নস্টালজিয়া ৭
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
সেই কত আগে ছোটবেলায় মনের আনন্দে ছন্দের দোলায় পড়তাম "ঋণ জর্জর জীর্ণ জীবনে শরতের উঁকিঝুঁকি /পারে না করতে সুখি/ শ্রাবণের কালো এখনি আলোয় গলবে/ বৃষ্টি শেষের নীল বন্যায় জ্বলবে/ ছিন্ন মেঘের ছন্নছাড়ার দল...'' খুব ভালো লাগত পড়তে, কিন্তু সেই সময় কিছুতেই বুঝতে পারতাম না এমন উজ্জ্বল দিনে কবি কেন সুখি নন! আজ তা অনুভব করতে পারি। ভাদ্রের সোনারোদে ঝলমল করতো সকাল, দিন গুনতাম পুজোর । আমাদের বাড়ির কাছেই ছিল কালীবাড়ি, সেখানেই দুর্গাপুজোও হতো খুব ধুমধাম করে। এখনকার মতো তখন বারোমাস জামা কাপড় কেনা হতো না আমাদের। দুর্গাপুজোর সময় নতুন জামা জুতো, তার সাথে বিছানার চাদর, ঘরের পর্দার ছিট ইত্যাদিও কেনা হতো। মা সুন্দর ছিটকাপড় কিনে নিজে হাতে সেলাই করে পর্দা তৈরি করত।পুজোর আগে কোনো একটা রবিবারে বাবার সঙ্গে আমরা সবাই যেতাম পুজোর কেনাকাটা করতে। সেদিনটা থাকত উৎসাহে ভরা । লালবাগে তখন খুব বেশি দোকান ছিল না, আর সেখানকার জামা কাপড় আমাদের মনোমত হতো না। খাগড়ায় নির্দিষ্ট কিছু দোকান থেকে পছন্দসই বাজার করে আমরা ভাই বোন অপেক্ষা করতাম বাবা কখন খাওয়ার কথা বলবে!মিষ্টির দোকানের সামনে আমাদের গতি বেশ ধীর হয়ে যেত, ভাই এর পা ব্যথা করতো। বাবা আমাদের মনোভাব বুঝতে পারত। পুজোয় বাজার করতে যাওয়ার অন্যতম আকর্ষণই ছিল এইদিন বাইরে খাওয়া। এখনকার মতো ফার্স্ট ফুড রেস্টুরেন্টের চল তখন ছিল না, ছিল অসংখ্য ভাল ভাল মিষ্টির দোকান। সেখানে আমরা ইচ্ছে মতো কচুরি, সিঙাড়া, ছানাবড়া, চমচম , রাজভোগ ইত্যাদি পেটপুরে খেয়ে বহরমপুর থেকে ট্রেনে চড়ে বাড়ি ফিরতাম। মনে আছে এই মুক্তির আকাশটুকু পেয়ে সেদিন মা ও বেশ খুশি হতো।
পুজোর আগে প্রতিদিন একবার করে মন্দিরে প্রতিমা তৈরি দেখতে যেতাম। কাপড়ের টুকরো, জরির টুকরো, চুমকি সংগ্রহ করে পরম যত্নে পুতুলের বাক্সে রেখে দিতাম। যেদিন প্রতিমার চোখ আঁকা হতো সেদিন আমার একটা আলাদা অনুভব হোতো। মহালয়ার পর থেকেই উৎসাহের পারদ চড়তো আমাদের, অনেকেই জুটে যেত তখন খেলার সাথি। মাও পুজোর আগে সংসারের অনেক কাজে ব্যস্ত থাকায় শাসনে শিথিলতা থাকতো আর সেই সুযোগে আমি রোদে এতো ছুটোছুটি আর খেলাধুলো করতাম যে ঠিক সপ্তমী পুজোর দিন জ্বরে পড়তাম। সব আনন্দ মাটি করে ম্লান মুখে রোগশয্যায় সেবার আমার পুজো কাটতো।
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
সেই কত আগে ছোটবেলায় মনের আনন্দে ছন্দের দোলায় পড়তাম "ঋণ জর্জর জীর্ণ জীবনে শরতের উঁকিঝুঁকি /পারে না করতে সুখি/ শ্রাবণের কালো এখনি আলোয় গলবে/ বৃষ্টি শেষের নীল বন্যায় জ্বলবে/ ছিন্ন মেঘের ছন্নছাড়ার দল...'' খুব ভালো লাগত পড়তে, কিন্তু সেই সময় কিছুতেই বুঝতে পারতাম না এমন উজ্জ্বল দিনে কবি কেন সুখি নন! আজ তা অনুভব করতে পারি। ভাদ্রের সোনারোদে ঝলমল করতো সকাল, দিন গুনতাম পুজোর । আমাদের বাড়ির কাছেই ছিল কালীবাড়ি, সেখানেই দুর্গাপুজোও হতো খুব ধুমধাম করে। এখনকার মতো তখন বারোমাস জামা কাপড় কেনা হতো না আমাদের। দুর্গাপুজোর সময় নতুন জামা জুতো, তার সাথে বিছানার চাদর, ঘরের পর্দার ছিট ইত্যাদিও কেনা হতো। মা সুন্দর ছিটকাপড় কিনে নিজে হাতে সেলাই করে পর্দা তৈরি করত।পুজোর আগে কোনো একটা রবিবারে বাবার সঙ্গে আমরা সবাই যেতাম পুজোর কেনাকাটা করতে। সেদিনটা থাকত উৎসাহে ভরা । লালবাগে তখন খুব বেশি দোকান ছিল না, আর সেখানকার জামা কাপড় আমাদের মনোমত হতো না। খাগড়ায় নির্দিষ্ট কিছু দোকান থেকে পছন্দসই বাজার করে আমরা ভাই বোন অপেক্ষা করতাম বাবা কখন খাওয়ার কথা বলবে!মিষ্টির দোকানের সামনে আমাদের গতি বেশ ধীর হয়ে যেত, ভাই এর পা ব্যথা করতো। বাবা আমাদের মনোভাব বুঝতে পারত। পুজোয় বাজার করতে যাওয়ার অন্যতম আকর্ষণই ছিল এইদিন বাইরে খাওয়া। এখনকার মতো ফার্স্ট ফুড রেস্টুরেন্টের চল তখন ছিল না, ছিল অসংখ্য ভাল ভাল মিষ্টির দোকান। সেখানে আমরা ইচ্ছে মতো কচুরি, সিঙাড়া, ছানাবড়া, চমচম , রাজভোগ ইত্যাদি পেটপুরে খেয়ে বহরমপুর থেকে ট্রেনে চড়ে বাড়ি ফিরতাম। মনে আছে এই মুক্তির আকাশটুকু পেয়ে সেদিন মা ও বেশ খুশি হতো।
পুজোর আগে প্রতিদিন একবার করে মন্দিরে প্রতিমা তৈরি দেখতে যেতাম। কাপড়ের টুকরো, জরির টুকরো, চুমকি সংগ্রহ করে পরম যত্নে পুতুলের বাক্সে রেখে দিতাম। যেদিন প্রতিমার চোখ আঁকা হতো সেদিন আমার একটা আলাদা অনুভব হোতো। মহালয়ার পর থেকেই উৎসাহের পারদ চড়তো আমাদের, অনেকেই জুটে যেত তখন খেলার সাথি। মাও পুজোর আগে সংসারের অনেক কাজে ব্যস্ত থাকায় শাসনে শিথিলতা থাকতো আর সেই সুযোগে আমি রোদে এতো ছুটোছুটি আর খেলাধুলো করতাম যে ঠিক সপ্তমী পুজোর দিন জ্বরে পড়তাম। সব আনন্দ মাটি করে ম্লান মুখে রোগশয্যায় সেবার আমার পুজো কাটতো।
যত পড়ছি, মুগ্ধ হচ্ছি।
উত্তরমুছুন