপকথা '
দিয়ে। আমি তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখেছি কোথাও পাপকথা -র সন্ধান পাইনি।
যাঁরা নামকরণের সার্থকতা খোঁজার জন্য কবিতা পড়েন , আমি সেই দলভূক্ত নই। আমি অন্যের কবিতায় নিজেকে খুঁজি। নিজে সমৃদ্ধ হতে চাই বলেই কবিতা পড়ি।
প্রভাত চৌধুরী
৮১.
বিভাবসু , এই নামটির মধ্যে ' বসু ' কোনো পদবি নয়। এটি একটি সমাসবদ্ধ পদ।
বিভা বসু যাহার = বিভাবসু ।
আর এই বসু কি অষ্টবসুর একজন ।
আমরা এই নামটির মধ্যে এখন নাম প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল : বিভাবসু-র অরিজিন্যাল নাম : উৎপলকুমার মণ্ডল। বিভাবসু নামটি পেননেম। বা লেখার নাম।
আরো একটি ব্যক্তিগত কথা জানিয়ে রাখি , আমি দুবার ওর দেশের বাড়িতে গেছি। গ্রামের নাম : কারোলা। এটা আবার ঠাকুরনগর -এর কাছাকাছি। কাজেই বিনয় মজুমদার-এর প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা অপরিসীম। তবে আমি যে দুবার কারোলা গেছি , দুবারই বিনয়দার সান্নিধ্য পেয়েছি। প্রথমবার সম্ভবত শিপ্রাদের বাড়িতে খেতে গিয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার
' মাতৃভাষা '- র পঞ্চম বর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে। বিনয়দাকে কখনোই একবারের জন্যও মানসিক রোগী মনে হয়নি। আমার মতোই সুস্থ।
আরো একটা কথা বিভাবসুকে আমার ডেরায় নিয়ে এসেছিল তীর্থঙ্কর মৈত্র।
আরো অনেক খুচরো গল্প বাকি থেকে গেল। সেসব ক্রমশ প্রকাশ্য। এবার বিভা-র কবিতায় যাওয়া যাক। কবিতাপাক্ষিক ৭৮ - এ বিভাবসু -র পাঁচটি কবিতা । প্রথমেই পাঁচটি। কী কারণে একত্রে পাঁচটি ছাপা হয়েছিল সেজন্য কবিতাগুলি আরো একবার পড়তে চাইছি ।
১ ॥ হরিণের মাংসের একটা তারতম্যগত অনুধ্যান আছে।
২ ॥ মৌমাছিরা ছত্রিশ বছর ধরে ভুলে আছে প্রজনন- কলা ---
৩ ॥ হারমোনিয়ামের ভাঙা রিডে জেগে উঠল একটা নির্ঘুম কাকের বাসা
৪ ॥ ফ্রিজের মধ্যে জমে ওঠে ঘুম , আর ঘুমের মধ্যে জমে ওঠে কুয়াশা
৫ ॥ কোনো এক পরলোকগত ডাস্টবিন , চোদ্দশ তিন সাল , /সতেরই আষাঢ় , মঙ্গলবার , বেলা তিনটেয় /্য দিয়ে সূর্যকে বোঝাই। এখন নাম প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল : বিভাবসু-র অরিজিন্যাল নাম : উৎপলকুমার মণ্ডল। বিভাবসু নামটি পেননেম। বা লেখার নাম।
আরো একটি ব্যক্তিগত কথা জানিয়ে রাখি , আমি দুবার ওর দেশের বাড়িতে গেছি। গ্রামের নাম : কারোলা। এটা আবার ঠাকুরনগর -এর কাছাকাছি। কাজেই বিনয় মজুমদার-এর প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা অপরিসীম। তবে আমি যে দুবার কারোলা গেছি , দুবারই বিনয়দার সান্নিধ্য পেয়েছি।
আমি যেটুকু সেটুকুই দেখুন। কোনো উদ্ধৃতিচিহ্ন ছাড়াই পড়ুন :
বিকেল শুয়ে আছে আনত এক টিলার উপর শিশুপাঠ্য মেঘের মতো
এক হলুদ ভূষণ্ডীর কাক ব্যর্থ দার্শনিকের মতো আকড়েছিল ওয়াচ- টাওয়ারের শীর্ষদণ্ড
ভীষণ ভীষণতম শীত এসে বসেছিল কাঠের চেয়ার পেতে
' এ হচ্ছে সেলিব্রিটি সার্কাস --- আর তুমি হলে/ পুলস্তু নক্ষত্রের মতো প্রশ্নবোধকের মধ্যে অন্যতম ক্লাউন
সমুদ্রের মধ্যে আনত ঢেউ খুলে বসেছিল নিষিদ্ধ গমগম
এইসব অপঠিত শব্দরাশিই আমাকে আকৃষ্ট করেছিল প্রাথমিকভাবে।
দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আমাদের। বিভাবসু-র উচ্চারণ - ভিত্তিক বানানরীতি আমার না - পছন্দ। তবু কবিতা পাক্ষিকের পৃষ্ঠায় বিভা-র উচ্চারণ ভিত্তিক বানান ছাপা হয়েছে।
এবছর বিভাবসু-র নির্বাচিত কবিতা প্রকাশিত হয়েছে কপা থেকে । এই নির্বাচিত কবিতায় স্থান পেয়েছে :
লম্পটনামা ॥ রিপুপুরাণ ॥ বিবাহবহির্ভূত
এই তিনটি কবিতার বই।
নামগুলি দেখে বা পড়ে মনে হবে : সবটাই লম্পটকথা। তা তো নয়। তাহলে নামকরণে এই অহেতুক যৌন-প্ররোচনা কী কারণে !
যেমন ধরুন লম্পটনামা-র শুরুটা দেখুন :
কোনো এক মৃত্যুমু গ্ধতার অবকাশে তুমিই বলেছিলে , আম হাতের ভেতর লুকিয়ে আছে লাম্পট্যের বীজ।
আমি কোনো লাম্পট্য খুঁজে পাইনি।
অনুসন্ধান জারি থাকুক।
এরপর 'রিপুপুরাণ ' -এর কথা। বিভাবসু প্রতিটি রিপুকে আলাদা করে চেনার চেষ্টা করেছে। চেনাবার চেষ্টা করেছে।
কবিতাটি শেষ হয়েছে :
' আমার পাপকথা '
দিয়ে। আমি তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখেছি কোথাও পাপকথা -র সন্ধান পাইনি।
যাঁরা নামকরণের সার্থকতা খোঁজার জন্য কবিতা পড়েন , আমি সেই দলভূক্ত নই। আমি অন্যের কবিতায় নিজেকে খুঁজি। নিজে সমৃদ্ধ হতে চাই বলেই কবিতা পড়ি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন