নস্টালজিয়া ৩ || পৃৃথা চট্টোপাধ্যায়
আজ লিখতে বসে অনুভব করছি আমার জীবনের শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলোতে শীতকালের আনন্দ ও ব্যাপ্তি কতখানি ছিল । এই শীতের কথা নিয়েই পাতার পর পাতা অনায়াসে লিখে ফেলতে পারি । শীত পড়লেই পিকনিক আর বনভোজনের হিড়িক লাগত আমাদের মনে । শীতকালের কুল আমার একটি প্রিয় ফল ছিল । তখন আমাদের কাছে কোনো টাকা পয়সা থাকত না।আত্মীয় স্বজন বেড়াতে এলে যদি দশ বিশ টাকা দিয়ে যেত সেটাই জমিয়ে রাখতাম। তার থেকে কুড়ি ,পঁচিশ বা পঞ্চাশ পয়সা নিয়ে জুম্মানের বাগানের কুল কিনে খেতাম বন্ধুদের সাথে । সরস্বতী পুজোর আগে অবশ্য কখনোই কুল খেতাম না। আমাদের ছোটবেলা এখনকার বাচ্চাদের মতো গৃহবন্দি নির্বান্ধব ছিল না। পাড়ায় অনেক বন্ধু ছিল । আমরা প্রায় সমবয়সী বা একটু বড় ছোট ছেলে মেয়ে সবাই মিলে খুব খেলাধূলা করতাম। প্রতিদিন বিকেলে নিয়ম করে খেলতাম নানাধরনের খেলা। মা খুব রাগী ছিল বলে মন দিয়ে পড়াশোনা করতেই হতো না হলে খেলার অনুমতি মিলত না। শীতে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে বনভোজনের আনন্দই ছিল আলাদা। সবাই বাড়ি থেকে চাল,ডাল, আলু,তেল ,নুন, লঙ্কা, তেজপাতা আর ডিম সংগ্রহ করে একসাথে কাছাকাছি তেওয়ারিদের,সুলতানের অথবা মসজিদের পিছনে ফাক্কু নবাবের বাগানে বনভোজন করা হতো। হরেক রকমের চাল ডালের মিশ্রণে সেই খিচুড়ির স্বাদ অমৃত লাগত আর আমাদের অপটু হাতের ডিমের কারির স্বাদের তুলনা মেলা ছিল ভার। পুরো ডিসেম্বর-জানুয়ারি ধরে আমরা যে কতবার বনভোজন করতাম তার হিসাব থাকতো না। আমাদের মায়েরাও সেই সময় এতে বাধা দিত না, বরং উৎসাহ দিত আর মাঝে মাঝেই বড়রা দেখে আসত রান্নার সময় আমাদের যেন আগুনে কোনো বিপত্তি না ঘটে। এখনকার ছোটদের জীবনযাপন দেখে ,ওদের শৈশবের অনেক আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে দেখে খুব কষ্ট হয়। শীতকালে ছুটির দিনে বাবার সঙ্গে বাজারে যেতাম। সবজির বাজারে যেতে আমার খুব ভালো লাগত। টাটকা পালং-পিড়িং-মটর-ছোলার শাক, ফুলকপি,বেগুন,বাঁধাকপি,কড়াইশুঁটি,বিট,গাজর,
টমেটো ইত্যাদি শাক সবজির রঙিন সমাহার আমার মন ভরিয়ে দিত। মাছের বাজারে জ্যান্ত ছোট মাছ ট্যাংরা, শোল, মৌরলা, কই,খয়রা,রায়খয়রা, পুঁটি, দেশি রুই, কাতলা, চিংড়ি এসব দেখেশুনে কিনত। বাবা খুব ভালো রান্না করতে পারত আর ভোজন রসিক ছিল বলে বেশ গুছিয়ে বাজার করতো। আমার এখনো বাজার করতে ভালো লাগে তবে এখন বারোমাস সবকিছু পাওয়া যায় বলে শীতের বাজারের আর আলাদা কোনো আকর্ষণ নেই আমার কাছে ।রবিবার খাসির মাংস ছিল বাঁধা, হবেই।ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে মুরগির মাংস হতো না,বাবা মোটেই পছন্দ করতো না বলেই হয়তো । খুব মশলাদার ঝাল রান্না হত আমাদের বাড়িতে । এদেশের মানুষ হলেও আমাদের বাড়ির রান্না একটু ভিন্ন নবাবি ধরনের ছিল ।পোলাও, বিরিয়ানি, চিংড়ির মালাইকারি আমার ঠাকুমা, বাবা, কাকা সবাই অসাধারণ রান্না করত। বাবা মারা যাওয়ার পর মা সেভাবে আর রান্না করতে পারত না । সবকিছু বাবার মতে হতো বলে মা প্রায়ই ভুলে যেত রান্নার উপাদানগুলো । তবে মা ঘিভাত খুব ভালো রান্না করতো। আমাদের ওখানে তখন গোবিন্দভোগ নয় , কামিনীভোগ চালের চল বেশি ছিল । মা পুষ্পান্ন বলতো ঘিভাতকে আর গোপাল ঠাকুরকে প্রায়ই এই পুষ্পান্ন ,পায়েসের ভোগ দিত তাতে আমাদেরও ভালই পেটপুজো হতো।
আজ লিখতে বসে অনুভব করছি আমার জীবনের শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলোতে শীতকালের আনন্দ ও ব্যাপ্তি কতখানি ছিল । এই শীতের কথা নিয়েই পাতার পর পাতা অনায়াসে লিখে ফেলতে পারি । শীত পড়লেই পিকনিক আর বনভোজনের হিড়িক লাগত আমাদের মনে । শীতকালের কুল আমার একটি প্রিয় ফল ছিল । তখন আমাদের কাছে কোনো টাকা পয়সা থাকত না।আত্মীয় স্বজন বেড়াতে এলে যদি দশ বিশ টাকা দিয়ে যেত সেটাই জমিয়ে রাখতাম। তার থেকে কুড়ি ,পঁচিশ বা পঞ্চাশ পয়সা নিয়ে জুম্মানের বাগানের কুল কিনে খেতাম বন্ধুদের সাথে । সরস্বতী পুজোর আগে অবশ্য কখনোই কুল খেতাম না। আমাদের ছোটবেলা এখনকার বাচ্চাদের মতো গৃহবন্দি নির্বান্ধব ছিল না। পাড়ায় অনেক বন্ধু ছিল । আমরা প্রায় সমবয়সী বা একটু বড় ছোট ছেলে মেয়ে সবাই মিলে খুব খেলাধূলা করতাম। প্রতিদিন বিকেলে নিয়ম করে খেলতাম নানাধরনের খেলা। মা খুব রাগী ছিল বলে মন দিয়ে পড়াশোনা করতেই হতো না হলে খেলার অনুমতি মিলত না। শীতে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে বনভোজনের আনন্দই ছিল আলাদা। সবাই বাড়ি থেকে চাল,ডাল, আলু,তেল ,নুন, লঙ্কা, তেজপাতা আর ডিম সংগ্রহ করে একসাথে কাছাকাছি তেওয়ারিদের,সুলতানের অথবা মসজিদের পিছনে ফাক্কু নবাবের বাগানে বনভোজন করা হতো। হরেক রকমের চাল ডালের মিশ্রণে সেই খিচুড়ির স্বাদ অমৃত লাগত আর আমাদের অপটু হাতের ডিমের কারির স্বাদের তুলনা মেলা ছিল ভার। পুরো ডিসেম্বর-জানুয়ারি ধরে আমরা যে কতবার বনভোজন করতাম তার হিসাব থাকতো না। আমাদের মায়েরাও সেই সময় এতে বাধা দিত না, বরং উৎসাহ দিত আর মাঝে মাঝেই বড়রা দেখে আসত রান্নার সময় আমাদের যেন আগুনে কোনো বিপত্তি না ঘটে। এখনকার ছোটদের জীবনযাপন দেখে ,ওদের শৈশবের অনেক আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে দেখে খুব কষ্ট হয়। শীতকালে ছুটির দিনে বাবার সঙ্গে বাজারে যেতাম। সবজির বাজারে যেতে আমার খুব ভালো লাগত। টাটকা পালং-পিড়িং-মটর-ছোলার শাক, ফুলকপি,বেগুন,বাঁধাকপি,কড়াইশুঁটি,বিট,গাজর,
টমেটো ইত্যাদি শাক সবজির রঙিন সমাহার আমার মন ভরিয়ে দিত। মাছের বাজারে জ্যান্ত ছোট মাছ ট্যাংরা, শোল, মৌরলা, কই,খয়রা,রায়খয়রা, পুঁটি, দেশি রুই, কাতলা, চিংড়ি এসব দেখেশুনে কিনত। বাবা খুব ভালো রান্না করতে পারত আর ভোজন রসিক ছিল বলে বেশ গুছিয়ে বাজার করতো। আমার এখনো বাজার করতে ভালো লাগে তবে এখন বারোমাস সবকিছু পাওয়া যায় বলে শীতের বাজারের আর আলাদা কোনো আকর্ষণ নেই আমার কাছে ।রবিবার খাসির মাংস ছিল বাঁধা, হবেই।ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে মুরগির মাংস হতো না,বাবা মোটেই পছন্দ করতো না বলেই হয়তো । খুব মশলাদার ঝাল রান্না হত আমাদের বাড়িতে । এদেশের মানুষ হলেও আমাদের বাড়ির রান্না একটু ভিন্ন নবাবি ধরনের ছিল ।পোলাও, বিরিয়ানি, চিংড়ির মালাইকারি আমার ঠাকুমা, বাবা, কাকা সবাই অসাধারণ রান্না করত। বাবা মারা যাওয়ার পর মা সেভাবে আর রান্না করতে পারত না । সবকিছু বাবার মতে হতো বলে মা প্রায়ই ভুলে যেত রান্নার উপাদানগুলো । তবে মা ঘিভাত খুব ভালো রান্না করতো। আমাদের ওখানে তখন গোবিন্দভোগ নয় , কামিনীভোগ চালের চল বেশি ছিল । মা পুষ্পান্ন বলতো ঘিভাতকে আর গোপাল ঠাকুরকে প্রায়ই এই পুষ্পান্ন ,পায়েসের ভোগ দিত তাতে আমাদেরও ভালই পেটপুজো হতো।
অনেকবার শীতকালে আমরাও পিকনিক করে এসেছি লালবাগে ভাগীরথীর তীরে।
উত্তরমুছুন